বৃহস্পতিবার,

২৬ ডিসেম্বর ২০২৪,

১২ পৌষ ১৪৩১

বৃহস্পতিবার,

২৬ ডিসেম্বর ২০২৪,

১২ পৌষ ১৪৩১

Radio Today News

‘যেসব নির্বাচন কমিশনার নির্বাচনি অপরাধে জড়িত ছিলেন তাদের বিচারের আওতায় আনতে হবে’

রেডিওটুডে রিপোর্ট

প্রকাশিত: ১৪:৫৫, ২৯ নভেম্বর ২০২৪

আপডেট: ১৪:৫৬, ২৯ নভেম্বর ২০২৪

Google News
‘যেসব নির্বাচন কমিশনার নির্বাচনি অপরাধে জড়িত ছিলেন তাদের বিচারের আওতায় আনতে হবে’

নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের প্রধান ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেছেন, বিগত তিনটি বিতর্কিত নির্বাচনে যারা নির্বাচনি অপরাধ করেছে, তাদের সবাইকে বিচারের আওতায় আনতে হবে। প্রজাতন্ত্রের যেসব কর্মচারী নির্বাচনি অপরাধ করেছে তাদের বিচারের জন্য সুস্পষ্ট আইন রয়েছে। তবে শপথ ভঙ্গ করে যেসব নির্বাচন কমিশনার নির্বাচনি অপরাধে জড়িত ছিলেন তাদের বিচার কোন প্রক্রিয়ায় হবে তা নির্ধারণ করা উচিত। 

শুক্রবার (২৯ নভেম্বর) রাজধানীর এফডিসিতে সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য নির্বাচন কমিশন, প্রার্থী ও নাগরিকের ভূমিকা নিয়ে আয়োজিত ছায়া সংসদে তিনি এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানটি আয়োজন করে ডিবেট ফর ডেমোক্রেসি। সভাপতিত্ব করেন ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ। 

বদিউল আলম মজুমদার বলেন, ‘নির্বচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশন আগামী ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে সরকারের কাছে প্রতিবেদন জমা দেবে। এই প্রতিবেদনের আলোকে অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর ঐক্যমতের ভিত্তিতে নির্বাচনি রোডম্যাপ ঘোষণা করা যেতে পারে। নির্বাচন কবে হবে তা নিয়ে ভবিষ্যদ্বাণী করা এই মুহূর্তে সম্ভব নয়। তবে নিবার্চন সংশ্লিষ্ট অন্যান্য জরুরি সংস্কারের বিষয়টিও বিবেচনায় নিতে হবে এবং সংস্কারের জন্য যৌক্তিক সময় দেওয়া উচিত। সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বার্থে ভোটার তালিকা সংশোধন ও হালনাগাদ করা জরুরি।’ 

তিনি বলেন, ‘জাতীয় পরিচয়পত্রকে ভিত্তি করে ভোটার তালিকা হালনাগাদ করা যেতে পারে। অনর্ভুক্তিমূলক নির্বাচনের স্বার্থে দৃশ্যমান ও অদৃশ্যমান মনোনয়ন বাণিজ্য বন্ধের উপায় বের করতে হবে। আগামী নির্বাচনে কমিশনের ওপর কোনো রাজনৈতিক চাপ থাকবে না, তাই কমিশন একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন করবে বলে আশা করা যায়।’

সভাপতির বক্তব্যে ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ বলেন, ‘যত দ্রুত সম্ভব প্রয়োজনীয় সংস্কার শেষে নির্বাচন আয়োজন করা অন্তর্বতীর্কালীন সরকারের প্রধান দায়িত্ব। যদিও অন্তর্বতীর্কালীন সরকার প্রধান জাতির উদ্দেশে ভাষণে বলেছেন, নির্বাচনের ট্রেন যাত্রা শুরু করেছে, এটা আর থামবে না। কিন্তু এই ট্রেন শেষ স্টেশনে কখন পৌঁছাবে তা জনগণ জানতে পারলে ভালো হয়। বর্তমান সরকারের বিবেচনায় নেওয়া উচিত নির্বাচন বিলম্বিত হলে ফ্যাসিস্ট সরকারের দোসররা দেশে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করার শঙ্কা রয়েছে। এ জন্য নির্বাচনি ট্রেনের যাত্রা শুরু হওয়ার পাশাপাশি সরকারকে নির্বাচনি রোডম্যাপ ঘোষণা করে যৌক্তিক সময়ের মধ্যে নির্বাচিত সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তরের প্রক্রিয়া শুরু করা উচিত। স্থানীয় সরকার নির্বাচন আগে না জাতীয় নির্বাচন আগে এই ধরনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করার পূর্বে প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর মতামত গ্রহণ করা জরুরি। সরকারের পক্ষ থেকে ভোটার তালিকা হালনাগাদ করার কথা বলা হচ্ছে। এতে বেশ সময় লাগতে পারে। তবে এনআইডি হাল নাগাদ থাকলে পৃথক ভোটার তালিকার প্রয়োজন আছে কি না তা ভেবে দেখতে হবে। এসব নানামুখী জল্পনা-কল্পনার মধ্যে জাতীয় নির্বাচন কবে অনুষ্ঠিত হবে তা কিন্তু এখনো স্পষ্ট নয়।’
 
