বুধবার,

১৫ জানুয়ারি ২০২৫,

২ মাঘ ১৪৩১

বুধবার,

১৫ জানুয়ারি ২০২৫,

২ মাঘ ১৪৩১

Radio Today News

বিলাসবহুল ৮টি গাড়ি, পাঁচটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে জয়ের সম্পৃক্ততা পেয়েছে এফবিআই

রেডিওটুডে রিপোর্ট

প্রকাশিত: ১২:৩৭, ১৪ জানুয়ারি ২০২৫

আপডেট: ১২:৩৭, ১৪ জানুয়ারি ২০২৫

Google News
বিলাসবহুল ৮টি গাড়ি, পাঁচটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে জয়ের সম্পৃক্ততা পেয়েছে এফবিআই

ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছেলে ও সাবেক আইসিটি বিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়ের বিরুদ্ধে আটটি বিলাসবহুল গাড়ি ও পাঁচটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সম্পৃক্ততার প্রমাণ পেয়েছে মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা ফেডারেল ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (এফবিআই)। একইসঙ্গে হংকং ও কেম্যান আইল্যান্ডে সন্দেহজনক ব্যাংক হিসাব এবং ৩০০ মিলিয়ন ডলার অর্থ পাচারের অভিযোগও উঠেছে তার বিরুদ্ধে।

২০২৩ সালের ২৩ এপ্রিল মার্কিন বিচার বিভাগের কাছে এফবিআই এসব তথ্য জমা দেয়। পরে ওই প্রতিবেদন দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) হাতে পৌঁছে। এর ভিত্তিতে গত বছরের ডিসেম্বরে দুদক সজীব ওয়াজেদ জয় এবং শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে অর্থ পাচারের অভিযোগে তদন্ত শুরু করেছে।  

সংস্থাটি তদন্তে জয়ের মালিকানায় আটটি বিলাসবহুল গাড়ি থাকার তথ্য পেয়েছে। এগুলোর মডেল ও দাম যথাক্রমে ম্যাকলারেন ৭২০এস (মূল্য ২ লাখ ৫০ হাজার ৫৭৮ ডলার), মার্সিডিজ বেঞ্জ এএমজি জিটি (মূল্য ১ লাখ ৯ হাজার ৮০৬ ডলার), মার্সিডিজ বেঞ্জ এস-ক্লাস (মূল্য ৫১ হাজার ৮ ডলার), এসএল শ্রেণীর মার্সিডিজ বেঞ্জ (৭৩ হাজার ৫৭০ ডলার), লেক্সাস জিএক্স ৪৬০ (মূল্য ৩০ হাজার ১৮২ ডলার), রেঞ্জ রোভার (৩৭ হাজার ৫৮৬ ডলার), জিপ গ্র্যান্ড চেরোকি (৭ হাজার ৪৯১ ডলার) ও গ্র্যান্ড চেরোকি (৪ হাজার ৪৭৭ ডলার)।

এছাড়া পাঁচটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে তার সরাসরি সম্পৃক্ততার কথা জানানো হয়। প্রতিষ্ঠানগুলো হলো—ওয়াজেদ কনসাল্টিং, ইকম সিস্টেমস, এমভিয়ন ও ইন্টেলিজেন্ট ট্রেড সিস্টেমস লিমিটেড।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য এবং কেম্যান আইল্যান্ডে অর্থ পাচারের সঙ্গে সজীব ওয়াজেদের সংশ্লিষ্টতা রয়েছে। এফবিআই হংকং ও কেম্যান আইল্যান্ডে তার ব্যাংক হিসাব খুঁজে পেয়েছে। এছাড়া ওয়াশিংটন ডিসি, নিউইয়র্ক এবং লন্ডনে সন্দেহজনক অর্থ স্থানান্তরের তথ্যও তদন্তে উঠে এসেছে।

এফবিআই বলছে, এসব অর্থ স্থানান্তরের বিষয়টি ‘গুরুতর উদ্বেগজনক’ এবং আরও বিস্তারিত অনুসন্ধানের প্রয়োজন রয়েছে। মার্কিন গোয়েন্দারা ইতোমধ্যে যুক্তরাজ্যের গোয়েন্দা সংস্থার সঙ্গে যোগাযোগ করেছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এ অনুসন্ধানগুলো জয়ের সম্ভাব্য অবৈধ ক্রিয়াকলাপ গুরুতর উদ্বেগজনক এবং এর আরো পরীক্ষা-নিরীক্ষার প্রয়োজন।

দুদক সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের সচিব, ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট, পাসপোর্ট অফিস ও নির্বাচন কমিশনের কাছে প্রয়োজনীয় তথ্য চেয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে। তবে কিছু প্রতিষ্ঠান তথ্য দিলেও অনেকের কাছ থেকে এখনো সাড়া পাওয়া যায়নি।

