আওয়ামী লীগ শাসনামলে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের সব চুক্তি জনসমক্ষে প্রকাশের দাবি জানিয়েছে বিএনপি। গতকাল বৃহস্পতিবার গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি জানানো হয়।
দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, রাজনৈতিক তর্ক-বিতর্কে আওয়ামী লীগের দুর্বৃত্তায়ন, চুরি, দুর্নীতি, লুটপাট চাপা পড়ে যাচ্ছে। তাদের দুর্নীতি, অনিয়ম-অনাচার বারবার বলা দরকার। কারণ, এটা না বললে আওয়ামী লীগ যে দুর্বৃত্তায়ন করেছে, মানুষ তা ভুলে যাবে। বিএনপি ক্ষমতায় গেলে তাদের দুর্নীতির বিচার করা হবে। এ সময় স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান উপস্থিত ছিলেন।
সংবাদ সম্মেলনে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে দুর্নীতির চিত্র তুলে ধরেন সাবেক প্রতিমন্ত্রী ও স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু। তিনি বলেন, বিদ্যুৎ খাতে ম্যাজিক করতে গিয়ে দেশের মানুষকে সর্বশান্ত করেছে আওয়ামী লীগ। এ খাতে বিগত ১৫ বছরে খরচ হয়েছে ৩ লাখ ৩৩ হাজার ৯৪০ কোটি টাকা। শুধু ক্যাপাসিটি চার্জে লুটপাট হয়েছে প্রায় এক লাখ কোটি টাকা। ক্যাপাসিটি চার্জ পাওয়া
প্রতিষ্ঠানগুলোর বেশির ভাগের যন্ত্রপাতি খারাপ। খারাপ মেশিন নিয়ে এসে টাকা কামাই করে চলে গেছে। এর মধ্যে সামিট নিয়েছে ১০ হাজার ৬৩০ কোটি টাকা, অ্যাগ্রো ইন্টারন্যাশনাল নিয়েছে ৭ হাজার ৯৩২ কোটি টাকা, আলট্রা পাওয়ার হোল্ডিংস নিয়েছে ৭ হাজার ৫২৩ কোটি টাকা, ইউনাইটেড গ্রুপ নিয়েছে ৬ হাজার ৫৭৫ কোটি টাকা, আরপিসিএল নিয়েছে ৫ হাজার ১১৭ কোটি টাকা। চাহিদা না থাকলেও দরপত্র ছাড়াই দায়মুক্তি আইনের আওতায় ৯০টির বেশি বিদ্যুৎকেন্দ্রের লাইসেন্স দেওয়া হয়।
টুকু বলেন, আওয়ামী লীগ বুঝতে পেরেছিল, এ খাত থেকে কুইক মানি বানানো যায় কোনো হিসাব না দিয়ে। কারণ, বিদ্যুৎ তো হাওয়া, এটি দেখা যায় না। ক্যাপাসিটি চার্জে কোন মেশিনে কত ক্যাপাসিটি? কে এটাকে আইডেনটিফাই করেছে এবং সেই মেশিনগুলোর ইফিসিয়েন্সি কী? এগুলো কেউ বিশ্লেষণ করে না, দেখেও না।
তিনি বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের প্রথম কাজ হলো জনগণের কাছে চুক্তিগুলো উন্মুক্ত করা। রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্পের ৫০০ বিলিয়ন ডলার শেখ হাসিনাসহ তাঁর পরিবার নিয়ে গেছে। বিষয়টি নিয়ে লন্ডনে শেখ রেহানার মেয়ে ব্রিটিশ এমপি টিউলিপ সিদ্দিকের ব্যাপারেও তদন্ত হচ্ছে। তাদের আরও দুর্নীতি আছে।
টুকু বলেন, কুইক রেন্টাল পাওয়ার প্লান্ট আপৎকালীন বিদ্যুৎ সংকট নিরসনের জন্য। ৩ থেকে ৫ বছরের চুক্তিতে এসে এসব কেন্দ্র ১৫ বছর ধরে চলছে। কুইক রেন্টালে ৭৫ শতাংশ বিনিয়োগ করেছে উইথ আউট রিটার্ন। বোঝেন কী অবস্থা!
তিনি বলেন, ভারত থেকে বিদ্যুৎ আমদানির নামে ৯ বছরে ক্যাপাসিটি চার্জ দিয়েছে ১১ হাজার ১৫ কোটি টাকা। প্রতিটি প্রি-পেইড মিটারে অতিরিক্ত খরচ করেছে সাড়ে ৪ হাজার টাকা। এভাবে ১ হাজার ২৩৫ কোটি টাকা অতিরিক্ত খরচ করেছে, যার মধ্যে দুর্নীতি করেছে ৬১৭ কোটি। তাদের এ সিন্ডিকেটে পতিত সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আত্মীয়স্বজন ছিলেন।
সাবেক প্রতিমন্ত্রীর দাবি, আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে বিদ্যুতে যেসব উন্নয়ন হয়েছে, তা টেকসই নয়। যে কোনো সময় মুখ থুবড়ে পড়বে। এখন দুর্নীতি বন্ধ করা না গেলে ২০২৭ সালে বিপদে পড়ব। এলএনজি প্রকল্পের নামে সাবেক বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপুর কোম্পানি কোটি কোটি টাকা দুর্নীতি করেছে বলেও দাবি তাঁর।
রেডিওটুডে নিউজ/আনাম