মঙ্গলবার,

২৬ নভেম্বর ২০২৪,

১২ অগ্রাহায়ণ ১৪৩১

মঙ্গলবার,

২৬ নভেম্বর ২০২৪,

১২ অগ্রাহায়ণ ১৪৩১

Radio Today News

আন্দোলনের মিত্রদের কণ্ঠে কেন এত তাড়াতাড়ি অনৈক্যের সুর: এবি পার্টি

রেডিওটুডে রিপোর্ট

প্রকাশিত: ১৭:৪৩, ২৬ নভেম্বর ২০২৪

আপডেট: ১৭:৪৫, ২৬ নভেম্বর ২০২৪

Google News
আন্দোলনের মিত্রদের কণ্ঠে কেন এত তাড়াতাড়ি অনৈক্যের সুর: এবি পার্টি

মাত্র তিন মাস আগেও যেসকল ছাত্র একতাবদ্ধ হয়ে ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে জীবন বাজি রেখে লড়াই করেছেন, ঢাল হয়ে একে অপরের জীবন রক্ষা করেছেন, তারা কেন আজ হিংসা হানাহানিতে লিপ্ত হয়ে পরস্পরের রক্ত ঝরাচ্ছেন? কেন রাজপথে নেমে প্রতিদিন সহিংস আন্দোলন করতে হচ্ছে অধিকার বঞ্চিতদের? আন্দোলনের মিত্রদের কণ্ঠে কেন এত তাড়াতাড়ি অনৈক্য ও বিভক্তির সূর।

সোমবার এক সংবাদ সম্মেলনে এসব প্রশ্ন তুলে আমার বাংলাদেশ পার্টির (এবি পার্টি) সদস্যসচিব মজিবুর রহমান মঞ্জু বলেন; গত কয়েকমাসের সংঘাত, সংঘর্ষ, অস্থিরতা ও গণ অভ্যুত্থানের মিত্রদের বিভক্তির দায় অন্তর্বর্তী সরকার কোনোভাবেই এড়াতে পারে না। সরকারকে অবিলম্বে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করে এ ধরনের পরিস্থিতি থেকে উদ্ধার ও দেশবাসীর উদ্বেগ দূর করার আহ্বান জানান তিনি।

ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে উত্তেজনাকর সংঘাতময় পরিস্থিতিতে উদ্বেগ ও শান্তি রক্ষায় করণীয় প্রসঙ্গে এবি পার্টি আহুত ‘জরুরি সংবাদ সম্মেলন’ থেকে আজ এসকল কথা বলা হয়।

বিকাল সাড়ে তিনটায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি মিলনায়তনে এই সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এতে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন দলের আহ্বায়ক প্রফেসর ডা. মেজর (অব.) আব্দুল ওহাব মিনার।

সংবাদ সম্মেলনে প্রদত্ত বক্তব্যে মঞ্জু আরও বলেন; হাজারো ছাত্র-জনতার জীবনের বিনিময়ে একটি সফল গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে গঠিত এই সরকার আন্দোলনে সম্পৃক্ত সব পক্ষের ঐক্য রক্ষার ব্যপারে শুরু থেকেই উদাসীন। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে সব শ্রেণি-পেশার মানুষের উদ্বেগ তারা আমলে নিচ্ছেন না। আহত সংগ্রামীরাসহ প্রতিদিন রাজপথে নেমে আসতে হচ্ছে অধিকারের দাবিতে নানা শ্রেণি পেশার মানুষকে। অথচ সরকারের পক্ষ থেকে একটা ভালো সমন্বয় টিম তৈরি করে এসকল আন্দোলন ও দাবি দাওয়া টেবিলে বসেই সমাধান করা যেত। বিভিন্ন জায়গায় চাঁদাবাজি, দখল দারিত্বের যে অভিযোগ তার কোন সঠিক সুরাহা হচ্ছে না।

তুচ্ছ কারণে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর ছাত্রদের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের বিষয়ে হতাশা প্রকাশ করে তিনি বলেন; গোয়েন্দা ও আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর গাফেলতি এখানে অত্যান্ত সুস্পষ্ট। অহিংস গণঅভ্যুত্থানের জনসমাগমের বিষয়ে ভুল বোঝাবুঝিও সরকার আগাম ব্যবস্থা নিলে সমাধান করা যেতো। কয়েকটি জাতীয় পত্রিকার অতীত ভূমিকা নিয়ে সংক্ষুব্ধদের বিষয়টিকেও আলাপ আলোচনার মাধ্যমে নিরসন সম্ভব হতো বলে তিনি মত প্রকাশ করেন।

তিনি আরও বলেন, গত ১৫ বছরের চরম নৈরাজ্যবাদী শাসনের অবসানের পর দেশবাসী আশা করেছিলেন, সব জায়গায় ধীরে ধীরে শান্তি ফিরবে। কিন্তু পতিত ফ্যাসিবাদের মদদপুষ্ট ষড়যন্ত্রকারীরা দেশে অরাজকতা তৈরির জন্য বারবার চেষ্টা চালাচ্ছে। সরকার সে ষড়যন্ত্রের বিষয়ে কোনো আগাম পদক্ষেপ নিতে তো পারছেই না বরং কখনও কখনও নিজের মিত্র শক্তিদের দূরে সরিয়ে তাদেরকে ষড়যন্ত্রকারীদের দোসর বলে দায় এড়াতে চাচ্ছে।

