সারাদিন পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান না করলে বিভিন্ন ধরনের সমস্যা দেখা দেয়। প্রয়োজনের চেয়ে কম পানি পান করলে পানিশূন্যতা, দুর্বলতা, হজমের সমস্যা, ইউরিন ইনফেকশন ইত্যাদি হয়ে থাকে। সুস্থ থাকতে চিকিৎসকেরা সাধারণত দিনে ৮-১০ গ্লাস পানি পানের পরামর্শ দিয়ে থাকেন। আবার প্রয়োজনের চেয়ে বেশি পানি পান করলেও বিপদ হতে পারে। কেননা, অতিরিক্ত পানি কিডনি ছেঁকে বের করতে পারে না। ফলে কোষে কোষে সেই পানি জমে যায়, যা শরীরের অন্য অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের ক্ষতি করে।
বেশি পানি পান করলে মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা কমে যেতে পারে। এমনকি, প্রয়োজনের অধিক পানি পান করলে কিছু ক্ষেত্রে মৃত্যুর ঝুঁকিও থেকে যায়। চিকিৎসার পরিভাষায় একে বলে ‘ওয়াটার ইনটক্সিকেশন’।
বেশি পানি পান করা ক্ষতিকর কেন?
ভারতীয় চিকিৎসক তুষার তয়াল অতিরিক্ত পানি পানের ক্ষতিকর দিক নিয়ে সতর্ক করেছেন। তিনি মনে করেন, তেষ্টা না পেলেও অল্প সময়ের মধ্যে যদি কেউ অতিরিক্ত পানি পান করেন তাহলে তার রক্তে সোডিয়ামের ঘনত্ব দ্রুত কমতে থাকবে। এক-দুই দিনের অভ্যাসে ক্ষতি নেই। তবে প্রতি দিনই যদি ঘণ্টায় ঘণ্টায় লিটার লিটার পানি বা তরল খাবার কেউ খেতে শুরু করেন, তাহলে তা বিপজ্জনক হতে পারে। তেমন কোনো রোগব্যাধি না থাকলে, এক জন সুস্থ ও প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের সারা দিনে ৩ থেকে ৪ লিটার পানি পান করা জরুরি। তবে তাও নির্ভর করে তিনি কতোটা পরিশ্রম করছেন তার উপর। যদি এমন হয়, একজন ব্যক্তি দিনে ৬ থেকে ৭ লিটার পানি পান করছেন, কিন্তু কায়িক পরিশ্রম করছেন না তাহলে তার ক্ষতি হবে। রক্তে সোডিয়াম ও অন্য খনিজ লবণের মাত্রা কমে যাবে। যাকে চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় বলা হয় ‘হাইপোন্যাট্রেমিয়া’। এই অবস্থা তৈরি হলে শরীরের নানা অঙ্গের কার্যক্ষমতা কমতে থাকবে।
আরেক চিকিৎসক সুবর্ণ গোস্বামীর মতে, শরীরের প্রতি কোষেরই নির্দিষ্ট ধারণক্ষমতা থাকে। কিন্তু তার বেশি হয়ে গেলে শরীরে প্রদাহ শুরু হবে। অতিরিক্ত পানি শরীরে জমতে থাকলে হাত-পা, গোড়ালি ফুলতে শুরু করবে। পেটে পানি জমতে থাকবে, যা চাপ দেবে যকৃৎ ও পাকস্থলীকে। এতে শরীরে পানি ও লবণের ভারসাম্য বজায় থাকবে না। তখন হরমোনের সমস্যাও দেখা দেবে।
কে, কতটুকু পানি পান করবেন, তা নির্ভর করে সেই ব্যক্তির ওজন, শারীরিক সক্রিয়তা এবং সামগ্রিক কাজকর্মের উপর। তেমন কোনও শারীরিক জটিলতা না থাকলে সারা দিনে ২ থেকে ৩ লিটার পর্যন্ত পানি পান করা যাবে। তবে, ঘণ্টায় ১ লিটারের বেশি পানি পান না করাই ভালো।