সোমবার,

২০ জানুয়ারি ২০২৫,

৭ মাঘ ১৪৩১

সোমবার,

২০ জানুয়ারি ২০২৫,

৭ মাঘ ১৪৩১

Radio Today News

সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে ব্রিটিশ আইনজীবীর কাছে যায় হাসিনা সরকার

রেডিওটুডে রিপোর্ট

প্রকাশিত: ২২:২৮, ১৯ জানুয়ারি ২০২৫

আপডেট: ২২:২৯, ১৯ জানুয়ারি ২০২৫

Google News
সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে ব্রিটিশ আইনজীবীর কাছে যায় হাসিনা সরকার

শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর সরকারের নানা অনিয়মের ঘটনা প্রকাশে আসতে শুরু করেছে। আল-জাজিরায় ‘অল দ্য প্রাইম মিনিস্টারস মেন’ নামের আলোচিত প্রামাণ্যচিত্রটি সম্প্রচারের পর সংবাদিকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে যুক্তরাজ্যের খ্যাতনামা একজন ব্যারিস্টারের কাছে গিয়েছিল ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার। ওই ব্যারিস্টারের নাম ডেসমন্ড ব্রাউনি কে সি। কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল–জাজিরায় প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করেছিল বাংলাদেশের তৎকালীন সরকার।

সম্প্রতি গণভবন থেকে যুক্তরাজ্যভিত্তিক সংবাদমাধ্যম দ্য সানডে টাইমসের উদ্ধার করা একটি নথিতে ওই যোগাযোগের তথ্য বেরিয়ে এসেছে। গণভবনে শেখ হাসিনার শোবার ঘরে জীর্ণ দশায় ছিল নথিটি। ওই নথির তথ্য অনুযায়ী, ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে ডেসমন্ড ব্রাউনির সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলেন লন্ডনে অবস্থিত বাংলাদেশ হাইকমিশনের কর্মকর্তারা। তাঁদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে রাজিও হয়েছিলেন ব্রাউনি। এরপর তিনি হাইকমিশনের কর্মকর্তাদের একজন আইনজীবীর সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেন। পরের কয়েক মাস ধরে দুজন শেখ হাসিনা সরকারকে নানা পরামর্শ দেন।

ব্রাউনির সঙ্গে বাংলাদেশের কর্মকর্তাদের প্রথম যোগাযোগের কয়েক দিন আগে আল-জাজিরায় ‘অল দ্য প্রাইম মিনিস্টারর্স মেন’ নামের ওই প্রামাণ্যচিত্র সম্প্রচারিত হয়। তাতে বাংলাদেশের সাবেক সেনাপ্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদের ভাইকে বলতে শোনা যায়, বিরোধীদের অপহরণ করতে এবং বিপুল অঙ্কের ঘুষ নিতে তিনি পুলিশ ও আধা সামরিক বাহিনীকে ব্যবহার করতে পারেন।

আল–জাজিরার ওই প্রামাণ্যচিত্রে শেখ হাসিনা সরকারের দুর্নীতির বিভিন্ন তথ্যপ্রমাণ তুলে ধরা হয়েছিল। তবে ওই প্রামাণ্যচিত্রটি ‘মিথ্যা’ ও ‘রাজনৈতিকভাবে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত’ বলে উল্লেখ করেছিল বাংলাদেশ সরকার। প্রামাণ্যচিত্রটি সম্প্রচারের পরপরই তাতে তথ্যদাতা জুলকারনাইন সায়ের খানের ভাইকে রড দিয়ে পেটানো হয়েছিল। এ ছাড়া প্রামাণ্যচিত্রটির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট অনেকে দেশত্যাগ করেছিলেন অথবা প্রতিকূল পরিবেশের মধ্য দেশে না ফেরার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন।

গণভবনে পাওয়া নথি অনুযায়ী, ২০২১ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি লন্ডনে বাংলাদেশ হাইকমিশনের কর্মকর্তাদের সঙ্গে ভার্চ্যুয়্যাল বৈঠক করেছিলেন ব্যারিস্টার ডেসমন্ড ব্রাউনি। সেখানে তাঁর কথায় মনে হয়, ভবিষ্যতে আল–জাজিরার বিরুদ্ধে তাঁদের হয়ে (হাইকমিশনের কর্মকর্তা) মামলা লড়তে তিনি প্রস্তুত ছিলেন। কিন্তু হাইকমিশনের কর্মকর্তাদের আগে একজন আইনজীবীর সঙ্গে যোগাযোগ করা দরকার, যিনি তাঁকে (ব্যারিস্টার ব্রাউনি) পরামর্শ দেবেন। এরপর ব্রাউনির পরামর্শে লন্ডনের আইনি সহায়তা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান পেনিংটন মানচেস কুপারের বিশেষজ্ঞ জেরেমি ক্লার্ক–উইলিয়ামসের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিল শেখ হাসিনা সরকার। কিছুদিন বাদে তিনিও বাংলাদেশ সরকারের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেছিলেন।

