সরকারের যেকোনো সমালোচনাকে স্বাগত জানিয়ে সাংবাদিকদের উদ্দেশে তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম বলেছেন, ‘আপনারা নির্ভয়ে সঠিক ও বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ পরিবেশন করুন। সরকার সব ধরনের সহায়তা করবে। কিন্তু ভুল সংবাদ পরিবেশন হলে সেটা সরকারের জন্য এবং দেশের জন্য ক্ষতিকর। আমরা আপনাদের কাছে সহযোগিতা চাই।’
মঙ্গলবার সচিবালয়ে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ে দৈনিক সংবাদপত্রের সম্পাদক ও তাদের প্রতিনিধিদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় এসব কথা বলেন উপদেষ্টা।
সঠিক তথ্যের জন্য সরকার গণমাধ্যমের ওপর নির্ভরশীল উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘জনগণের কাছে সঠিক ও নিরপেক্ষ তথ্য পৌঁছানো না হলে নানা রকম গুজব ছড়ায়। সঠিক তথ্য পৌঁছানোর জন্য সব সরকারই গণমাধ্যমের ওপর নির্ভরশীল। বর্তমান সরকারের সেই নির্ভরশীলতা আরও বেশি। আমরা আশা করব, গণমাধ্যম সঠিক সংবাদ তুলে ধরবে।’
তথ্য উপদেষ্টা বলেন, ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থানে অনেক সাংবাদিক সমর্থন ও সহায়তা করেছেন। তাদের কেউ কেউ এখন তার মিডিয়া হাউসে নানাভাবে হেনস্থার শিকার হচ্ছেন বলে আমাদের কাছে অভিযোগ আসছে। এখানে অনেকে ব্যক্তিগত শত্রুতাকে কাজে লাগাচ্ছেন। এটা শুধু গণমাধ্যম নয় প্রশাসন এবং অন্যান্য ক্ষেত্রেও হচ্ছে। আমরা চাই সাংবাদিকদের অভ্যন্তরীণ বিষয়গুলো সাংবাদিকেরা নিজেরাই সমাধান করুন যাতে সরকারের এখানে হস্তক্ষেপ করতে না হয়।’
তিনি বলেন, ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থানে আহত-নিহত এবং ক্ষতিগ্রস্তদের নিয়ে বেশি বেশি সংবাদ পরিবেশন করুন। সেই সময়ের ঘটনা তুলে ধরুন। এতে বিচার কাজে তথ্য পেতে সহায়ক হবে। আর পতিত স্বৈরশাসকের নানা অনিয়ম দুর্নীতির তথ্য ওই সময় আপনারা প্রকাশ করতে পারেননি। এখন সেগুলো বেশি করে প্রকাশ করুন। বিশেষ করে ৫ থেকে ৮ আগস্ট পর্যন্ত অনেক তথ্য ও নথি গোপন করা হয়েছে। আপনারা সেই বিষযগুলো তুলে ধরুন।’
মতবিনিময় সভায় কালের কণ্ঠের সম্পাদক ও প্রেস ক্লাবের সভাপতি কবি হাসান হাফিজ বলেন, ‘সরকারের দিক থেকে গণমাধ্যমের ওপর কোনো চাপ নেই। এমনকি সামরিক গোয়েন্দাদের পক্ষ থেকেও কোনো চাপ প্রয়োগ হবে না বলে আশ্বস্ত করা হয়েছে। বিটিভির খবর অন্য চ্যানেলে প্রচার বাধ্যতামূলকের বিষয়টি তুলে দিয়ে সরকার ভালো কাজ করেছে। সাংবাদিকদের সঙ্গে আজকের মতো এমন মতবিনিময় নিয়মিত করা হলে এর দ্বারা জাতি উপকৃত হবে।’
হাসান হাফিজ বলেন, ‘এই দুই মাসে সরকার পতনের উদ্দেশে ৭৫টি ষড়যন্ত্র হয়েছে। এগুলো বেশ উদ্বেগজনক। সীমান্তে হত্যাসহ অনেক ঘটনা ঘটেছে। আমাদের বিরুদ্ধে অপপ্রচার হচ্ছে। আমরা কেন তাহলে ভারতীয় চ্যানেলগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছি না।’
সাম্প্রতিক সময়ে তিন দফায় সাংবাদিকদের অ্যাক্রিডিটেশন কার্ড বাতিলের বিষয়টি সরকারকে পুনর্বিবেচনার আহ্বান জানান সম্পাদকেরা। পাশপাশি গণমাধ্যমের নানা সুবিধা-অসুবিধার কথা তুলে ধরেন তারা।
মানবজমিন সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী বলেন, ‘সুনির্দিষ্ট অভিযোগ ছাড়া ঢালাওভাবে সাংবাদিকদের অ্যাক্রিডিটেটশন কার্ড বাতিল ঠিক না। এরই মধ্যে সিপিজে (কমিটি টু প্রটেক্ট জার্নালিষ্টস) বিষয়টি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। আমরাও উদ্বিগ্ন। যাদের কার্ড বাতিল করা হয়েছে তাদের অনেকেই পেশাদার সাংবাদিক। বিষয়টি পুনর্বিবেচনা করা উচিত।’
সমকালের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘বর্তমান সরকারের প্রতি দেশের মানুষের প্রত্যাশা স্বভাবতই অনেক বেশি।’ পত্রিকায় প্রকাশিত সরকারি বিজ্ঞাপনের বিল পরিশোধের সময়টা আরেকটু এগিয়ে আনার কথা বলেন তিনি।
প্রথম আলোর ব্যবস্থাপনা সম্পাদক সাজ্জাদ শরিফ বলেন, ‘আন্দোলনের সময় আমরা যেমন ঐক্যবদ্ধ ছিলাম। সে সময় যারা সত্যের পক্ষে কাজ করেছেন, বস্তুনিষ্ঠ সাংবাদিকতা করেছেন তাদের মাথার ওপরে সবসময় গরম নিশ্বাস ফেলা হয়েছে। প্রশ্ন হচ্ছে আমরা এখন আন্দোলনের সময়কার মতো সাংবাদিকতায়ও ঐক্যবদ্ধ আছি কিনা। সাইবার সিকিউরিটি আইন, অফিসিয়াল সিক্রেসি আইনসহ অনেকগুলো আইন সংশোধন করা দরকার। প্রেস কাউন্সিল ও তথ্য কমিশনে সংস্কার প্রয়োজন।’
ফিনান্সিয়াল এক্সপ্রেসের সম্পাদক শামসুল হক জাহিদ, দেশ রুপান্তরের সম্পাদক মোস্তফা মামুন, দ্য ডেইলি স্টার বাংলার সম্পাদক গোলাম মোর্তজা, ইত্তেফাকের চিফ রিপোর্টার শামসুদ্দিন আহমেদ, বাংলাদেশ সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্টের এমডি এম আব্দুল্লাহ, চলচ্চিত্র ও প্রকাশনা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আবুল কালাম মোহাম্মদ শামসুদ্দিন প্রমুখ বক্তব্য দেন।
নয়া দিগন্তের সম্পাদক আলমগীর মহিউদ্দিন ও সমকালের চিফ রিপোর্টার মসিউর রহমান খানসহ অনেকে উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের সচিব ফারজানা মাহবুব।