শুরু হয়েছে বিজয়ের মাস ডিসেম্বর। একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে লাখো শহীদ ও বীর মুক্তিযোদ্ধার আত্মত্যাগের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীনতার এই মাস জাতির কাছে চিরস্মরণীয়। একাত্তরের ডিসেম্বরে স্বাধীন জাতি হিসেবে বিশ্বে আত্মপরিচয় লাভ করে বাঙালি। অর্জন করে নিজস্ব ভূখণ্ড, আর সবুজের বুকে লাল সূর্যখচিত নিজস্ব জাতীয় পতাকা। ভাষার ভিত্তিতে যে জাতীয়তাবাদ গড়ে উঠেছিল, এক রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পর বিজয়ের মাধ্যমে ঘোষিত স্বাধীনতা পূর্ণতা পায় ১৬ই ডিসেম্বর। ভাষার ভিত্তিতে যে জাতীয়তাবাদ গড়ে উঠেছিল, এক রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পর বিজয়ের মাধ্যমে ঘোষিত স্বাধীনতা পূর্ণতা পায় এ দিনে।
৩০ লাখ শহীদ আর ২ লাখ মা-বোনের সম্ভ্রমহানির বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীনতার সাক্ষর বিজয়ের মাস নানান অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে উদযাপিত হবে। বিজয়ের মাসে সেসব লাখো শহীদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানাবে বাঙালি জাতি। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন, জাতীয় নাগরিক কমিটি, বিএনপি, জামায়াত থেকে শুরু করে প্রতিটি রাজনৈতিক দলই মাসব্যাপী বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করবে বলে জানা গেছে।
মাসজুড়ে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে বিজয়ের ৫৩তম বার্ষিকী উপলক্ষে নানা কর্মসূচি পালিত হবে। স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ, আলোচনা সভা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও মেলার মাধ্যমে এই মাসে দেশবাসী মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে নতুন প্রজন্মের মধ্যে ছড়িয়ে দেওয়ার উদ্যোগ নেবে। এ উপলক্ষে অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে বিস্তারিত কর্মসূচি হাতে নেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সামাজিক সংগঠন পৃথক কর্মসূচি পালন করবে।
বাংলাদেশের সুদীর্ঘ রাজনৈতিক ইতিহাসে শ্রেষ্ঠ ঘটনা হলো ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধ। সশস্ত্র স্বাধীনতা সংগ্রামের এক ঐতিহাসিক ঘটনার মধ্য দিয়ে বাঙালি জাতির হাজার বছরের সামাজিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক স্বপ্ন সাধ পূরণ হয় এ মাসেই।
১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণা হয়। বাঙালি জাতি হাজার বছরের শৃঙ্খল থেকে মুক্তির লক্ষ্যে দীর্ঘ লড়াই-সংগ্রাম চালিয়ে আসে। আন্দোলন-সংগ্রামের ধারাবাহিকতায় ব্রিটিশ শাসন, শোষণ ও নির্যাতন থেকে মুক্তির পর পাকিস্তানের ঔপনিবেশিক শাসন, শোষণ, নির্যাতনের বিরুদ্ধে গড়ে ওঠা আন্দোলনই এক পর্যায়ে স্বাধীনতা সংগ্রামে রূপ নেয়।
স্বাধীনতার জন্য ধারাবাহিকভাবে চলে আসা এই আন্দোলন-সংগ্রাম ১৯৭১ এর মার্চে এসে স্ফুলিঙ্গে রূপ নেয়। স্বাধীনতার আন্দোলনকে স্তব্ধ করতে ভেতরে ভেতরে প্রস্তুতি নিতে থাকে পাকিস্তানি জান্তারা। ২৫ মার্চ রাতে পাকিস্তানি সামরিক বাহিনী বর্বরোচিতভাবে বাংলাদেশের নিরীহ মানুষের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। এর পরই ২৬ মার্চে স্বাধীনতার ঘোষণা হয়। শুরু হয় পাকিস্তানি সামরিক বাহিনীর বর্বরতায় বাঙালি নিধন অভিযান।
তবে পাকিস্তানের এই বর্বরতার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ায় বাংলার সর্বস্তরের মানুষ। হাতে তুলে নেয় অস্ত্র, শুরু হয় রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধ। দীর্ঘ ৯ মাস পাকিস্তানি বাহিনীর বিরুদ্ধে চলে বাঙালির মরণপণ যুদ্ধ। বীরত্বপূর্ণ মুক্তিযুদ্ধের এক পর্যায়ে বাঙালি বিজয়ের দিকে ধাবিত হতে থাকে। ডিসেম্বর মাসে মুক্তিযুদ্ধ চুড়ান্ত বিজয়ের দ্বারপ্রান্তে এসে পৌঁছায়। এক পর্যায়ে বাঙালির বীরত্বের কাছে পরাজয় স্বীকার করতে বাধ্য হয় আধুনিক অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত পাকিস্তানের সামরিক বাহিনী। বাংলাদেশের পক্ষে আন্তর্জাতিক জনমত জোরালো হয়ে ওঠে।
অবশেষে ১৬ ডিসেম্বর ঢাকার ঐতিহাসিক রেসকোর্স ময়দানে পাকিস্তানি বাহিনী আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য হয়।
বাঙালির হাজার বছরের স্বপ্নপূরণ হওয়ার পাশাপাশি বহু তরতাজা প্রাণ বিসর্জন আর মা-বোনের সম্ভ্রমের বিনিময়ে এই অর্জন হওয়ায় বেদনাবিধূর এক শোকগাঁথার মাসও এই ডিসেম্বর।
স্বাধীনতার ইতিহাস ও অর্জনকে স্মরণ করে এই বিজয়ের মাসে দেশের জনগণ মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে জাতীয় উন্নয়ন ও অগ্রগতিতে শপথ নেবে।
রেডিওটুডে নিউজ/আনাম