‘জুলাই বিপ্লবের ঘোষণাপত্র’ নিয়ে দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্র হয়েছে বলে উল্লেখ করেছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মুখ্য সংগঠক আবদুল হান্নান মাসউদ। মঙ্গলবার (৩১ ডিসেম্বর) কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে কর্মসূচি সামনে রেখে গভীর রাতে রাজধানীর বাংলামোটরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কার্যালয়ে বৈঠক চলার মধ্যে সেখান থেকে বেরিয়ে এ কথা বলেছেন মাসউদ।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটির নেতারা ওই বৈঠক করছিলেন। রাত পৌনে ১টার দিকে আবদুল হান্নান মাসউদ সাংবাদিকদের বলেন, ‘জুলাই বিপ্লবের ঐতিহাসিক দলিল যাতে আমরা উপস্থাপন না করতে পারি, সে ক্ষেত্রে বিভিন্ন ধরনের বাধা সৃষ্টি করা হয়েছে। কিন্তু সরকার এটির ব্যাপারে সম্মতি দিয়েছে। এটা আমাদের প্রাথমিক বিজয়।’
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের এই নেতা বলেন, ‘আমরা পূর্ববর্তী যে কর্মসূচি দিয়েছি, আমরা বিপ্লবীরা কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে একত্রিত হব। সরকারের পক্ষ থেকে ঘোষণাপত্র আসবে, কিন্তু তাই বলে আমাদের একত্রিত হওয়া বন্ধ হয়ে যাবে না।
আগামীকাল শহীদ মিনারে আহত থেকে শুরু করে শহীদ পরিবার এবং ঢাকা শহরের মা ও বোনেরা যেভাবে ৫ আগস্ট রাজপথে নেমে এসেছিল, সেভাবে প্রোক্লেমেশনের পক্ষে রাজপথে নেমে আসবে।’
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা গত রবিবার সংবাদ সম্মেলন করে জানান, তাঁরা মঙ্গলবার বিকেলে ঢাকার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে জুলাই বিপ্লবের ঘোষণাপত্র দেবেন। সংগঠনের নেতারা ঘোষণাপত্রে দুটি মৌলিক বিষয়ের উল্লেখ করেন। তাতে ১৯৭২ সালের সংবিধানকে ‘মুজিববাদী সংবিধান’ হিসেবে আখ্যায়িত করে এর ‘কবর’ রচনা করা এবং ‘নাৎসিবাদী আওয়ামী লীগকে’ বাংলাদেশে অপ্রাসঙ্গিক ঘোষণা করার কথা থাকবে।
এই ঘোষণাপত্র নিয়ে বিএনপিসহ মূলধারার রাজনৈতিক দলগুলো স্পষ্ট কোনো মন্তব্য করেনি। তবে এ বিষয়ে দলগুলোর কারো কারো মধ্যে প্রশ্ন উঠেছে। তারা মনে করছে, ঘোষণাপত্র চূড়ান্ত করার আগে রাজনৈতিক দল ও অংশীজনদের সঙ্গে আলোচনার প্রয়োজন ছিল। তা না করে হঠাৎ কোনো ঘোষণা বিভাজন তৈরি করবে। তবে কোনো কোনো দল ছাত্রদের ওই উদ্যোগকে নৈতিকভাবে সমর্থন জানায়।
এ নিয়ে দিনভর রাজনৈতিক অঙ্গনে নানা আলোচনার মধ্যে রাত পৌনে ৯টায় রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনার সামনে এক জরুরি প্রেস ব্রিফিং করেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম। তিনি সেখানে বলেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের পক্ষ থেকে জাতীয় ঐকমত্যের ভিত্তিতে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের একটি ঘোষণাপত্র তৈরির উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে গড়ে ওঠা জনগণের ঐক্য, ফ্যাসিবাদবিরোধী চেতনা ও রাষ্ট্র সংস্কারের আকাঙ্ক্ষাকে সুসংহত রাখার জন্য এ ঘোষণাপত্রটি গৃহীত হবে।
এরপর ওই বৈঠকে বসেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটির নেতারা। হান্নান মাসউদ সাংবাদিকদের আরো বলেন, ‘আমাদের ঘোষণাপত্র নিয়ে দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্র হয়েছে। কিন্তু সেই ষড়যন্ত্রে পেরেক মেরে দিয়েছে আমাদের অন্তর্বর্তী সরকার। তারা বলেছে, সরকারের জায়গা থেকে ঘোষণাপত্র দেওয়া হবে। আগামীকাল জনগণকে রাজপথে নেমে আসার আহ্বান জানাই। আমরা আগামীকাল সারা দেশের মানুষকে এই ঘোষণাপত্রের পক্ষে রাজপথে নেমে আসার আহ্বান জানাই। আমরা আশা করি, এই ঘোষণাপত্রের পক্ষে ৫ আগস্টের মতো একটা গণজোয়ার কালকে দেখা যাবে।’
এ সময় এক সাংবাদিক হান্নান মাসউদকে প্রশ্ন করেন, মঙ্গলবার শহীদ মিনারে ঘোষণাপত্র পাঠ হবে কি না। এ সময় হান্নানের পাশ থেকে একজন হাত নেড়ে ‘না’ বলেন। সঙ্গে সঙ্গেই হান্নানের নেতৃত্বে মিছিল করতে করতে একদল তরুণ সেখান থেকে চলে যান। পরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্য নেতারা জানান, রাত সোয়া ১টায় তাঁরা আনুষ্ঠানিক ব্রিফিং করবেন।
রেডিওটুডে নিউজ/আনাম