জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) এর সামনে আদিবাসী ছাত্র জনতা এবং স্টুডেন্ট ফর সভারেন্টি গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষে গতকাল ১০ জন আহত হয়েছেন। এসময় আদিবাসী ছাত্র জনতাকে লাঠিসোঁটা হাতে ব্যাপক মারধর করা হয়।
বিক্ষোভকারীরা নবম-দশম শ্রেণির বাংলা দ্বিতীয় পত্রের বইয়ের পেছনের প্রচ্ছদে 'আদিবাসী' শব্দটি বাতিল বা বহালের বিষয়ে দু’পক্ষের অবস্থান নিয়ে এনসিটিবি ঘেরাও কর্মসূচি পালন করছিলেন।
এদিকে এই ঘটনা ইতোমধ্যে দেশব্যাপী আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। সংক্ষুব্ধ আদিবাসী ছাত্র-জনতার ব্যানারে কর্মসূচি পালনকারীরা বলেছেন, তাদের ওপর স্টুডেন্ট ফর সভারেন্টি হামলা চালিয়েছে। যদিও স্টুডেন্ট ফর সভারেন্টি এ অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছে, তাদের ওপর হামলা হয়েছে।
এদিকে এক বিজ্ঞপ্তিতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন জানিয়েছে, ‘নিরীহ শিক্ষার্থীদের’ ওপর ন্যক্কারজনক হামলার প্রতিবাদে গতকাল বুধবার (১৫ জানুয়ারি) সন্ধ্যায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করবে তারা। সংগঠনটি এ ঘটনাকে জাতিগত বিভাজন জিইয়ে রাখার অপচেষ্টা উল্লেখ করে জড়িত ব্যক্তিদের অবিলম্বে গ্রেপ্তারের দাবিতে এ কর্মসূচি দিয়েছে।
এদিকে সংক্ষুব্ধ আদিবাসী ছাত্র-জনতার ওপর হামলার ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়েছে জাতীয় নাগরিক কমিটি। গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে তারা জানিয়েছে, মতিঝিলে এনসিটিবি ভবনের সামনে স্টুডেন্টস ফর সভারেন্টি নামের সংগঠনের হামলায় বিভিন্ন জাতিসত্তার নাগরিকেরা মারাত্মক আহত হয়েছেন। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় নির্বাহী সদস্য রুপাইয়া শ্রেষ্ঠা তঞ্চঙ্গ্যাসহ আরও অনেকেই বর্তমানে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ‘হামলার সময় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে সরব ভূমিকা পালন করতে দেখা যায়নি। তারা সক্রিয় ভূমিকা পালন করলে এ ধরনের ন্যক্কারজনক হামলা দেখতে পেতাম না। মিছিল কিংবা সমাবেশে হামলা পতিত নিষিদ্ধ ফ্যাসিবাদী সংগঠন ছাত্রলীগের কায়দার বহিঃপ্রকাশ।’
হামলাকারীদের আইনের আওতায় আনার দাবি জানিয়ে বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়েছে, ফ্যাসিবাদ–উত্তর বাংলাদেশে নাগরিকদের মতপ্রকাশের স্বাধীনতাকে যারা হামলা করে বাধাগ্রস্ত করতে চায়, তাদের অতিসত্বর আইনের আওতায় আনতে হবে। ভিডিও ফুটেজ তদন্ত করে এই হামলার সঙ্গে জড়িত প্রত্যেককে দ্রুত আইনের আওতায় আনতে হবে।
অপর দিকে সংক্ষুব্ধ আদিবাসী ছাত্র-জনতার কর্মসূচিতে হামলার ঘটনায় উদ্বেগ ও নিন্দা জানিয়েছে বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ (পিসিপি)। গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে তারা বলেছে, পরিকল্পিতভাবে উগ্র সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠীর হামলায় ১০-১৫ জন আহত হয়েছেন।
পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের সভাপতি অঙ্কন চাকমা ও সাধারণ সম্পাদক অমল ত্রিপুরার এই বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ‘আমরা মনে করি, এ ঘটনায় পার্বত্য চট্টগ্রামের সেটলারদের কিছু শিক্ষার্থী ও তাদের পেছনে উগ্র সাম্প্রদায়িক ও মৌলবাদী গোষ্ঠীর সম্পৃক্ততা রয়েছে।’
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, উগ্র সাম্প্রদায়িক লোকজন গতকাল থেকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নানা হুমকি দিয়ে আসছিলেন এবং আজ সকাল থেকে তাঁরা লাঠিসোঁটা নিয়ে এনসিটিবি ভবনের সামনে অবস্থান নেন। পিসিপির নেতারা হামলাকারীদের বিরুদ্ধে অবিলম্বে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণে দাবি জানান।
গতকাল আইন শৃঙ্খলা বাহিনী জানায়, এনসিটিবির সামনের সংঘর্ষ ও উত্তেজনা নিয়ে স্থানীয় প্রশাসন পরিস্থিতি শান্ত রাখতে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করছে।
রেডিওটুডে নিউজ/আনাম