আজ মঙ্গলবার সেই ভয়াল ১২ নভেম্বর। ১৯৭০ সালের এ দিনে দেশের উপকূলীয় অঞ্চল সমূহের ওপর দিয়ে বয়ে যায় দেশের ইতিহাসে সব চেয়ে বড় প্রলয়ংকারী ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাস। সেদিনের কথা মনে পড়লে আঁতকে উঠে উপকূলীবাসী ।
স্মরণকালের ভয়াবহতম এ দুর্যোগে উপকূলীয় লক্ষ্মীপুর জেলার রামগতি ও বর্তমান কমলনগর উপজেলায় সৃষ্টি হয় চরম দুর্যোগময় পরিস্থিতির। লন্ডভন্ড হয়ে যায় সব কিছু। মেঘনা নদীর উত্তাল ঢেউয়ের প্রবল স্রোতের টানে ভাসিয়ে নিয়ে যায় হাজার হাজার মানুষ, গবাদি-পশু, ঘর-বাড়ি, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ অনেক গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা ও সম্পদ। বিলীন হয়ে যায় দুই উপজেলার বেড়িবাঁধসহ অনেক জনপদ।
তখনকার প্রত্যক্ষদর্শী নুরুল ইসলাম ভূলু ও আবুল খায়ের বলেন, হঠাৎ ১০ ফুটের একটি জলোচ্ছাস হয়। এর মধ্যে নুরুল ইসলাম ভূলুর তিন আত্বীয়ের খোঁজ এখনো পায়নি। একই কথা বলেন, আবুল খায়েরও। তাদের চোখের সামনে দিয়ে আত্বীয়-স্বজনরা পানির তোড়ে ভেসে যায়। কিন্তু তাদের রক্ষা করতে পারেনি। চারিদিকে লাশ-আর-লাশ, লাশের গন্ধে মানুষ কাছে যেতে পারেনি। জলোচ্ছাসের কারণে মাটি দেয়া যায়নি মৃত মানুষগুলোকে। নদীতে ভাসিয়ে নিয়ে হাজার হাজার মানুষ ও গবাদিপশু। সেই দিনের ভয়াবহ দুযোর্গের কথা মনে পড়লে আজও এলাকার সাধারণ মানুষের মন ও পরিবেশ ভারী হয়ে উঠে। আঁতকে উঠে উপকূলীয় এলাকার মানুষগুলো।
এদিকে লক্ষ্মীপুরে মেঘনার উপকূলীয় এলাকায় পর্যাপ্ত আশ্রয়ণ কেন্দ্র এবং বন্যা নিয়ন্ত্রণের প্রয়োজনীয় বেড়িবাঁধ না থাকায় প্রায় সাড়ে তিন লাখ মানুষ ঝড়-জলোচ্ছ্বাসের মধ্যে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বসবাস করেছে। যে কোন প্রাকৃতিক দুর্যোগের ফলে এসব চরাঞ্চলে ব্যাপক প্রাণহানীসহ ক্ষয়ক্ষতির আশংকা করেছে স্থানীয়রা। রামগতির তলিরচর, বয়ারচর,বড়খেরী, চরআলগী ও কমলনগর উপজেলার চরফলকন, সাহেবেরহাট, চরকালকিনি, পাটওয়ারীহাট ও রায়পুরের চরঘাসিয়া ও চরকাচিয়া এবং সদর উপজেলার চরমেঘাসহ অন্তত ২০টি চরাঞ্চলের প্রায় সাড়ে তিনলাখ মানুষের বসবাস।
কিন্তু নিরাপত্তাহীনতার মধ্যে সব সময় থাকতে হয়। পাশাপাশি পর্যাপ্ত আশ্রয়ণ কেন্দ্র না থাকায় ঘূর্ণিঝড় জলোচ্ছ্বাস ও যে কোন দুর্যোগের সময় বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে মানুষকে আশ্রয় নিতে হয়। সেটাও অনেক কম। আর যেসব আশ্রয়ণ কেন্দ্র রয়েছে সেগুলোর অবস্থায় নাজুক। নেই দরজা-জানাল ও টয়লেট। এতে বসবাসের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। এ জেলায় ১৮৫টি আশ্রয়ণ কেন্দ্র রয়েছে। তা পর্যাপ্ত নয়। আরো আশ্রয়কেন্দ্র ও মাটির কিল্লা করার দাবি উপকূলের ৭লাখ মানুষের।
জেলা প্রশাসক রাজিব কুমার সরকার বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, দূযোর্গপূর্ণ এলাকায় চিহিৃত করে আশ্রয়ণ কেন্দ্র নির্মাণের জন্য উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও ঝড়-জলোচ্ছ্বাসের হাত থেকে বাচঁতে পর্যাপ্ত আশয়ণকেন্দ্র দরকার। আগামীতে সবাই যেন নিরাপদে থাকতে পারে সে ব্যবস্থা করা হবে। খুব শীঘ্র আরো আশ্রয়ণ কেন্দ্র ও মাটি কিল্লা নির্মাণ কাজ শুরু করার আশ্বাস দেন তিনি।
রেডিওটুডে নিউজ/আনাম