সংবাদ সম্মেলনে আইন শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে সরকারের নীতির সমলোচনা করে বলা হয়, রাষ্ট্র শাসনে কোমলতা বলে কিছু নেই বরং ন্যায় ও ইনসাফের জন্য যথার্থতার নীতি অনুসরণই কাম্য। সর্বাত্মক জনসমর্থন, বিপ্লবের স্পিরিট, প্রভূত ক্ষমতা ও কর্তৃত্ব পাওয়া সত্বেও ড. ইউনূসের মতো শান্তির জন্য নোবেল পুরস্কার পাওয়া জননন্দিত ব্যক্তিত্ব যদি দেশে শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে না পারেন তাহলে তা হবে খুবই দুঃখজনক। এবি পার্টির পক্ষ থেকে সরকারের দিকে তাকিয়ে না থেকে গণঅভ্যুত্থানের অংশীদার সকল পক্ষকে অস্থিরতা পরিহার করে ধৈর্য ও সহনশীলতার ভিত্তিতে একটি সমঝোতা সনদ তৈরির প্রস্তাব উত্থাপন করা হয়। শিগগির তারা বৈষম্যবিরোধী সকল ছাত্র-জনতাকে নিয়ে ‘গণঅভ্যুত্থান সনদ’ তৈরির পদক্ষেপ নেবেন বলে ঘোষণা দেন।

সংঘাত, অস্থিরতা ও আন্দোলনের মিত্রদের বিভক্তির দায় সরকার এড়াতে পারে না: এবি পার্টি

সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তরে মেজর মিনার বলেন, কোনো কোনো দলের নরম সুর, ভেজা কোমল দরদ মাখা মায়াবী বক্তব্য আমাদের হতাশ করে। এগুলো আমরা নিতে পারি না। জুলাই আগস্ট বিপ্লবের আকাঙ্ক্ষা এটা ছিল না যে পালিয়ে যাওয়া ফ্যাসিস্ট হাসিনা গত ষোল বছরে দেশে কোনো সুষ্ঠ নির্বাচন দেয়নি তাকেই নির্বাচনে আনতে হবে। এখন দেশে যে অরাজকতা চলছে তা সব পতিত সরকারের দুষ্কর্ম। বিশেষ‌ রাজনৈতিক দলের সুশীলতার সুযোগ নিয়ে হাসপাতাল কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় সব ভেঙেচুরে শেষ করে ফেলছে। ছাত্র নামধারী এরা কারা? আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের সামনেই এইসব যখন হয় তখন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টাদের দায়িত্ব নিয়েই সাধারণ মানুষ প্রশ্ন তুলবে। দেশকে স্থিতিশীল রাখতে যা করণীয় তাই আপনারা করবেন।

তিনি বলেন, ‘ক্ষমতায় থাকাকালীন ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা সরকার বাক স্বাধীনতা ভোটাধিকার হরণ করে, গুম খুন করে, চুরি ডাকাতি লুট করে ব্যাংক খালি করে লাখো কোটি টাকা বিদেশে পাচার করে দেশকে যেমন ফোকলা করে ফেলেছিল এখনো সে তার সন্ত্রাসী বাহিনী দিয়ে দেশকে অস্থিতিশীল করে দেশের অগ্রগতিকে রুখে দিতে যাচ্ছে।’

তিনি আরও বলেন, কিন্তু দেশের মানুষ দীর্ঘ স্বৈরশাসনের জুলুমের শিকার হওয়ার কারণে পতিত শেখ হাসিনাকে আর সেই সুযোগ দেবে না। তাদের মনে রাখতে হবে যে তারা যত বেশি খোঁচাখুঁচি করবে, উঁকিঝুঁকি দেবে দেশের আপামর জনসাধারণ- রাজনৈতিক দলগুলো তত বেশি ঐক্যবদ্ধ হবে।

সংবাদ সম্মেলনে নেতৃবৃন্দের মধ্যে আরও উপস্থিত ছিলেন দলের যুগ্ম আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট গোলাম ফারুক, সিনিয়র সহকারী সদস্যসচিব এবিএম খালিদ হাসান, আমিনুল ইসলাম এফসিএ, মহানগর উত্তরের আহবায়ক আলতাফ হোসাইন, যুবপার্টির আহবায়ক শাহাদাতুল্লাহ টুটুল, সহকারী সদস্য সচিব শাহ আব্দুর রহমান, সিদ্দিকুর রহমান, ঢাকা মহানগর দক্ষিণের যুগ্ম আহবায়ক গাজী নাসির, মহানগর উত্তরের সদস্যসচিব সেলিম খান কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুলতানা রাজিয়া, শাহিনুর আক্তার শীলা, আমেনা বেগম, সুমাইয়া শারমিন ফারহানাসহ কেন্দ্রীয় ও মহানগরীর বিভিন্ন পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ।

রেডিওটুডে নিউজ/আনাম

সর্বশেষ

সর্বাধিক সবার কাছের