
বিশ্বে যেসব দেশে সবচেয়ে বেশি শিশুবিয়ে রয়েছে, সেসব দেশের মধ্যে বাংলাদেশ অষ্টম অবস্থানে রয়েছে এবং এশিয়ায় শিশুবিয়ের হার সবচেয়ে বেশি এখানে। বাংলাদেশের ২০-২৪ বছর বয়সী নারীদের মধ্যে ৫১.৪ শতাংশের বিয়ে হয়েছে ১৮ বছর বয়সের আগে।
ইউনিসেফ, ইউএন উইমেন এবং প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল-এর যৌথ উদ্যোগে আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষে প্রকাশিত ‘গার্ল গোলস: হোয়াট হ্যাজ চেঞ্জড ফর গার্লস? অ্যাডলেসেন্ট গার্লস রাইটস ওভার ৩০ ইয়ার্স’ শীর্ষক প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে। প্রতিবেদনটি ১৯৯৫ সালের বেইজিং ঘোষণা অনুযায়ী ৩০ বছরের অঙ্গীকার বাস্তবায়নে দেশগুলোর অগ্রগতির পর্যালোচনা করে।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, বাংলাদেশে শিশুবিয়ের ফলে মেয়েরা স্থায়ী দারিদ্র্যের শৃঙ্খলে আটকা পড়ে, তাদের স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে পড়ছে, সম্ভাবনার বিকাশ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে এবং এর ফলে দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
এছাড়া, ২০-২৪ বছর বয়সী নারীদের মধ্যে ২৪ শতাংশ নারী ১৮ বছর পূর্ণ হওয়ার আগেই সন্তান জন্ম দিচ্ছেন। ১৫-১৯ বছর বয়সী কিশোরী মেয়েদের মধ্যে ২৮ শতাংশ বিগত ১২ মাসে শারীরিক বা যৌন সহিংসতার শিকার হয়েছেন, আর ১৫-১৯ বছর বয়সী বিবাহিত কিশোরীদের মধ্যে মাত্র ৪৭ শতাংশই প্রজনন স্বাস্থ্য সম্পর্কে সচেতন সিদ্ধান্ত নিতে পারে।
শিক্ষা ও সুযোগের অভাবে লড়াই করছে। বাংলাদেশে কিশোরী কন্যাশিশুদের মাধ্যমিক শিক্ষা সম্পন্নের হার ৫৯.২২ শতাংশ, এবং ডিজিটাল দক্ষতার ক্ষেত্রে তারা যথেষ্ট পিছিয়ে রয়েছে।
ইউনিসেফ প্রতিনিধি রানা ফ্লাওয়ার্স বলেছেন, বাংলাদেশের কিশোরী মেয়েরা এক অপার সম্ভাবনার বাংলাদেশ গড়ে তুলতে চায়, কিন্তু বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতা ও বৈষম্য তাদের এগিয়ে যেতে বাধা সৃষ্টি করছে। আমাদের উচিত তাদের জন্য জীবন দক্ষতা ও ডিজিটাল শিক্ষা নিশ্চিত করা, শিশুবিয়ে এবং কন্যাশিশুদের ওপর সহিংসতা মোকাবিলা করা।
ইউএন উইমেনের প্রতিনিধি গীতাঞ্জলি সিং বলেছেন, বাংলাদেশে এখনও অনেক কন্যাশিশু স্কুলে যেতে পারে না, তারা সহিংসতার ঝুঁকিতে রয়েছে। তাদের ক্ষমতায়ন ও নেতৃত্বের দক্ষতা তৈরির জন্য বিনিয়োগ করা উচিত।
বিশ্বজুড়ে ১৫ বছর বয়সী কিশোরীদের স্বাস্থ্য ও কল্যাণে ইতিবাচক পরিবর্তন হলেও, কিশোরী মেয়েদের জন্য আরও বিনিয়োগ ও নীতির পরিবর্তন প্রয়োজন। ২০৩০ সালের এসডিজি লক্ষ্য অর্জনের জন্য এগিয়ে আসতে হবে।
বাংলাদেশে ইউনিসেফ ২০২৩-২৪ সালে সফলভাবে এইচপিভি টিকা ক্যাম্পেইন পরিচালনা করেছে, যাতে লাখ লাখ কন্যাশিশুর স্বাস্থ্য সুরক্ষিত হয়েছে। তবে, শিক্ষা ও ডিজিটাল দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য আরও প্রচেষ্টা প্রয়োজন।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, বিনিয়োগ করলে কিশোরী মেয়েরা শুধু নিজেদের জন্যই নয়, তাদের কমিউনিটি এবং দেশেও উপকারে আসবে। কিন্তু সঠিক বিনিয়োগের অভাবে ১৫-২৪ বছর বয়সী কিশোরী মেয়েরা এখনও অনেক ক্ষেত্রে পিছিয়ে রয়েছে।
এদিকে, বিশেষভাবে উদ্বেগ জানানো হয়েছে যে, কোনো দেশই কিশোরী বয়সী মেয়েদের উন্নয়নের জন্য এসডিজি লক্ষ্যগুলোর অর্ধেকও পূর্ণ করতে পারেনি এবং ২০৩০ সালে এসডিজি এজেন্ডা অর্জনের জন্য এখন থেকেই গুরুত্ব আরোপ করা প্রয়োজন।