যুক্তরাজ্যের ইকোনমিক সেক্রেটারির পদ থেকে ইস্তফা দিয়েছেন টিউলিপ সিদ্দিক। বাংলাদেশে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভাগনি টিউলিপ সিদ্দিকের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে, ৯টি অবকাঠামো প্রকল্প থেকে ৮০ হাজার কোটি টাকা আত্মসাতের সঙ্গে তাঁর নাম জড়িত। দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) তদন্ত করছে।
এ বিষয়ে ব্রিটিশ গণমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হলে, বিরোধী দলীয় সদস্যরা তাঁর বরখাস্তের দাবি জানান। টিউলিপ সিদ্দিক অভিযোগের তদন্তের জন্য চিঠি লেখেন যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা লাউরি ম্যাগনাসের কাছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে তিনি পদত্যাগ করেন।
টিউলিপ সিদ্দিক পদত্যাগপত্রে লিখেছেন,
প্রধানমন্ত্রী
১০ ডাউনিং স্ট্রিট
লন্ডন
SW1A 2AA
হাউস অফ কমন্স
লন্ডন SW1A OAA
প্রিয় প্রধানমন্ত্রী,
সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে আমার প্রতি যে আস্থা প্রকাশ করেছেন, তার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।
১৪ জানুয়ারি ২০২৫
আমি অত্যন্ত কৃতজ্ঞ আপনার স্বতন্ত্র উপদেষ্টা স্যার লরি ম্যাগনাসের প্রতি, যিনি আমার স্বেচ্ছা-প্রত্যাবর্তন প্রক্রিয়ায় দ্রুত এবং বিস্তারিতভাবে কাজ করেছেন এবং আমাকে আমার বর্তমান ও পূর্ববর্তী আর্থিক বিষয়াদি ও বসবাসের ব্যবস্থা সম্পর্কে সম্পূর্ণ তথ্য প্রদানের সুযোগ দিয়েছেন।
আপনার জানা মতে, আমার অনুরোধে স্যার লরি এই বিষয়টি গভীরভাবে পর্যালোচনা করেছেন এবং নিশ্চিত করেছেন যে আমি মন্ত্রীত্বের নিয়মনীতি লঙ্ঘন করিনি। তিনি উল্লেখ করেছেন, আমার মালিকানাধীন বা বসবাসকৃত সম্পত্তি সম্পর্কিত কোনো অনৈতিক আচরণের প্রমাণ নেই, এবং আমার কোনো সম্পদ ‘যে কোনো অনৈতিক উৎস থেকে এসেছে’ এমন প্রমাণও পাওয়া যায়নি।
পদত্যাগপত্রে যা লিখেছেন টিউলিপ সিদ্দিক
আমার পারিবারিক সম্পর্ক জনগণের কাছে প্রকাশিত এবং যখন আমি মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নিই, তখন সরকারের কাছে আমার সম্পর্ক ও ব্যক্তিগত স্বার্থের সমস্ত তথ্য প্রদান করেছি। কর্মকর্তাদের সঙ্গে ব্যাপক পরামর্শের পর আমাকে পরামর্শ দেওয়া হয়েছিল যে, আমার ঘোষণাপত্রে উল্লেখ করি আমার খালা বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী এবং বাংলাদেশ সম্পর্কিত বিষয়ে আমি নিজেকে বিরত রাখি, যাতে স্বার্থের সংঘাতের কোনো ধারণা তৈরি না হয়। আমি আপনাকে নিশ্চিত করতে চাই যে, এ বিষয়ে আমি সর্বদা স্বচ্ছভাবে কাজ করেছি এবং কর্মকর্তাদের পরামর্শ অনুযায়ী কাজ করেছি।
