সংবিধান সংস্কার কমিশনের আহ্বানে লিখিত প্রস্তাবনা পেশ করেছে জাতীয় নাগরিক কমিটি। মঙ্গলবার (৩ ডিসেম্বর) জাতীয় সংসদের দক্ষিণ-পশ্চিম ব্লকের দ্বিতীয় লেভেলে অবস্থিত কেবিনেট কক্ষে ৬৯ দফা প্রস্তাবনা পেশ করে সংগঠনটি। জাতীয় নাগরিক কমিটি তাদের প্রস্তাবে বলেছে, সরকারের মেয়াদ হবে ৪ বছর। দুবারের বেশি কেউ রাষ্ট্রপতি বা প্রধানমন্ত্রী হতে পারবেন না।
সংবিধান সংস্কার কমিশনের আহ্বানের ভিত্তিতে জাতীয় নাগরিক কমিটির সংবিধান প্রস্তাব:
বিদ্যমান সংবিধানের সংস্কার নয়; সম্পূর্ণ নতুন সংবিধান প্রণয়ন করতে হবে। বিদ্যমান সংবিধানের ৪(ক) -এর ন্যায় কোনো অনুচ্ছেদ থাকবে না। সরকারি, আধা-সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানসমূহে কেবলমাত্র জাতীয় প্রতীক প্রদর্শিত হবে।
মুক্তিযুদ্ধের ঘোষণাপত্রকে প্রথম রিপাবলিকের প্রস্তাবনা হিসেবে গ্রহণ করে তা সংবিধানে অন্তর্ভূক্ত করতে হবে। দ্বিতীয় রিপাবলিকের প্রোক্লেমেশন জারি করে তা নতুন সংবিধানের প্রস্তাবনা হিসেবে অন্তর্ভূক্ত করতে হবে। নতুন লিগ্যাল ফ্রেমঅর্ডারের অধীন গণপরিষদ নির্বাচনের মাধ্যমে নতুন সংবিধান প্রণয়ন করতে হবে। সংবিধান প্রণয়ন সম্পন্ন হলে উক্ত গণপরিষদই আইনসভায় রূপ নেবে।
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের সকল অংশীজনের কাছ থেকে পাওয়া প্রস্তাবের ভিত্তিতে সংবিধান সংস্কার কমিশন কর্তৃক প্রণীত প্রস্তাব কেবল সরকারের কাছে নয়; বরং সকল অংশীজনের কাছেই পাঠাতে হবে এবং তাদের মতামতের ভিত্তিতে চূড়ান্ত হওয়া খসড়া গণপরিষদে উত্থাপিত হবে। এটাই হবে গণপরিষদের সংবিধান বিতর্কের মূল দলিল।
সকল স্তরের জনগণের মতামত গ্রহণ করতে হবে। কেবল ওয়েবসাইটে মতামত গ্রহণের মাধ্যমে এ কাজ করা সম্ভব নয়। সংবিধানে প্রত্যেক জাতিসত্তার স্বীকৃতি থাকতে হবে। বাংলাদেশের নাগরিকগণ 'বাংলাদেশি' হিসেবে পরিচিত হবে।
সংবিধানের প্রস্তাবনায় গণসার্বভৌমত্বের স্বীকৃতি থাকতে হবে। সংবিধানে গণভোটের বিধান থাকতে হবে। গণভোট ছাড়া কেবলমাত্র আইনসভার দুই-তৃতীয়াংশের জোরে সংবিধান সংশোধন করা যাবে না।
জাতীয় নাগরিক কমিটি সংবিধানের পাঁচটি মূলনীতি প্রস্তাব করেছে। সেগুলো হলো—সাম্য, মানবিক মর্যাদা, সামাজিক ন্যায়বিচার, নাগরিক অধিকার ও গণতন্ত্র।
রাষ্ট্রপতি
নাগরিক কমিটির প্রস্তাবে বলা হয়েছে, রাষ্ট্রপতি রিপাবলিকের নিয়মতান্ত্রিক প্রধান হবেন। রিপাবলিকের সকল কর্ম তার নামেই সম্পাদিত হবে। জনগণের সরাসরি ভোটে রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হবেন। দুইবারের বেশি কেউ রাষ্ট্রপতি হতে পারবেন না। একজন রাষ্ট্রপতি পরবর্তীতে প্রধানমন্ত্রী পদে নির্বাচন করতে পারবে না।
