
গ্যাস সংকটে ঢাকা শহরের অধিকাংশ বাসাবাড়িতেই ঠিকমতো চুলা জ্বলছে না। পাশাপাশি কলকারখানা, সিএনজি স্টেশন, হোটেল-রেস্তোরাঁ, বিদ্যুৎকেন্দ্রসহ সব খাতেই ভয়াবহ সংকট চলছে। পেট্রোবাংলা কর্তৃপক্ষ বলছে, রক্ষণাবেক্ষণ ও মেরামতের জন্য একটি এলএনজি টার্মিনাল বন্ধ থাকায় গ্যাস সরবরাহ কমেছে। তবে আজ রোববার থেকে সরবরাহ পরিস্থিতির উন্নতি হতে পারে।
খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, সেগুনবাগিচা, শান্তিনগর, রামপুরা, আজিমপুর, উত্তরা, বনশ্রী, ধানমিন্ড, শংকর, বাসাবো, পুরান ঢাকা, মিরপুর, নাখালপাড়া, ফার্মগেট, আগারগাঁও, কলাবাগান, খিলগাঁও, যাত্রাবাড়ী, মোহাম্মদপুরসহ ঢাকার অধিকাংশ এলাকার বসতবাড়িতেই গ্যাস সংকট চলছে। বিকল্প হিসেবে সিলিন্ডার কিংবা বৈদ্যুতিক চুলার ব্যবহার বাড়ছে।
মালিবাগের বাসিন্দা ফারজানা ইয়াসমিন জানান, দিনে গ্যাসের চাপ কম থাকায় রাতেই পরের দিনের সব রান্না শেষ করতে হয়। এর পর ভোরে উঠে তাড়াতাড়ি রাতের রান্না গরম করতে হয়। কারণ, সকাল ৭টার পরই চুলা জ্বলে না। লাইনে গ্যাস সরবরাহ প্রায় নাই হয়ে যায়। এই গ্যাস আসে বিকেল ৩-৪টার দিকে। কিছুক্ষণ থেকে ফের চলে যায়, আসে রাত ১০টার দিকে। কিন্তু গত তিন দিন ধরে রাতেও গ্যাস থাকছে না। ইলেকট্রিক চুলায় রান্না করতে হচ্ছে।
শুধু বাসাবাড়িতেই নয়, সংকট চলছে বিদ্যুৎ উৎপাদনেও। বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোতে ৭৫ কোটি ঘনফুট গ্যাস দেওয়া হচ্ছে। স্বাভাবিক সময়ে এর পরিমাণ ছিল ৮৫ কোটি ঘনফুট। গ্যাস ঘাটতিতে বিদ্যুৎ উৎপাদন কমে গেছে। ফলে এই শীতেও অনেক এলাকায় লোডশেডিং হয়েছে বলে জানা গেছে।
গ্যাস সংকটে দুর্ভোগের কথা জানিয়ে রাজধানীর পল্লবীর বাসিন্দা রেজিনা খাতুন বলেন, ‘বৃহস্পতিবার (২ ডিসেম্বর) সকাল ৭টায় গ্যাস নাই হয়ে যায়। সন্ধ্যায় ছিল দেড় ঘণ্টা। শুক্রবার সকাল ৭টায় উঠে আধা ঘণ্টায় কোনো রকমে তিন কাপ চা করা গেছে। তার পর থেকে গ্যাস হাওয়া! গত কয়েক দিন ধরে গ্যাসের এমনই অবস্থা, রান্না করাই মুশকিল হয়ে গেছে।’
দেশে দৈনিক গ্যাসের চাহিদা ৪২০ কোটি ঘনফুট। পেট্রোবাংলা দিনে সরবরাহ করে ২৮৫ কোটি ঘনফুট। অর্থাৎ, ঘাটতির পরিমাণ ১৩৫ কোটি ঘনফুট। কক্সবাজারের মহেশখালীতে বঙ্গোপসাগরে ভাসমান দুটি টার্মিনালের মধ্যে মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণ কাজের জন্য একটি থেকে টানা তিন দিন (গতকাল পর্যন্ত) এলএনজি সরবরাহ বন্ধ ছিল। এতে গ্যাস সংকট আরও বেড়ে যায়। তিন দিন ধরে ৩৫ কোটি ঘনফুট সরবরাহ কমেছে। শনিবার ২৫০ কোটি ঘনফুট গ্যাস দিয়েছে পেট্রোবাংলা।
জানতে চাইলে শনিবার সন্ধ্যায় তিতাস গ্যাসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শাহনেওয়াজ পারভেজ বলেন, ঘাটতির মধ্যেই একটি টার্মিনাল বন্ধ থাকায় সংকট আরও বেড়ে গেছে। তবে শনিবার টার্মিনালটি চালু হওয়ায় গ্যাস সরবরাহ ধীরে ধীরে বাড়ছে। রাতেই মধ্যেই এলএনজি সরবরাহ স্বাভাবিক হবে।
রূপান্তরিত প্রাকৃতিক গ্যাস কোম্পানির (আরপিজিসিএল) মহাব্যবস্থাপক (এলএনজি) শাহ আলম বলেন, শনিবার সকালে এলএনজি টার্মিনালটি চালু হয়েছে। সন্ধ্যা পর্যন্ত ৮০ কোটি ঘনফুট এলএনজি সরবরাহ হয়েছে।
রেডিওটুডে নিউজ/আনাম