এফবিআইয়ের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, স্পেশাল এজেন্ট লা প্রিভোটের সঙ্গে মার্কিন বিচার বিভাগের সিনিয়র ট্রায়াল অ্যাটর্নি লিন্ডা স্যামুয়েলসের যোগাযোগ হয়। তিনি বাংলাদেশ থেকে ৩০০ মিলিয়ন ডলার চুরি এবং যুক্তরাষ্ট্রে ব্যাংক অ্যাকাউন্টে পাচারসংক্রান্ত একটি মামলায় ওয়াশিংটন ফিল্ডের সহায়তা চেয়েছিলেন।

শেখ হাসিনা ও সজীব ওয়াজেদ জয় যুক্তরাষ্ট্র ও কেম্যান আইল্যান্ডে অর্থ পাচার করেছেন উল্লেখ করে প্রতিবেদনে বলা হয়, বিচার বিভাগের সম্পদ বাজেয়াপ্তকরণ বা মানি লন্ডারিং বিভাগ এসব তহবিল খুঁজে বের করতে, সংযত করতে, জব্দ করতে ওয়াশিংটন ফিল্ডের সহায়তা চেয়েছিল। তদন্তে ওয়াজেদ কনসাল্টিং ইনকরপোরেটেড নামে সন্দেহজনক কার্যকলাপও পাওয়া গেছে। ওয়াজেদ কনসালট্যান্ট বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে অসংখ্য ব্যবসায় নিয়োজিত ছিল এবং বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইট প্রকল্পে যুক্ত ছিল। প্রতিবেদনে বলা হয়, এসব আর্থিক লেনদেনের বৈধতা নির্ধারণ ও জবাবদিহি নিশ্চিত করতে সতর্কতার সঙ্গে যাচাই-বাছাই ও তদন্তের দাবি রাখে।

দুদক সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের সচিব, ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট, পাসপোর্ট অফিস ও নির্বাচন কমিশনের কাছে প্রয়োজনীয় তথ্য চেয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে। তবে কিছু প্রতিষ্ঠান তথ্য দিলেও অনেকের কাছ থেকে এখনো সাড়া পাওয়া যায়নি। তদন্তে যুক্তরাষ্ট্রের ম্যাসাচুসেটস ও ভার্জিনিয়ায় সজীবের স্ত্রী ক্রিস্টিন ও. ওয়াজেদের সঙ্গে সন্দেহজনক ব্যাংক কার্যক্রমের তথ্যও পাওয়া গেছে বলে উল্লেখ করা হয়।

শিক্ষার্থীদের নেতৃত্বে গণ-অভ্যুত্থানের মধ্যে গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর শেখ হাসিনা, তার ছেলে সজীব ও পরিবারের অন্য সদস্যদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগের অনুসন্ধান শুরু করে দুদক। কমিশনের উপপরিচালক মো. সালাউদ্দিনের নেতৃত্বে একটি তদন্ত দল অনুসন্ধান শুরু করে এবং এরই মধ্যে প্রয়োজনীয় তথ্য চেয়ে সরকারের বিভিন্ন সংস্থাকে চিঠি দিয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, শেখ হাসিনা ও জয় যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যে ৩০ কোটি ডলার (টাকার অংকে প্রায় ৩ হাজার ৬০০ কোটি) পাচার করেছেন। প্রতিবেদনের কপি পাওয়ার পর এফবিআইয়ের অনুসন্ধানের ভিত্তিতে দুদক ২০২৪ সালের ২২ ডিসেম্বর শেখ হাসিনা ও জয়ের বিরুদ্ধে ৩০০ মিলিয়ন ডলার পাচারের অভিযোগের তদন্ত শুরু করেছে।

অন্যদিকে সজীব ওয়াজেদ জয় তার ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এসব অভিযোগকে ‘সম্পূর্ণ মিথ্যা ও বানোয়াট’ বলে দাবি করেছেন। তিনি বলেন, ‘‘আমরা কখনো কোনো সরকারি প্রকল্পের সঙ্গে জড়িত ছিলাম না। আমাদের কোনো অফশোর অ্যাকাউন্ট নেই এবং এ ধরনের বিপুল পরিমাণ অর্থের সঙ্গে আমাদের কোনো সম্পর্ক নেই।’’

শিক্ষার্থীদের নেতৃত্বে গণ-অভ্যুত্থানের মাধ্যমে গত বছরের আগস্টে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর শেখ হাসিনা ও তার পরিবারের বিরুদ্ধে একাধিক দুর্নীতির অভিযোগের তদন্ত শুরু করে দুদক।

দুদকের তদন্ত কর্মকর্তা মো. সালাউদ্দিন জানান, প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে তদন্তের অগ্রগতি অব্যাহত রয়েছে এবং প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে দেশের বাইরে থেকে আরও তথ্য সংগ্রহ করা হবে।

রেডিওটুডে নিউজ/আনাম

সর্বশেষ

সর্বাধিক সবার কাছের