রাষ্ট্রপতি সংসদের উভয়কক্ষের যৌথসভায় সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্যদের আস্থাভাজনকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ দেবেন। এছাড়া আইনের দ্বারা নির্ধারিত পদ্ধতিতে মনোনীত ব্যক্তিকে প্রধান বিচারপতি নিয়োগ দেবেন। অন্যান্য সাংবিধানিক পদেও আইনের দ্বারা নির্ধারিত পদ্ধতিতে নিয়োগ দেবেন।
রাষ্ট্রপতি দণ্ড মওকুফ বা ক্ষমা ঘোষণা করতে পারবেন। তবে এক্ষেত্রে সংসদের উচ্চ কক্ষের প্রস্তাব/পরামর্শ লাগবে। রাষ্ট্রপতি যেকোনো আইন-বিধান-বিধি-প্রবিধান-নীতি বা চুক্তি/স্মারক অনুমোদন বা স্বাক্ষরের আগে সংবিধানানুগ হয়েছে কিনা তা পরীক্ষার জন্য সুপ্রীম কোর্টের সংশ্লিষ্ট বিভাগে মতামতের জন্য পাঠাতে পারবেন।
যেকোনো ব্যক্তি, সংস্থা, কর্মবিভাগ সম্পর্কে তদন্ত/নিরীক্ষার জন্য ন্যায়পালকে নির্দেশ দিতে পারবেন। অধ্যাদেশ প্রণয়নের আগে তা ক্রমানুসারে সংসদের উচ্চকক্ষ বা সংসদীয় কমিটি বা সুপ্রীম কোর্টের সংশ্লিষ্ট বিভাগের মতামত/পরামর্শ গ্রহণ করবেন।
যেকোনো বিষয়ে আলোচনার জন্য রাষ্ট্রপতি সংসদে প্রস্তাব পাঠাতে পারবেন। রাষ্ট্রপতির কাস্টিং ভোট থাকবে। রাষ্ট্রপতি তিন বাহিনীর প্রধান থাকবেন এবং জরুরি অবস্থা বিষয়ে উচ্চকক্ষ সিদ্ধান্ত নেবে। জরুরি অবস্থা ঘোষণার জন্য সংসদের উভয়কক্ষের সভায় পাশ হওয়া প্রস্তাব রাষ্ট্রপতির কাছে আসতে হবে। নিম্নকক্ষের অনুপস্থিতিতে কেবল উচ্চকক্ষ প্রস্তাব পাঠাতে পারবে। জরুরি অবস্থা চলাকালীন মৌলিক অধিকার রদ করা যাবে না। কেবল সংসদ নেতার পরামর্শক্রমে রাষ্ট্রপতি সময়ের আগে সংসদ ভেঙে দিতে পারবেন।
প্রধানমন্ত্রী
নাগরিক কমিটি প্রস্তাব করেছে, প্রধানমন্ত্রী হলে তিনি একইসঙ্গে নিজ দলের প্রধান এবং সংসদ নেতা হতে পারবেন না। জীবনে দুইবারের বেশি কেউ প্রধানমন্ত্রী হতে পারবেন না এবং প্রধানমন্ত্রী হবার পর রাষ্ট্রের আর কোনো পদেই তিনি আসীন হবেন না। কোম্পানি বা ব্যবসায়ী উদ্যোগের ক্ষেত্রেও বিধি-নিষেধ থাকবে। প্রধানমন্ত্রী থাকা অবস্থায় সকল সম্পদ এবং সম্পত্তি স্টেট ব্যাংকের অধীনে চলে যাবে।
কোনো সাংবিধানিক পদের নিয়োগে প্রধানমন্ত্রী রাষ্ট্রপতিকে পরামর্শ দিতে পারবেন; তবে তা পালন করা রাষ্ট্রপতির জন্য আবশ্যকীয় হবে না। সাংবিধানিক পদে নিয়োগ ও অপসারণ আইন দ্বারা নির্ধারিত হবে। সাংবিধানিক পদে আসীন কাউকে অপসারণ করার ক্ষমতা প্রধানমন্ত্রীর থাকবে না।
