কয়েকটি দেশ থেকে ১৬ হাজার ৭৩৫ কোটি টাকার জ্বালানি তেল আমদানি করবে সরকার। এর মধ্যে ৬ হাজার ২৫ কোটি টাকার অপরিশোধিত এবং ১০ হাজার ৭১০ কোটি টাকার পরিশোধিত জ্বালানি তেল কেনা হবে। এ-সংক্রান্ত দুই প্রস্তাবসহ ভোজ্যতেল, ডাল ও সার আমদানিতে আরও কয়েকটি প্রস্তাবের অনুমোদন দিয়েছে সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটি।
গতকাল বুধবার সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সম্মেলন কক্ষে অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদের সভাপতিত্বে কমিটির বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকের বিষয়ে অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে দেওয়া এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, সৌদি অ্যারাবিয়ান অয়েল কোম্পানি থেকে ২০২৫ সালের জন্য সাত লাখ টন অ্যারাবিয়ান লাইট ক্রুড (এএলসি) গ্রেডের অপরিশোধিত জ্বালানি তেল আমদানি করা হবে। এতে ব্যয় হবে ৬ হাজার ২৫ কোটি ২০ লাখ ৬০ হাজার টাকা।
এ ছাড়া ২০২৫ সালের জানুয়ারি-জুন সময়ে আন্তর্জাতিক কোটেশন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ১০ হাজার ৭১০ কোটি ১৬ লাখ ৪০ হাজার টাকার পরিশোধিত জ্বালানি তেল আমদানি করা হবে। তবে কী পরিমাণ তেল কেনা হবে, তার উল্লেখ করা হয়নি। সিঙ্গাপুরের ইউনিপেক সিঙ্গাপুর প্রাইভেট লিমিটেড, ভিটল এশিয়া প্রাইভেট লিমিটেড এবং দুবাইয়ের ওকিউ ট্রেডিং থেকে পরিশোধিত তেল আমদানি করা হবে।
বৈঠকে সরকারি বিপণন সংস্থা টিসিবির মাধ্যমে সাশ্রয়ী মূল্যে বিক্রির জন্য প্রায় দেড় কোটি লিটার পাম অয়েল ও সয়াবিন তেল কেনার সিদ্ধান্ত হয়েছে। এর মধ্যে ৩৮ লাখ ১০ হাজার লিটার সয়াবিন ও ১ কোটি ১০ লাখ লিটার পাম অয়েল কেনা হবে। এতে ব্যয় হবে ১৯৬ কোটি ৩৪ লাখ টাকা।
প্রতি লিটার সয়াবিন ১৪০ টাকা ও পাম অয়েল ১৩০ টাকা দরে এস আলম সুপার এডিবল অয়েলের কাছ থেকে সরাসরি ক্রয়পদ্ধতিতে কেনা হবে। প্রতি কেজি ৯৫ টাকা ৯৭ পয়সা দরে ১০ হাজার টন মসুর ডাল কেনা হবে রাজশাহীর নাবিল নবা ফুডস থেকে। এতে ব্যয় হবে ৯৫ কোটি ৯৭ লাখ টাকা। বিতর্কিত এস আলম গ্রুপের প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে সরাসরি ক্রয়পদ্ধতিতে তেল কেনার বিষয়ে জানতে চাইলে নাম না প্রকাশের শর্তে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা সমকালকে বলেন, টিসিবির কার্যক্রম অব্যাহত রাখতে জরুরি ভিত্তিতে এসব তেল কেনা হচ্ছে। তা ছাড়া প্রতিষ্ঠানটির কাছ থেকে বাজারদরের চেয়ে অনেক কম দামে পাওয়া গেছে।
সিঙ্গাপুরের কোম্পানি ভিটল এশিয়া থেকে এক কার্গো বা ৩৩ লাখ ৬০ হাজার এমএমবিটিইউ এলএনজি আমদানির প্রস্তাব অনুমোদিত হয়েছে। আগামী ৪ থেকে ৫ জানুয়ারির মধ্যে যা সরবরাহের কথা রয়েছে। প্রতি ইউনিট (এমএমবিটিইউ) ১৫ দশমিক শূন্য ২ ডলার হিসাবে মোট খরচ হবে ৭০৮ কোটি ৫৫ লাখ ৯৪ হাজার ৮৮০ টাকা। এ ছাড়া সৌদি আরব, রাশিয়া ও মরক্কো থেকে ১ লাখ ৩০ হাজার টন সার আমদানির সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এর মধ্যে ৩০ হাজার টন বাল্ক গ্র্যানুলার (অপশনাল) ইউরিয়া সার, ৩০ হাজার টন এমওপি সার, ৪০ হাজার টন ডিএপি সার ও ৩০ হাজার টন টিএসপি সার রয়েছে। এসব সার কিনতে ব্যয় হবে ৬৬০ কোটি ৭৬ লাখ ৮৮ হাজার টাকা।
বৈঠক শেষে অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ঘন ঘন ক্রয় কমিটির বৈঠক করে অত্যাবশ্যকীয় বা জরুরি পণ্য কিনতে দ্রুত সময়ে অনুমোদন দেওয়া হচ্ছে। এটা প্রমাণ করে, এই সরকার মোটামুটি কর্মব্যস্ত এবং মানুষের সুবিধা দেখছে। দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির বিষয়ে একজন সাংবাদিকের প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, সরকারের নেওয়া পদক্ষেপের প্রভাব বাজারে একেবারেই পড়েনি, এমন নয়। শুধু আলুর দাম বেড়েছে দেখলে হবে না। কিছু পণ্যের দাম ইতোমধ্যে কমেছে। একসঙ্গে প্রতিটি পণ্যের দাম কমানো কঠিন। স্বাভাবিকভাবেই কোনোটির দাম বেশি হবে, কোনোটির কমবে।
রেডিওটুডে নিউজ/আনাম