‘জুলাই ঘোষণাপত্র’ সরকারের জন্যই রেখে দিলেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃবৃন্দ। আগামীকাল পূর্বঘোষিত কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হলেও জুলাই ঘোষণাপত্র প্রকাশ হবে না বলে জানিয়েছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মুখ্য সমন্বয়ক আব্দুল হান্নান মাসুদ।
মঙ্গলবার রাত সাড়ে ১২টায় এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, আগামীকাল আমাদের কর্মসূচি যথাসময়েই অনুষ্ঠিত হবে। তবে ‘জুলাই ঘোষণাপত্র’ আগামীকাল ঘোষণা করা হবে না। ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থানের ঘোষণাপত্র’ তৈরির যে উদ্যোগ বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার নিয়েছে সেটির পক্ষে অবস্থান নিয়ে ঘোষণাপত্রটি কেমন হবে তা জানানো হবে।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃবৃন্দ বলেন, আগের ঘোষিত সময়েই কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হবে। তবে কর্মসূচি স্থগিত করার কোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়নি। কর্মসূচি সময়মতো এবং পরিকল্পনা অনুযায়ী হবে, এ ব্যাপারে আমরা দৃঢ় প্রতিজ্ঞ।
এদিন রাত ১টায় এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন জানিয়েছে, জুলাই-আগস্টে সংগঠিত গণঅভ্যুত্থানে ছাত্র-জনতার স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণের মধ্য দিয়ে আবির্ভূত জন-আকাঙ্ক্ষা তথা ফ্যাসিবাদি ব্যবস্থার বিলোপ ও নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত কায়েমের প্রতিশ্রুতির ভিত্তিতে নতুন বাংলাদেশ এক ঐতিহাসিক পটভূমিতে আবির্ভূত হয়েছে। হাজারো শহীদ ও আহত যোদ্ধাদের আত্মত্যাগের স্বীকৃতি ও জন-আকাঙ্ক্ষার দলিলস্বরূপ 'জুলাইয়ের ঘোষণাপত্র' অত্যাবশ্যক ছিলো। এই ঘোষণাপত্র প্রণয়নের ঐতিহাসিক দায় জুলাই গণঅভ্যুত্থানের নেতৃত্বদানকারী সংগঠন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের উপর বর্তায়। নানা প্রতিকূলতা সত্ত্বেও আমরা, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন, বাংলাদেশের ছাত্র-জনতার পক্ষে এই ঐতিহাসিক ঘোষণাপত্রের প্রণয়ন ও ঘোষণার দায়িত্ব গ্রহণ করেছিলাম।
আমাদের উদ্যোগের ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশের আপামর ছাত্র-জনতার মধ্যে স্বতঃস্ফূর্ত ও ইতিবাচক সাড়া সঞ্চারিত হয়েছে। এমতাবস্থায় ছাত্র-জনতার আহবানে রাষ্ট্রীয় পর্যায় থেকে জাতীয় ঐক্যমত্যের ভিত্তিতে জুলাই ঘোষণাপত্র প্রণয়নের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ছাত্র-জনতা এই সময়োপযোগী উদ্যোগকে সাধুবাদ জানাচ্ছে। এরই ধারাবাহিকতায় আজ ৩১শে ডিসেম্বর, রোজ- মঙ্গলবার, বিকাল ৩টায় কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে March for Unity কর্মসূচি ঘোষণা করা হলো। বাংলাদেশের আপামর জনসাধারণের প্রতি আমাদের উদাত্ত আহ্বান- আপনারা যে উদ্দীপনায় সংগঠিত হয়েছেন, তার ধারাবাহিকতা বজায় রেখে আগামীকালের কর্মসূচিতে স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশগ্রহণ করবেন।
এর আগে সামাজিক মাধ্যমে কর্মসূচি স্থগিত হওয়ার একটি প্রেস বিজ্ঞপ্তি ছড়িয়ে পড়ে। তবে এটিকে ভুয়া বলে ফেসবুক পেজে নিশ্চিত করেছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। এখন পর্যন্ত কর্মসূচি স্থগিত হওয়ার কোনো ঘোষণা আসেনি বলেও জানিয়েছেন আন্দোলনের নেতৃবৃন্দ।
এদিকে, গত ২৯ ডিসেম্বর সংবাদ সম্মেলন করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন জানায়, তারা ৩১ ডিসেম্বর ঢাকার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ‘জুলাই বিপ্লবের ঘোষণাপত্র’ প্রকাশ করবে। সরকারের পক্ষ থেকে একই দিন জানানো হয়েছে, 'জুলাই গণঅভ্যুত্থানের ঘোষণাপত্র' কিছু দিনের মধ্যে প্রস্তুত করা হবে।
এদিন সন্ধ্যায় প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং জানায়, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের পক্ষ থেকে জাতীয় ঐক্যমত্যের ভিত্তিতে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের একটি ঘোষণাপত্র তৈরির উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। এতে বলা হয়, জুলাই গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে গড়ে ওঠা জনগণের ঐক্য, ফ্যাসিবাদ বিরোধী চেতনা ও রাষ্ট্র সংস্কারের আকাঙ্ক্ষাকে সুসংহত রাখার জন্য এ ঘোষণাপত্রটি গৃহীত হবে।
রেডিওটুডে নিউজ/আনাম