৭০ অনুচ্ছেদের কঠোরতা খর্ব করতে হবে। সংসদ সদস্যগণ দল বদল করলে তথা অন্য কোনো রাজনৈতিক দলে যোগ দিলে বা দলের প্রাথমিক সদস্যপদ থেকে পদত্যাগ করলে বা অব্যাহতি দেয়া হলে তার সাংসদ পদ শুন্য হবে। আস্থা ভোটে দলের বিপরীতে ভোট দেয়া যাবে না। অন্য যেকোনো বিষয়ে তিনি স্বাধীন থাকবেন, দলের বিরুদ্ধে ভোট দিতে পারবেন।
নাগরিক কমিটি আরও প্রস্তাব করেছে, সরকারের মেয়াদ হবে ৪ বছর।
প্রধানমন্ত্রী বা মন্ত্রীসভার যাবতীয় সিদ্ধান্ত রদ করা বা চ্যালেঞ্জ করার ক্ষমতা সংসদীয় দলের থাকবে। প্রধানমন্ত্রী হবেন সম ব্যক্তিদের মাঝে প্রথম তথা প্রধানমন্ত্রী ক্রমবিচারে প্রথম হবেন; ক্ষমতা বিচারে নয় । মন্ত্রীসভার সদস্যদের প্রধানমন্ত্রী চয়ন করবেন। তবে সংসদের তাতে অনুমোদন নিতে হবে। প্রধানমন্ত্রী মন্ত্রীদের দপ্তর বন্টন করবেন এবং রদবদল করতে পারবেন। তবে অপসারণ করতে হলে সংসদের অনুমোদন নিতে হবে।
সংসদীয় কমিটির ক্ষমতা বাড়াতে হবে। মন্ত্রীসভার যাবতীয় সিদ্ধান্ত সংসদীয় কমিটি চ্যালেঞ্জ করতে পারবে। শুনানি এবং সুপারিশের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত আইনসভায় পাঠাবে মন্ত্রীসভা। সুপারিশ আইনসভায় ভোটাভুটির মুখোমুখি
হবে।
প্রধানমন্ত্রী জরুরি অবস্থা ঘোষণা করতে রাষ্ট্রপতিকে পরামর্শ দেওয়ার অধিকারী হবেন। তবে তা পালন করা রাষ্ট্রপতির জন্য আবশ্যকীয় হবে না। আইনসভাই কেবল সিদ্ধান্ত নেবে। তবে জরুরি আইন/আদেশ সর্বোচ্চ আদালতের কাছে পাঠাতে হবে। আদালত আইনটির সাংবিধানিকতা/অসাংবিধানিকতা সম্পর্কে রায় দেবেন।
প্রধানমন্ত্রী প্রতিরক্ষা ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সমন্বয়ে গঠিত বাহিনীগুলার রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা কাউন্সিলের প্রধান হবেন। কোনো বাহিনীই সরাসরি তার অধীন থাকবে না। প্রতিরক্ষা বা স্বরাষ্ট্র কোন মন্ত্রণালয়ই প্রধানমন্ত্রী নিজে প্রধান হিসেবে থাকতে পারবে না। বাহিনীর 'চেইন অব কমান্ড' আইন ও বিধি দ্বারা সঙ্গত থাকবে। চেইন অব কমান্ডে হস্তক্ষেপ হবে অবৈধ। তবে যেকোনো কার্যের সঠিকতা সম্পর্কে জবাবদিহি থাকবে।
কোনো আদালতই প্রধানমন্ত্রীকে অপসারণে রায় ঘোষণা করতে পারবেন না। কেবল সংসদ কর্তৃক আস্থাভোটই হবে তাকে অপসারণের বৈধ উপায়।
সাংবিধানিক পদে নিয়োগের ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রী যেন একক কর্তৃত্ব ভোগ না করেন, সেই ব্যবস্থা করতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী পরবর্তীতে রাষ্ট্রপতি পদে নির্বাচন করতে পারবেন। প্রধানমন্ত্রী নিম্নকক্ষের প্রধান থাকবেন এবং যে কোনো পলিসি তৈরির মাধ্যমে জনগণের কল্যাণে রাষ্ট্রের কাজ করবেন। নির্বাহী বিভাগ পরিচালনা করবেন প্রধানমন্ত্রী। তবে নিয়োগের ক্ষমতা থাকবে না প্রধানমন্ত্রীর হাতে। যেকোনো নিয়োগ প্রদান করবে উচ্চকক্ষ। নিম্নকক্ষ বা প্রধানমন্ত্রীর কোনো অনুমতি লাগবে না।
