ফুটবলের সঙ্গে যুক্ত থাকলেও সব সময় ছিলেন আলোচনার বাইরে। যশোরে শামসুল হুদা একাডেমি নামে ফুটবলার তৈরির কারখানা গড়ে তুলেছেন নাসের শাহরিয়ার জাহেদি। যেখানে বিনা খরচে ফুটবলের সঙ্গে পড়াশোনাও শিখছেন শিক্ষার্থীরা। ২৬ অক্টোবর অনুষ্ঠিত বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন নির্বাচনে রেকর্ড ভোট পেয়ে ১ নম্বর সহসভাপতি নির্বাচিত হয়েছেন জাহেদি। পেয়েছেন ডেভেলপমেন্ট কমিটির দায়িত্ব। দেশের ফুটবলের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ এই কমিটির চেয়ারম্যান পদে বসার পরই বয়সভিত্তিক ফুটবল নিয়ে নানা পরিকল্পনা নিয়েছেন তিনি। কমলাপুর বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ সিপাহি মোস্তফা কামাল স্টেডিয়ামে এলিট একাডেমির ফুটবলারদের ক্যাম্প। সেখানে থেকে অনূর্ধ্ব-১৫, অনূর্ধ্ব-১৭সহ বয়সভিত্তিক ফুটবলাররা ট্রেনিং করার সঙ্গে ঘরোয়া এবং আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় খেলে আসছে। কিন্তু কমলাপুরে আবাসন এবং খাবারের মান নিয়ে ওঠা প্রশ্ন গেছে নাসের শাহরিয়ার জাহেদির কানে। তাই কমলাপুর থেকে সরিয়ে বাফুফের এলিট একাডেমির ফুটবলারদের যশোরে নিজ একাডেমিতে রাখতে চান বলে সমকালকে জানান বাফুফের এই সহসভাপতি।
তিনি বলেন, ‘ঢাকায় তো মাঠ এবং থাকার জায়গার কিছুটা সমস্যা আছে। আর যশোরের ফুটবল একাডেমিতে ২৪০ শিক্ষার্থী থাকতে পারে। ফেডারেশন থেকে আমরা বলেছি, সেখানে আমাদের অন্তত ১২০ শিক্ষার্থী যেন রাখতে পারি। তাহলে হয় কী, ওদের থাকা এবং ট্রেনিং– এগুলো আরও সুবিধাজনক হয়। এটা বিবেচনায় আছে। আগামী ফেব্রুয়ারিতে যশোরে আমাদের নির্বাহী কমিটির মিটিং হবে। ডেভেলপমেন্ট কমিটির যারা সদস্য আছেন, সবাই সেখানে গিয়ে পুরোটা পর্যবেক্ষণ করবেন। সেখানেই চূড়ান্ত হতে পারে। কমলাপুর ওদের থাকা এবং সার্বিক অবস্থানের বিষয়ে আমার কাছে অনেকেই কথা বলেছেন। এ জন্য আমরা চিন্তা করছি, এটাকে যদি আমরা যশোর একাডেমিতে শিফট করতে পারি, তাহলে ট্রেনিংটাও ভালো হয়।’
২০২১ সালে স্বপ্নের একাডেমি চালু করে বাফুফে। বয়সভিত্তিক সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে অংশ নিয়ে আসছিল তারা। একাডেমির জন্য বিদেশি ট্রেনারও নিয়োগ দিয়েছিল ফেডারেশন। মেয়েদের সাফ জেতানো কোচ পিটার বাটলারকে দেওয়া হয় দায়িত্ব। আনুষ্ঠানিকভাবে কাজ শুরুর আগেই কোচও চূড়ান্ত করতে চান জাহেদি। তবে বিদেশিতে না ঝুঁকে ভালো মানের দেশি কোচ নিয়োগ দেওয়ার চিন্তা বাফুফের অন্যতম সহসভাপতির, ‘আমি আপাতত বিদেশি কোচ ভাবছি না। বাংলাদেশের কোচদের মধ্যে যারা ভালো আছেন এবং যাদের কাজের প্রতি একাগ্রতা আছে, অতীতে কোনো টিম এবং এরিয়াকে ডেভেলপের কাজে লাগিয়েছেন, এ রকম কাউকে প্রধান কোচ করব। এর সঙ্গে সহকারী কোচ তো থাকবেনই। আমি দেশের কোচদের নিয়ে কাজ করতে অনেক বেশি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করি। আমি মনে করি, সুযোগ পেলে তারা আমাদের টিমগুলোকে ডেভেলপ করবেন।’
এলিট একাডেমির খরচটা আসত ফেডারেশনের ফান্ড থেকে। যশোর একাডেমিতে ফুটবলারদের পেছনে ব্যয়ের উৎস কী? ‘বাফুফের যে বাজেট আছে, সেটার ভেতরেই আমরা করার চেষ্টা করব।’ বাজেট তো সীমিত। ফুটবলারের অনেক প্রয়োজন মেটাতে পারেনি তারা। এই বিষয়ে জাহেদির উত্তর, ‘বাজেট তো বাফুফের একটা আছে। আমরা দেখব সেটা কেমন। এর পর যদি টুকটাক লাগে, তারা সেখানে যাবে, সে তো আমরা দেখতেই পারি।’
বাফুফে এলিট একাডেমি বাইরে নারী ফুটবলারদের যশোরের একাডেমিতে নেওয়ার আলোচনা চলছে। ইতোমধ্যে নারী ফুটবল কমিটির চেয়ারম্যান মাহফুজা আক্তার কিরণ বাফুফের এই সহসভাপতির সঙ্গে আলোচনা করেছেন। বয়সভিত্তিক নারী ফুটবলারদের সেখানে রাখার প্রস্তাব দিয়েছেন কিরণ। সেই প্রস্তাবে সম্মতি দিয়েছেন জাহেদি। যেহেতু শামসুল হুদা একাডেমিতে শুধু ছেলেদের ট্রেনিং করানো হয়, সেহেতু মেয়েদের জন্য আলাদা ভবন নির্মাণ করতে হবে। ভবন, ট্রেনিং, মাঠসহ আরও বেশ কিছু বিষয় সম্পন্ন করতে বছর দুয়েক লাগবে বলে জানান জাহেদি।
রেডিওটুডে নিউজ/আনাম