২০২১ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যা ৬টায় অনুষ্ঠিত ওই বৈঠকে শেখ হাসিনার প্রতিনিধিরা ক্লার্ক–উইলিয়ামসকে বলেছিলেন, আল–জাজিরার ওই প্রামাণ্যচিত্রে ‘সারবত্তা তেমন কিছু না থাকলেও’ তা শেখ হাসিনার সুনাম ‘ব্যাপকভাবে ক্ষুণ্ন’ করেছে। বাংলাদেশ সরকার বা সেনাবাহিনীর মতো কোনো প্রতিষ্ঠান বা সেনাপ্রধানের মতো কোনো ব্যক্তি এই প্রামাণ্যচিত্র নিয়ে আদালতে মানহানির মামলা করবে কি না, সে বিষয়ে পরামর্শ নেওয়ার জন্য ঢাকা থেকে তাঁদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত কোনো কর্মকর্তা যিনি এই প্রামাণ্যচিত্রে নেই, তবে মনে করেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর মানহানি হয়েছে, তাঁর মতো তৃতীয় কোনো পক্ষ মানহানির মামলা করবে কি না, সে বিষয়েও পরামর্শ নিতে বলা হয়েছিল লন্ডন হাইকমিশনের কর্মকর্তাদের।

নথির তথ্য অনুযায়ী, আল–জাজিরার ওই প্রামাণ্যচিত্র নির্মাণে কাজ করা ব্রিটিশ সাংবাদিক ডেভিড বার্গম্যানকে গ্রেপ্তারের পরিকল্পনাও করেছিল শেখ হাসিনা সরকার। ক্লার্ক-উইলিয়ামসকে বাংলাদেশের কর্মকর্তারা বলেছিলেন, তাঁরা বার্গম্যানের বিরুদ্ধেও মামলা করার জন্য প্রস্তুত। ওই কর্মকর্তাদের ভাষ্য অনুযায়ী, ‘রাজনৈতিকভাবে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত’ ওই প্রামাণ্যচিত্র নির্মাণের পেছনে ছিলেন ডেভিড বার্গম্যন। তাঁকে বাংলাদেশে গ্রেপ্তার করা হবে।

বাংলাদেশ সরকার শেষ পর্যন্ত যুক্তরাজ্যের আদালতে মামলা না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। এর বিপরীতে তারা নিজেদের প্ল্যাটফর্ম থেকে আল–জাজিরার প্রামাণ্যচিত্রটি সরিয়ে নেওয়ার জন্য ফেসবুক ও ইউটিউবকে চাপ দেওয়ার প্রচেষ্টা শুরু করেছিল। এ নিয়ে বাংলাদেশের হাইকোর্টের রায়ের পরও প্রামাণ্যচিত্রটি সরিয়ে ফেলার বিষয়টি নাকচ করে দেয় দুই প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান। এখনো প্রামাণ্যচিত্রটি ফেসবুক ও ইউটিউবে দেখা যায়।

ডেসমন্ড ব্রাউনি সম্প্রতি আইন পেশা থেকে অবসরে গেছেন। যোগাযোগ করা হলে তিনি সানডে টাইমসকে বলেন, ‘এটা সত্যি যে ১০ ফেব্রুয়ারি আমার সঙ্গে প্রাথমিক আলোচনার পর আমি ও ক্লার্ক উইলিয়ামস (বাংলাদেশ) হাইকমিশনকে পরামর্শ দিয়েছিলাম। তবে আমার জানামতে, ওই পরামর্শের পর আমি বা ক্লার্ক–উইলিয়ামস আর কোনো পদক্ষেপ নিইনি। ২০২১ সালের মার্চ মাসে ক্লার্ক-উইলিয়ামস ও আমার দেওয়া পরামর্শ অনুযায়ী কোনো চিঠিপত্র দেওয়া বা মামলা-মোকদ্দমা করা হয়নি।’ এ বিষয়ে জানতে ই–মেইল ও ফোনকল করা হলে জবাব দেননি ক্লার্ক উইলিয়াম। সূত্র: দ্য সানডে টাইমস

সর্বশেষ

সর্বাধিক সবার কাছের