তিনি আরও বলেন, ‘রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে অন্তর্বতীর্কালীন সরকারের দূরত্ব বাড়লে সরকারের জনপ্রিয়তা হ্রাস পেতে পারে। অন্যদিকে রাজনৈতিক দলগুলোকেও জুলাই বিপ্লবে যারা শহীদ হয়ে স্বৈরাচারের পতন ঘটিয়েছে, তাদের আশা আকাঙ্ক্ষার প্রতি শ্রদ্ধাশীল হতে হবে। শুধু নির্বাচন দিলেই সকল সমস্যার সমাধান হবে না। এখনো বাংলাদেশকে বিপদে ফেলতে দেশি-বিদেশি শক্তি তাদের অপচেষ্টা অব্যাহত রেখেছে। সংখ্যালঘু ধমীর্য় কার্ড ব্যবহার অব্যাহত রেখেছে এই সব অপশক্তিরা। তবে আওয়ামী লীগ সরকার যেভাবে দেশকে ধ্বংস করে গুলি করে মানুষ হত্যা করেছে তাদের বাংলাদেশের মানুষ অতি সহজে গ্রহণ করবে বলে মনে হয় না। তাই আওয়ামী লীগের ভবিষ্যৎ রাজনীতি অন্ধকার। এই দেশে জনগণের ভোটের অধিকার কেড়ে নিয়েছিল পতিত সরকার। বাংলাদেশে শতভাগ ভোট পেয়েও নির্বাচিত হওয়ার নজির রয়েছে। মৃত ব্যক্তিদের ভোট প্রদানের ঘটনাও ঘটেছে। পতিত সরকারের অধীনে রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় বাকশালী কায়দায় একতরফা নির্বাচন হয়েছিল। আমি আর ডামি, দিনের ভোট রাতে ও একতরফা নির্বাচন করে আওয়ামী লীগ এ দেশে নির্বাচন ব্যবস্থাকে ধ্বংস করেছে। বন্দুকের নলে নিবার্চন কালে যুদ্ধকালীন পরিস্থিতি সৃষ্টি করে ছিল। যাতে ভিন্ন মতের কেউ নির্বাচনের মাঠে আসতে না পারে। বিগত কয়েকটি নির্বাচনে ভোটকক্ষে ডাকাত ছিল। রাষ্ট্রীয় পৃষ্টপোষকতায় ডাকাতরা নিজের ইচ্ছা মতো সিল মেরে পতিত সরকারের পক্ষে ভোটের বাক্স ভরেছে। তাই গত তিনটি নির্বাচনে ভোট ডাকাতদের সহযোগিতাকারী নির্বাচন কমিশন, পুলিশ, প্রশাসন, রিটার্নিং অফিসার, পোলিং অফিসারসহ নির্বাচনী অপরাধের সাথে যুক্ত সকল অপরাধীদের বিচারের মুখোমুখি করতে হবে।’ 
 
তিনি বলেন, ‘আগামী জাতীয় নির্বাচন সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য করার লক্ষ্যে ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ নিম্নের ১০ দফা সুপারিশ করেন— (১) নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কারের কাজ শেষ করার পর দ্রুত নির্বাচনী রোডম্যাপ ঘোষণা করা। (২) জাতীয় নির্বাচন বিলম্বিত হলে পতিত সরকার দেশে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করার শঙ্কা রয়েছে। তাই স্থানীয় সরকার নয়, জাতীয় নির্বাচন আয়োজনের মাধ্যমে জনগণের সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তরের প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা। (৩) নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের পক্ষ থেকে বিগত কয়েকটি নির্বাচনের যেসব কমিশন ও প্রশাসনের ব্যক্তিরা নির্বাচনে পক্ষপাতিত্বের অভিযোগে অভিযুক্ত তাদের বিচারের আওতায় আনার লক্ষ্যে সরকারকে গাইডলাইন প্রদান করা। (৪) নির্বাচনে পেশীশক্তি, টাকার ব্যবহার ও নমিনেশন বাণিজ্য বন্ধে করণীয় সম্পর্কে কমিশন সরকারকে দিক নির্দেশনা প্রদান করা। (৫) দুনীর্তিবাজ, অর্থপাচারকারী, ঋণখেলাপিরা যাতে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে না পারে তার উদ্যোগ নেওয়া। (৬) আন্তর্জাতিকভাবে খ্যাতিসম্পন্ন নির্বাচন পর্যবেক্ষণ সংস্থাকে আমাগী নির্বাচন পর্যাবেক্ষণের সুযোগ দেওয়া। (৭) নির্বাচনকালীন সময়ে সন্ত্রাস, ভীতি সঞ্চার, বা অন্য কোনো ধরনের নির্বাচনী অপরাধের সঙ্গে জড়িতদের কঠোর শাস্তির তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেওয়া। (৮) যেসব আইনের দ্বারা নির্বাচনকালীন সময়ে গণমাধ্যম সংবাদ পরিবেশনে বাঁধার সম্মুখীন হতে পারে সে আইন বাতিল করা। (৯) সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের লক্ষ্যে নবগঠিত কমিশনকে রাজনৈতিক দলগুলোসহ নাগরিক সংগঠনের সাথে এজেন্ডাভিত্তিক সংলাপের আয়োজন করা (১০) নির্বাচন কমিশনকে সকল মতভেদের ঊর্ধ্বে থেকে রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত হয়ে কোন চাপে মাথানত না করা।

রেডিওটুডে নিউজ/আনাম

সর্বশেষ

সর্বাধিক সবার কাছের