সংসদ (পার্লামেন্ট)
জাতীয় নাগরিক কমিটি প্রস্তাব করেছে, সংসদ বা পার্লামেন্ট হবে দ্বি-কক্ষ বিশিষ্ট। উচ্চকক্ষের নাম হবে জাতীয় পরিষদ এবং নিম্নকক্ষের নাম হবে আইনসভা।
সংসদ (পার্লামেন্ট) হবে জনগণের সার্বভৌম ক্ষমতার রক্ষক। এটি দ্বি-কক্ষ বিশিষ্ট হবে। উচ্চকক্ষ জাতীয় পরিষদ এবং নিম্নকক্ষ আইনসভা নামে পরিচিত হবে। উচ্চকক্ষ রাষ্ট্রপতির অধীনে; নিম্নকক্ষ প্রধানমন্ত্রীর অধীনে থাকবে। উচ্চকক্ষের সদস্যদের নিয়ে কিছু সংসদীয় কমিটি হবে, এই কমিটি নিম্নকক্ষের কাজ তদারকি করবে এবং গণশুনানি করতে পারবে। উচ্চকক্ষ পরপর তিনবার কোনো আইন পাশ না করলে তা গণভোটে যাবে। উচ্চকক্ষ ও নিম্নকক্ষ উভয়ের মেয়াদ ৪ বছর হবে।
জাতীয় পরিষদে ১০০ আসন থাকবে। নির্বাচন হবে সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতিতে। আইনসভায় ৩০০ টি আসন থাকবে। জাতীয় পরিষদের ১০০ আসনের মধ্যে কমপক্ষে ৩৩ টি আসনে পেশাজীবী-কৃষক-শ্রমিক-ছাত্র-আইনজীবী- চিকিৎসক-প্রকৌশলী-কৃষিবিদ-সাংবাদিকসহ আইনদ্বারা তফসিলভুক্ত পেশা এবং পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর মানুষকে মনোনয়ন দিতে হবে।
আইনসভায় ৩০০ আসনে সরাসরি প্রার্থিরা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন। সংরক্ষিত আসন রাখা যেতে পারে। রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী নির্বাচনে দুই কক্ষের সভা একসঙ্গে বসবে।
উভয়কক্ষে পৃথকভাবে পাশ হবার পরই কেবল আইন প্রণয়ন হবে। উভয় কক্ষের সমন্বয়ে সর্বদলীয় সংসদীয় কমিটি গঠন করা হবে। সংসদীয় কমিটি মন্ত্রণালয়ের যেকোনো সিদ্ধান্ত চ্যালেঞ্জ করে তা সংসদের বিবেচনায় পেশ করতে পারবে।
সকল সাংবিধানিক পদ ও মন্ত্রীসভা সদস্য নিয়োগের পূর্বে তাকে জাতীয় পরিষদের শুনানিতে বাধ্যতামূলক উপস্থিত হতে হবে। ফলাফল অসন্তোষজনক হলে তাকে নিয়োগ করা যাবে না। আইনসভা ও জাতীয় পরিষদের সদস্য এবং তাদের পরিবারের সম্পদের হিসাব বছরে দুইবার জনগণের সামনে হাজির করতে হবে। সম্পদ বৃদ্ধি বৈধ উপায়ে ও যৌক্তিকভাবে হয়েছে কি না তা দুর্নীতি দমন কমিশন নির্ধারণ করবে।
সংসদ নেতা
জাতীয় নাগরিক কমিটি আরও প্রস্তাব করেছে, প্রধানমন্ত্রী, সংসদ নেতা এবং রাজনৈতিক দলের প্রধান ভিন্ন ভিন্ন ব্যক্তি হবেন। সংসদের জরুরি বৈঠক আহ্বানে রাষ্ট্রপতিকে প্রধানমন্ত্রী ছাড়াও সংসদ নেতা পরামর্শদানের অধিকারী হবেন। সংসদীয় দলের বৈঠকে তিনি সভাপতিত্ব করবেন। নির্বাচনী মেনিফেস্টো লঙ্ঘন হলে তিনি তা সংসদে উত্থাপন করবেন।
