
জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তনিও গুতেরেস বৃহস্পতিবার (১৩ মার্চ) চার দিনের সফরে বাংলাদেশে আসছেন। সফরের পরদিন শুক্রবার (১৪ মার্চ) প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস ও আন্তোনিও গুতেরেস কক্সবাজারের উখিয়ায় রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবির পরিদর্শনে যাবেন। সফরটি রোহিঙ্গাদের মধ্যে নতুন আশার সঞ্চার করছে। এটি মিয়ানমারে তাদের নিরাপদ প্রত্যাবাসনের দাবি জানানোর গুরুত্বপূর্ণ সুযোগ বলে মনে করছেন অনেক রোহিঙ্গা।
এ সফরে সম্প্রতি বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (ডব্লিউএফপি) কর্তৃক রোহিঙ্গাদের খাদ্য সহায়তা হ্রাসের বিষয়টিও আলোচনায় আসবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। শরণার্থী শিবিরগুলোতে যা মানবিক সংকট আরও বাড়িয়ে তুলেছে।
গুতেরেস এর আগেও রোহিঙ্গা শিবির পরিদর্শন করেছেন—সর্বশেষ ২০১৮ সালে তিনি সেখানে যান। তবে প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে এটি ড. মুহাম্মদ ইউনূসের রোহিঙ্গা ক্যাম্পে প্রথম সফর।
আরাকান রোহিঙ্গা সোসাইটি ফর পিস অ্যান্ড হিউম্যান রাইটসের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ জুবায়ের সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, ‘জাতিসংঘ মহাসচিবের সফরের খবর পেয়ে রোহিঙ্গারা উচ্ছ্বসিত। আমরা তার কাছে জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে টেকসই প্রত্যাবাসন ও রাখাইনে নিরাপদ অঞ্চল প্রতিষ্ঠার দাবি জানাব। পাশাপাশি, খাদ্য সহায়তা কমে যাওয়ার নেতিবাচক প্রভাব সম্পর্কেও আলোচনা করব।’
শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মোহাম্মদ মিজানুর রহমান গণমাধ্যমকে জানান, ‘শুক্রবার সকাল সাড়ে ১১টার দিকে গুতেরেস উখিয়া শরণার্থী শিবিরে পৌঁছাবেন। সেখানে জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা (ইউএনএইচসিআর), ডব্লিউএফপি, আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা (আইওএম) ও অন্যান্য মানবিক সংস্থার প্রতিনিধিরা তাকে শিবিরের সার্বিক পরিস্থিতি সম্পর্কে জানাবেন।’
এরপর গুতেরেস রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের নেতা, যুব প্রতিনিধি ও নারীদের সঙ্গে তিনটি পৃথক বৈঠকে অংশ নেবেন। ওই দিন বিকেলে তিনি কুতুপালং শরণার্থী শিবিরে ধর্মীয় নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করবেন। সফরের শেষ পর্বে প্রায় এক লাখের বেশি রোহিঙ্গার সঙ্গে গণ-ইফতার অনুষ্ঠানে অংশ নেবেন মহাসচিব ও প্রধান উপদেষ্টা।
উখিয়ার ক্যাম্প-৪ এর বাসিন্দা হোসেন জোহান বলেন, ‘জাতিসংঘ মহাসচিব ক্যাম্পে আসছেন শুনে আমি আনন্দিত। আমি তাকে আমাদের দুর্ভোগ ও কষ্টের কথা জানাতে চাই।’
লম্বাশিয়া ক্যাম্প-১ এর বাসিন্দা মো. তায়েব বলেন, ‘আমরা আমাদের বাড়িতে ফিরতে চাই। কিন্তু মিয়ানমারের রাখাইনে আমাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা না হলে তা সম্ভব নয়। জাতিসংঘ যদি নিরাপত্তার নিশ্চয়তা দেয়, তাহলে আমরা সঙ্গে সঙ্গেই দেশে ফিরে যেতে প্রস্তুত। কারণ, এই দেশ আমাদের নয়।’
কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ট্রাফিক) মো. জসিম উদ্দিন চৌধুরী সংবাদ মাধ্যমকে জানান, সফরকালীন ক্যাম্পের নিরাপত্তা ব্যবস্থা সেনাবাহিনী তদারকি করছে। কক্সবাজার বিমানবন্দর থেকে শরণার্থী শিবির পর্যন্ত কঠোর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কাজ করছে।
রেডিওটুডে নিউজ/আনাম