ফেসবুকে মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-কে নিয়ে কটূক্তির অভিযোগে উত্তাল বাংলাদেশ টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুটেক্স) জি.এম.এ.জি. ওসমানী হল ও সৈয়দ নজরুল ইসলাম হল। অভিযুক্ত শিক্ষার্থী ডাইস অ্যান্ড কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ৫০তম ব্যাচের শিক্ষার্থী মুয়াজ মুহাম্মদ আরেফিন তালুকদার। সে সৈয়দ নজরুল ইসলাম হলের আবাসিক শিক্ষার্থী।
ঘটনার সূত্রপাত রবিবার (২ ফেব্রুয়ারি) রাত ৮ টার দিকে, যখন জান্নাত নাইমের বাল্যবিবাহ সংক্রান্ত একটি ফেসবুক পোস্টে মুয়াজ মহানবী (সা.)-কে নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্য করেন। তার এই মন্তব্য দ্রুত সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে দুই হলে উত্তেজনার সৃষ্টি হয় এবং তাৎক্ষণিকভাবে শিক্ষার্থীরা অভিযুক্ত মুয়াজকে আটক করে।
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও হল প্রশাসন ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন। পরে শিক্ষকরা তাকে প্রভোস্টের কক্ষে নিয়ে যান এবং তাৎক্ষণিক তাকে হল থেকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয় তবুও পরিস্থিতির অবনতি হলে ঘটনাস্থলে পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করে। পরে রাত দেড়টার সময় পুলিশ তাকে থানায় নিয়ে যায়। যাওয়ার পথে উত্তেজিত শিক্ষার্থীরা তাকে গণপিটুনি দেয়।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত মুয়াজ বলেন, আমার শারীরিক অসুস্থতার জন্য নিজেকে অনেক ছোট মনে হতো এবং ধীরে ধীরে সৃষ্টিকর্তার উপর ক্ষোভ সৃষ্টি হয়।পরবর্তীতে ইন্টারমিডিয়েটে থাকাকালীন আমার এক বন্ধুর সাথে পরিচয় হয় এবং তার হাত ধরে আমি এই পথে এসেছি।
৪৮তম ব্যাচের শিক্ষার্থী শহিদুল ঘটনার পরপর তাকে ফোন দিয়ে সেভ করার চেষ্টা করেন, শিক্ষার্থীদের এই অভিযোগের ব্যাপারে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে সে জানায়, শহীদুল ভাই আমাকে ফোন দিয়েছিলো এবং হতে পারে তিনি আমার মতো একই ধারণা পোষণ করেন। তবে আমি তার সাথে কোনো সংগঠনের মাধ্যমে যুক্ত না।
এ বিষয়ে ৪৭তম ব্যাচের শিক্ষার্থী সাইদুর রহমান রাফি বলেন, ঘটনার সূত্রপাত হয় যখন সে ফেসবুকে বাজে কটূক্তিমূলক মন্তব্য করে এবং তারপর সেটা স্ক্রিনশটের মাধ্যমে সবার কাছে ছড়িয়ে পড়ে। রাত নয়টার দিকে হলের মাঠে তাকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয় এ সময় ৪৮তম ব্যাচের এক শিক্ষার্থী তাকে কল দিয়ে ক্ষমা চাইতে বলে। আমরা ধারণা করছি এর পেছনে আরো অনেকের হাত আছে। আমরা মুয়াজের কঠোর শাস্তি কামনা করছি যাতে ভবিষ্যতে কেউ এধরণের জঘন্য কাজ করার দুঃসাহস না করে এবং যারা এর সাথে জড়িত সবার বিরূদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার জোর দাবি জানাচ্ছি।
একই ব্যাচের আরেক শিক্ষার্থী রেদওয়ানুল হক আসিফ বলেন, যার যা ভিন্নমতাদর্শ থাকতেই পারে, তাদের মতকে আমরা শ্রদ্ধা করি কিন্তু ভিন্নমত থাকা আর আরেকজনের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করা একই না। এই ধরনের ঘটনা বাংলাদেশে প্রায়ই ঘটে এবং এদের শাস্তিও হয় কিন্তু যে বা যারা এটা ঘটিয়েছে তারা জেনে বুঝেই ঘটিয়েছে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির উদ্দেশ্যে। যা বাংলাদেশের মতো মুসলিম প্রধান দেশে কোনোভাবেই কাম্য নয়। আমরা অভিযুক্ত শিক্ষার্থীসহ এর সাথে যারা যারা জড়িত আছে সবার সর্বোচ্চ শাস্তির দাবী করছি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে।
উল্লেখ্য, প্রশাসন অভিযুক্তের উপযুক্ত শাস্তি নিশ্চিত করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন এবং পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে প্রশাসন তৎপর রয়েছে।
রেডিওটুডে নিউজ/আনাম