সংসদীয় কমিটি গঠনে নিজ সংসদীয় দলের পক্ষে তিনিই প্রস্তাব আনবেন এবং সংসদ তা চূড়ান্ত করবে।
বিরোধী দলীয় নেতা
বিরোধী দলীয় নেতা ছায়া-মন্ত্রীসভা গঠনের অধিকারী হবেন। সংসদীয় কমিটিগুলোকে সরকারের নীতির সমালোচনা প্রেরণ করবেন।
বিচার বিভাগ
স্বাধীন বিচার বিভাগ গঠন করতে হবে। সুপ্রীম জুডিশিয়াল কাউন্সিল গঠন করতে হবে। সুপ্রীম জুডিশিয়াল কাউন্সিল গঠিত হবে প্রধান বিচারপতি, বর্তমান আপীল বিভাগের ২ জন সর্বজ্যেষ্ঠ বিচারপতি, বর্তমান হাইকোর্ট বিভাগের ২ জন সর্বজ্যেষ্ঠ বিচারপতি। যার একজন আইনজীবী থেকে বিচারপতি হিসাবে নিয়োগপ্রাপ্ত সর্বজ্যেষ্ঠ, অপরজন হবেন অধস্তন আদালতের বিচারক থেকে বিচারপতি হিসাবে নিয়োগপ্রাপ্ত সর্বজ্যেষ্ঠ।
বিচারক নিয়োগে রাষ্ট্রপতির কাছে পরামর্শ প্রধান বিচারপতি পাঠাবেন না। পাঠাবে সুপ্রীম জুডিশিয়াল কাউন্সিল। বিচারক নিয়োগে সুনির্দিষ্ট নীতিমালা থাকতে হবে। আপিল বিভাগের সকল বিচারপতিকে নিয়োগের আগে পার্লামেন্টারি শুনানির মুখোমুখি হতে হবে। বেঞ্চ গঠন ক্ষমতাও সুপ্রীম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের হাতে থাকবে।
বিচার বিভাগের জন্য প্রধান বিচারপতির অধীনে আলাদা সচিবালয় থাকতে হবে।
কোনো বিচারকের বিরুদ্ধে চাকরিতে থাকাবস্থায় এবং অবসরকালীন কেবল বিচার সংশ্লিষ্ট ব্যাপারে কোনো ফৌজদারি অভিযোগের তদন্ত সুপ্রীম জুডিশিয়াল কাউন্সিল করবে। অন্য কেউই নয়।
সংবিধানের সংশোধনীসহ যেকোনো বিধান বা অনুচ্ছেদকে চ্যালেঞ্জ করে যেকোনো আইনী প্রক্রিয়া সুপ্রীম কোর্টের বৃহত্তর বেঞ্চে শুরু হবে। এই বেঞ্চ কেবল এই ধরণের শুনানির জন্যই গঠিত হবে। এতে প্রধান বিচারপতিসহ দুইয়ের অধিক বিচারপতিদের বেঞ্চ বসবে।
সুপ্রীম জুডিশিয়াল কাউন্সিল আপীল বিভাগের এক-তৃতীয়াংশ জ্যেষ্ঠ বিচারপতি এবং প্রধান ন্যায়পাল ও স্পীকারের সমন্বয়ে গঠিত হবে। অধস্তন আদালতের ওপর কর্তৃত্ব এবং বিচারক নিয়োগ সুপ্রীম কোর্টের তত্ত্বাবধায়নে হবে। অধস্তন আদালতের বিচারক পদায়ন বা বদলি সংক্রান্ত সব নিয়ন্ত্রণ প্রধান বিচারপতির হাতে থাকবে। উপজেলা পর্যায় পর্যন্ত আদালত স্থাপিত হতে হবে।
প্রতি বিভাগে হাইকোর্টের বেঞ্চ থাকবে। অ্যাপিলেট ডিভিশন বলে আলাদা কিছু থাকবে না। 'সুপ্রীম কোর্ট' নামে একক একটি কোর্ট থাকবে, যা অ্যাপিলেট ডিভিশন হিসাবে কাজ করবে।
প্রধান ন্যায়পাল
জাতীয় নাগরিক কমিটি বলছে, রাষ্ট্রের একজন প্রধান ন্যায়পাল এবং আইনের দ্বারা নির্ধারিত আরও সংখ্যক ন্যায়পাল থাকবেন।