তবে, এটা স্পষ্ট যে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থনৈতিক সচিব হিসেবে আমার দায়িত্ব পালন সরকারের কাজে বিঘ্ন ঘটানোর সম্ভাবনা রাখে। আমার আনুগত্য সর্বদা এই লেবার সরকারের প্রতি এবং এর আর্থ-সামাজিক পুনর্গঠন ও রূপান্তরের কর্মসূচির প্রতি থাকবে। তাই আমি আমার মন্ত্রীত্বের পদ থেকে পদত্যাগ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।
আপনার সরকারের অংশ হিসেবে কাজ করার সুযোগ দেওয়ার জন্য আমি আপনাকে ধন্যবাদ জানাই। আমি ব্যাকবেঞ্চ থেকে যেকোনোভাবে এই সরকারকে সমর্থন করা চালিয়ে যাব।
শুভেচ্ছান্তে,
জুলি টিউলিপ সিদ্দিক এমপি
প্রসঙ্গত, ব্রিটেনের ক্ষমতাসীন লেবার পার্টি মন্ত্রিসভার সদস্য টিউলিপ সিদ্দিক। দেশটির ইকনোমিক সেক্রেটারি টু দ্য ট্রেজারি অ্যান্ড সিটি মিনিস্টার হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন তিনি। তার কাজ যুক্তরাজ্যের অর্থবাজারের ভেতরের দুর্নীতি সামাল দেওয়া। কিন্তু, তার মাতৃভূমি বাংলাদেশেই এখন তার বিরুদ্ধে তদন্ত চলছে, যেখানে তিনি এবং পরিবারের চার সদস্যের বিরুদ্ধে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে প্রায় ৪০০ কোটি মার্কিন ডলার আত্মসাতের অভিযোগ রয়েছে।
এ ছাড়া যুক্তরাজ্যে টিউলিপের বিরুদ্ধে অভিযোগ, খালা শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠজনদের কাছ থেকে মন্ত্রী থাকা অবস্থায় বিনামূল্যে ফ্ল্যাট গ্রহণ করেছেন তিনি। কোনো বিশেষ সুবিধা প্রদানের মাধ্যমে সেই উপহারের ফ্ল্যাট তিনি নিয়েছেন কি না, তা নিয়ে উঠেছে প্রশ্ন।
এমন অবস্থায় টিউলিপ সিদ্দিককে বরখাস্ত করতে সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন দেশটির প্রধান বিরোধী দল কনজারভেটিভ পার্টির প্রধান কেমি ব্যাডেনোচ। যদিও হ্যাম্পস্টেড এবং হাইগেটের এমপি টিউলিপ দাবি করেছেন, তিনি কোনো ভুল করেননি।
এদিকে ইউকে অ্যান্টি-করাপশন কোয়ালিশন বিবৃতি দিয়ে বলেছে, টিউলিপ সিদ্দিক ব্রিটিশ সরকারে যে দায়িত্ব পালন করছেন এবং তার বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ উঠেছে, সেগুলো স্পষ্টতই গুরুতর ‘স্বার্থের সংঘাত’। বাংলাদেশের দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) তার খালা ও দেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে যে তদন্ত করছে, তাতে টিউলিপ সিদ্দিকের নাম এসেছে।
যুক্তরাজ্যের দুর্নীতিবিরোধী দাতব্য সংস্থাগুলোর এই জোট আরও বলেছে, যুক্তরাজ্যের আন্তর্জাতিক বিশ্বাসযোগ্যতা এবং খ্যাতি রক্ষায় সরকারের পক্ষে বেশ কিছু জরুরি এবং গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, আর এসব সিদ্ধান্ত গ্রহণ টিউলিপ সিদ্দিকের দায়িত্বের মধ্যেই পড়ে। কিন্তু তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগের কারণে সৃষ্ট স্বার্থ-সংঘাতে এটি এখন স্পষ্ট নয় যে, তিনি এসব সিদ্ধান্ত নেওয়ার অবস্থানে আছেন কি না।
রেডিওটুডে নিউজ/আনাম