বুধবার,

১৫ জানুয়ারি ২০২৫,

২ মাঘ ১৪৩১

বুধবার,

১৫ জানুয়ারি ২০২৫,

২ মাঘ ১৪৩১

Radio Today News

সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদনের ভিত্তিতে হবে নতুন বাংলাদেশের চার্টার

রেডিওটুডে রিপোর্ট

প্রকাশিত: ১৫:২১, ১৫ জানুয়ারি ২০২৫

আপডেট: ১৫:২৪, ১৫ জানুয়ারি ২০২৫

Google News
সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদনের ভিত্তিতে হবে নতুন বাংলাদেশের চার্টার

বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে একটি নতুন যুগের সূচনা হতে যাচ্ছে, যেখানে সংস্কার কমিশনগুলোর প্রতিবেদন জনগণের মতৈক্যের ভিত্তিতে একটি নতুন সংবিধান এবং রাজনৈতিক কাঠামোর রূপ নিয়ে আসবে। বুধবার (১৫ জানুয়ারি) তেজগাঁওয়ে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস সংস্কার কমিশনের সদস্যদের কাছ থেকে ওই প্রতিবেদনগুলো গ্রহণকালে একথা জানান। তিনি বলেন, 'এই প্রতিবেদনগুলো শুধু আনুষ্ঠানিক নয়, এটি একটি ঐতিহাসিক মুহূর্ত, যা আমাদের জাতির ভবিষ্যৎ গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।'

ড. ইউনূস আরও বলেন, 'এই প্রতিবেদনগুলোর মাধ্যমে আমরা যেটি গঠন করতে চাচ্ছি, তা হল—গণঅভ্যুত্থানের একটি চার্টার, যা নতুন বাংলাদেশের পথপ্রদর্শক হিসেবে কাজ করবে। এটি হবে মতৈক্যের ভিত্তিতে, এবং এই চার্টার থেকে সরে যাওয়ার কোন সুযোগ থাকবে না। নির্বাচন হবে, সবকিছু হবে, তবে এটি মেনে চলতে হবে।'

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, 'আমরা যে নতুন বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখছি, সেই স্বপ্নের রূপরেখা তৈরি করতে আপনাদের হাতে এই কাজ দিয়েছিলাম। আজকের এই প্রতিবেদনগুলি সেই স্বপ্নের বাস্তবায়নের প্রথম পদক্ষেপ। এটি শেষ নয়, বরং একটি নতুন অধ্যায়ের শুরু।'

কমিশনগুলোর প্রতিবেদন হস্তান্তরের সময় উপস্থিত ছিলেন নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের প্রধান বদিউল আলম মজুমদার, দুদক সংস্কার কমিশনের প্রধান ইফতেখারুজ্জামান, পুলিশ সংস্কার কমিশনের প্রধান সফর রাজ হোসেন এবং সংবিধান সংস্কার কমিশনের প্রধান আলী রীয়াজ। প্রধান উপদেষ্টা কমিশনের সদস্যদের উদ্দেশে বলেন, 'এটা একটি বড় চর্চা, যা দেশ ও জাতির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আপনি সকলেই যে চমৎকার কাজ করেছেন, তা জাতি সেদিনই অনুধাবন করবে।'

প্রধান উপদেষ্টা তার বক্তব্যে আরও বলেন, 'আজকের এই আনুষ্ঠানিকতা শুধুমাত্র একটি চুক্তি বা প্রতিবেদন হস্তান্তর নয়, এটি বাংলাদেশের ইতিহাসের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ। আমাদের দেশ ধ্বংসপ্রাপ্ত থেকে পুনরুত্থিত হয়েছে এবং এই কমিশনগুলোর কাজ সেই পুনরুত্থানের সাফল্যের অংশ।'

এসময় তিনি আরও জানান, 'আজ আমরা যে প্রতিবেদনগুলো হাতে নিয়েছি, তা আমাদের দেশের জন্য এক নতুন চর্চার সূচনা করবে। এটি আমাদের জাতীয় প্রয়োজনে প্রয়োজনীয় একটি প্রতিফলন। কোনোভাবেই এই প্রতিবেদনকে ছোট করে দেখা উচিত নয়।'

প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস আরও বলেন, 'এই প্রতিবেদনগুলো প্রকাশের মাধ্যমে আমরা সেই আলোচনা শুরু করতে যাচ্ছি, যা দেশের সব মানুষের মতৈক্য নিয়ে একটি নতুন রাজনৈতিক কাঠামো প্রতিষ্ঠা করবে। এটি কোনো দলের না, বরং বাংলাদেশের জনগণের একটি সনদ হিসেবে কাজ করবে। এটি হবে একটি জাতীয় কমিটমেন্ট, যা দলীয় অঙ্গীকারের বাইরে গিয়ে, সবার ঐক্যমত্যের ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত হবে।'

তিনি উল্লেখ করেন, 'এটা একটি বাংলাদেশি সনদ, যা বাঙালি জাতির সংগ্রামের সাফল্যকে সামনে রেখে তৈরি হবে। আমরা আশা করি, সকল রাজনৈতিক দল এতে স্বাক্ষর করবে এবং একযোগে এই চার্টার বাস্তবায়নের জন্য কাজ করবে।'

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, 'যত দ্রুত সম্ভব, আমরা এই চার্টার বাস্তবায়ন করতে চাই। ভবিষ্যতে যে নির্বাচন হবে, তা এই চার্টারের ভিত্তিতেই অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচন হবে ঐকমত্যের ভিত্তিতে, যাতে নিশ্চিত করা যায় যে, সরকার গঠন হবে জনগণের সর্বসম্মত সিদ্ধান্তে। এই চার্টারটি যতদিন না বাস্তবায়িত হবে, ততদিন এটি আমাদের জাতির অগ্রগতির মূল ভিত্তি হিসেবে থাকবেই।'

তিনি আরও বলেন, 'এই চার্টার যদি বাস্তবায়ন হয়, তবে আমরা সেই স্বপ্নের ধারাবাহিকতা দেখতে পাবো, যা আমাদের জাতির উন্নয়ন এবং কল্যাণের পথে এগিয়ে নেবে। এটি শুধু একটি রাজনৈতিক পরিকল্পনা নয়, এটি একটি জাতির আত্মপ্রকাশের নির্দেশনা।'

ড. ইউনূস বলেন, 'এই চার্টারের মাধ্যমে আমরা গঠন করতে চাই একটি ঐতিহাসিক দলিল, যা দেশের সকল জনগণের প্রতিনিধিত্ব করবে এবং তাদের প্রত্যাশা অনুযায়ী দেশের ভবিষ্যৎ নির্মাণ করবে।'

প্রধান উপদেষ্টা শেষে বলেন, 'এটাই আমাদের স্বপ্ন, আমাদের সংগ্রামের নতুন অধ্যায়। আমরা আশা করছি, এটি দেশের উন্নয়ন ও ভবিষ্যৎ পথনির্দেশে একটি নির্ধারক ভূমিকা পালন করবে।'

রেডিওটুডে নিউজ/আনাম

সর্বশেষ

সর্বাধিক সবার কাছের