সরকারি ও তার অধীন কর্মবিভাগসমূহ ছাড়াও রিপাবলিকের সীমানায় অবস্থিত সকল সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান আইনানুগ ও বিধি সম্মতভাবে কর্মপ্রক্রিয়া সম্পাদন করছেন কিনা তা ন্যায়পাল তদন্ত/নিরীক্ষণ করবেন। প্রয়োজনীয় আইন-বিধি প্রণয়নে সংসদ ও রাষ্ট্রপতির কাছে প্রস্তাব পাঠাতে পারবেন।
প্রধান ন্যায়পাল ও ন্যায়পালের অপসারণ/অভিশংসন হবে জাতীয় পরিষদে। প্রধান ন্যায়পাল কেবল জাতীয় পরিষদ ও তার অধীন কমিটিসমূহের কাছে জবাবদিহি করবেন।
মহা হিসাব নিরীক্ষক জাতীয় পরিষদ রিপোর্ট পেশ করবেন। হিসাব নিরীক্ষকদের যে কোনো সময় উচ্চ কক্ষের কমিটি তলব করে শুনানি করতে পারবে।
মৌলিক অধিকার
বিদ্যমান সংবিধান মৌলিক অধিকারের নিশ্চয়তা দেয় না, হরণ করে মাত্র। শর্ত সাপেক্ষে যৌক্তিক বাধা নিষেধ ইত্যাদি উঠিয়ে দিয়ে মৌলিক অধিকারকে নিরঙ্কুশ করতে হবে।
স্থানীয় সরকার
স্থানীয় শাসন নয়, আইনসভার প্রভাবমুক্ত স্থানীয় সরকার ব্যবস্থা প্রয়োজন। দলীয় প্রতীকে নির্বাচন আয়োজন বন্ধ করতে হবে। সংসদ সদস্যরা স্রেফ আইন প্রণয়ন করবেন। স্থানীয় উন্নয়ন কর্মকাণ্ড স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা করবেন। সকল স্থানীয় নির্বাচনে অনুর্ধ্ব ৩০ বছর বয়সীদের জন্য নতুন পদ সৃষ্টি করে তাদেরকে নির্বাচনে প্রতিযোগিতা করার ব্যবস্থা করে দিতে হবে।
জাতীয় নির্বাচন
নির্বাচন কমিশনের স্বাধীন সচিবালয় থাকবে। এর জন্য নির্বাচনকালীন বাজেট বরাদ্দ হবে। কমিশনার নিয়োগে নীতিমালা থাকবে। কমিশনারদেরকে উচ্চকক্ষে পাবলিক হিয়ারিংয়ের মুখোমুখি হওয়ার পর নিয়োগ দেওয়া হবে।
রাষ্ট্রকে সরকারের নির্বাহী বিভাগের হস্তক্ষেপের বাইরে আনা গেলে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থার আর প্রয়োজন হয় না। তবে আগামী দুই নির্বাচন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে হতে পারে।
জাতীয় নির্বাচনের সময় সরকার শুধুমাত্র আনুষ্ঠানিক কাজ পরিচালনা করবে, কোনো সিদ্ধান্ত ও আইন প্রণয়ন ইত্যাদি করতে পারবে না। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়সহ নিরাপত্তা বাহিনী এবং প্রশাসন নির্বাচনের আগের তিন মাস নির্বাচন কমিশনের অধীনে চলে আসবে।
সব পোলিং এজেন্টের উপস্থিতিতে ভোট গণনা করা হবে। রেজাল্ট শিটে সকল পোলিং অফিসার ও প্রার্থীর এজেন্টদের স্বাক্ষর থাকতে হবে।
ভোটাধিকারপ্রাপ্ত যেকোনো নাগরিক জাতীয় নির্বাচনে প্রার্থী হতে পারবে। প্রবাসীদের ভোট দেয়ার বিধান চালু করতে হবে।