শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে পালিয়ে ভারতে আশ্রয় নেওয়ার পর থেকে দেশটির সঙ্গে বাংলাদেশের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কে কিছুটা টানাপড়েনের সৃষ্টি হয়েছে। ভারতের উগ্র হিন্দুত্ববাদীরা আগরতলায় বাংলাদেশের হাইকমিশনে হামলা পর্যন্ত করেছে। এই অবস্থায় দুদেশের সম্পর্ক স্বাভাবিক করতে আজ বাংলাদেশ সফরে এসেছেন ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিক্রম মিশ্রি।
তার সঙ্গে বৈঠকে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে নাক না গলানোর বিষয়ে বলেছেন বাংলাদেশের পররাষ্ট্র সচিব জসিম উদ্দিন। তিনি বলেন, ‘আমরা কারও অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করি না, কিংবা নাক গলাই না। তাই তাদের বলা হয়েছে, অন্যদের হস্তক্ষেপ আমরা চাই না।’
বাংলাদেশের পররাষ্ট্র সচিব জানান, ভারতে বসে শেখ হাসিনার বক্তব্য বাংলাদেশ যে পছন্দ করছে না তা ভারতকে জানানো হয়েছে।
জসিম উদ্দিন বলেন, ভারতে অবস্থিত মিশনগুলোর নিরাপত্তা জোরদারের বিষয়ে বলা হলে তারা নিরাপত্তা জোরদার করতে চেয়েছে।
তিনি বলেন, ‘আমরা স্বীকার করছি, দুই দেশেই একটি অবিশ্বাসের জায়গা তৈরি হয়েছে। সেই ঘাটতিটা দূর করার জন্যই আজকের বৈঠক। কারো মনের মধ্যে যেন সংশয় না থাকে তাই আমরা খোলা বইয়ের মতো নিজেদের অবস্থান পরিষ্কার রেখেছি।’
শেখ হাসিনাকে ফিরিয়ে আনা বিষয়ে তিনি বলেন, ‘তাকে ফিরিয়ে আনার বিষয় রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের দরকার। আমরা সে নির্দেশনা এখনো পায়নি।’
ভারতে অপপ্রচারের বিষয়ে পররাষ্ট্র সচিব বলেন, ‘আমরা বলেছি, আমাদের দেশে আসলেই সংখ্যালঘুর ওপরে হামলা হচ্ছে কি না তা তারা এসে দেখুক। আমরা আমাদের অবস্থান জেরালোভাবে বলেছি। আমার প্রত্যাশা আজকের বৈঠকের পর ভুলবোঝাবুঝির সমাধান হবে।’
তিনি আরও জানান, দুদেশের মধ্যের বিবাদমান বিষয়গুলো দ্রুত সম্পন্ন করার তাগিদ দেওয়া হয়েছে। ভারতীয় গণমাধ্যমে অপপ্রচারের বিষয়ে কথা হয়। এগুলো বন্ধ করার আহ্বান জানানো হয়েছে।
‘সীমান্ত শান্ত রাখতে ভারত সরকারের সহয়তার কথা বলা হয়। তিস্তা চুক্তির বিষয়ে জোর দেওয়া হয়েছে। বন্যা প্রতিরোধের বিষয়েও কথা হয়েছে বলে জানান পররাষ্ট্র সচিব জসিম উদ্দিন।
ভারতের বক্তব্য
বৈঠক শেষে ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিক্রম মিশ্রি বলেন, ‘বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে ভারত গভীরভাবে কাজ করতে আগ্রহী।’ দুই দেশের সম্পর্কও ইতিবাচক ও গঠনমূলক দিকে যাবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।
ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বলেন, ‘জসীম উদ্দিনের আমন্ত্রণে আমি ঢাকায় এসেছি। অত্যন্ত গুরত্বপূর্ণ দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের মুহূর্তে আমি ঢাকায় এসেছি, বাংলাদেশ এবং ভারতের মধ্যে আলোচনা এগিয়ে নেওয়ার জন্য। এ বছর আগস্টে বাংলাদেশে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পরে আমাদের উভয় দেশের নেতৃবৃন্দের মধ্যে প্রথম কথা হয়েছে। তাদের মধ্যে টেলিফোন আলাপ হয়েছে। নিউইয়র্কে দুই দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী পযায়ে বৈঠক হয়েছে। আমরা এই সফর তারই অংশ।’
তিনি আরও বলেন, ‘নতুন সরকারের সঙ্গে এটা প্রথম ফরেন সচিব মিটিং। আজকের এই আলোচনা আমাদের উভয়পক্ষকে এই সুযোগটা করে দিয়েছে। আমাদের মধ্যে খোলামেলা ও গঠনমূলক মতবিনিময় হয়েছে। আমাদের আকাঙ্ক্ষা হলো—ইতিবাচক, গঠনমূলক এবং পারস্পরিক ও লাভজনক সম্পর্ক, যেটা বাংলাদেশ এবং ভারতের মধ্যে আমরা অতীতে দেখেছি এবং আমরা ভবিষ্যতেও এটা দেখতে চাই।’
বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক উভয় দেশের মানুষকেন্দ্রিক হবে জানিয়ে মিশ্রি বলেন, ‘এই সম্পর্ক হবে মানুষকেন্দ্রিক। এটা উভয় দেশের জনগণের উপকারে আসবে এবং এর প্রতিফলন আমাদের প্রাত্যহিক ঘটনার মধ্যে পাচ্ছি। যার মধ্যে আমাদের ব্যবসা-বাণিজ্য থেকে শুরু করে বিদ্যুৎ, পানি, জ্বালানি, উন্নয়ন সহযোগিতা, কনস্যুলার সহযোগিতা এবং সাংস্কৃতিক যোগাযোগ রয়েছে। এই বিষয়গুলোর ওপর আমাদের কাজ চালিয়ে যেতে হবে।’
অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে ভারতের সম্পর্কে আকাঙ্ক্ষার কথা তুলে ধরে ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বলেন, ‘ভারতের আকাঙ্ক্ষা হলো—অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে গভীরভাবে কাজ করা। একইসঙ্গে আমরা সাম্প্রতিক ঘটে যাওয়া ঘটনাবলি আলোচনা করেছি। সংখ্যালঘু ইস্যুতে আমি আমাদের উদ্বেগের কথা জানিয়েছি। সংখ্যালঘুর বিষয় নিয়ে আমাদের মধ্যে আলোচনা হয়েছে। বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষ বলেছে, বিষয়টি দেখবে।’
বিক্রম মিশ্রি আরও বলেন, ‘সাম্প্রতিক সময়ে আমাদের দুই দেশের মধ্যে কিছু দুঃখজনক ঘটনা ঘটেছে, সেগুলো নিয়েও আমরা আলোচনা করেছি। ধর্মীয়, সাংস্কৃতিক এবং কূটনৈতিক বিষয়ে আক্রমণের বিষয়ে আমরা আলোচনা করেছি। আমরা সার্বিকভাবে উভয়পক্ষের মধ্যে গঠনমূলক মনোভাব চাই। আমরা অপেক্ষায় আছি, আমাদের সম্পর্ক একটা ইতিবাচক এবং গঠনমূলক সম্পর্কের দিকে এগিয়ে যাবে।’