দিনের অধিকাংশ সময়ই কাটে কর্মস্থলে। কাজের ব্যস্ততায় সময়ও কেটে যায়। শত ব্যস্ততার মাঝেই সহকর্মীদের সঙ্গে আলাপচারিতা, হাসিঠাট্টা তো হয়ই। কারো সঙ্গে খুব ঘনিষ্ট হয়ে উঠে সম্পর্ক। কারো সঙ্গে আবার নিতান্তই কুশল বিনিময় হয়। দীর্ঘদিন কাজ করার সুবাদে সহকর্মীদের সঙ্গে সুসম্পর্ক গড়ে উঠা স্বাভাবিক। তবে সব সহকর্মী এক হয় না। কারো সঙ্গে মতে মিলও না হতে পারে। কিংবা কোনও সহকর্মীর বাঁকা মন্তব্য, সমালোচনা কিংবা তার কাজ আপনার পছন্দ নাও হতে পারে। যা দেখে হয়তো খুব রাগ হয় আপনার। কিন্তু কর্মক্ষেত্রে এমন রাগ পুষে রাখা আদৌ কি উচিত! তবে রাগকে নিয়ন্ত্রণে রেখে কীভাবে নিজেকে সামলে নিবেন তাও তো জানতে হবে।
কাজের যথার্থ স্বীকৃতি না পাওয়া, কটূক্তি, সমালোচনা, সহকর্মীর কর্মদক্ষতার অভাবে নিজের কাজে এর প্রভাব পড়া, বার বার আপনার কাজে সহকর্মীর হস্তক্ষেপ এমন অনেক ঘটনাই ঘটে কর্মক্ষেত্রে। এসব পরিস্থিতিতে মেজাজ হারিয়ে ফেললেই ঝামেলায় পড়তে পারেন। তাই মেজাজ না হারিয়ে নিজের রাগকে নিয়ন্ত্রণ করার কৌশল জানুন।
দূরে থাকুন কিছুক্ষণ
নিজের কোনো ভুলে বা কর্মস্থলের কোনো পরিস্থিতিতে মাথা গরম বা মেজাজ চড়ে গেলে অন্যদের কাছ থেকে একটু দূরে সরে যান। যত কষ্টই হোক না কেন ১০-১৫ মিনিটের একটা বিরতিতে যান। এই সময়টাতে নিজের মনের পরিস্থিতিটা বুঝুন। এক কাপ চা বা কফি নিয়ে বসুন আলাদাভাবে। কীভাবে সমস্যার সমাধান হবে সেটা ভাবুন। রাগ কমতে থাকবে আস্তে আস্তে।
কাউন্টডাউন করুন
আমরা আগে থেকেই জানি যে চট করে রেগে গেলে ১ থেকে ১০ পর্যন্ত গুনলে রাগ কমে যায়। এটা সত্যি। সবচেয়ে ভালো হয় আপনি যদি ১০ থেকে উল্টো করে ১ পর্যন্ত গোনেন। যেটাকে আমরা কাউন্টডাউন করা বলি। ঠাণ্ডা মাথায় নিজের ডেস্কে বসে বা একটু আলাদা হয়ে কাজটি করে দেখুন।
গান হতে পারে দারুণ উপায়
বেশি খারাপ লাগলে কিছুক্ষণ গান শুনুন। এজন্য নিজের জায়গায় বসে একটু রিল্যাক্স হন। তারপর পছন্দের গান, কবিতা শুনুন, মন ভালো হয়ে যাবে। গান শোনার বিষয়টি রাগ কমিয়ে আনার ভালো একটি উপায়। কারণ গান এমন একটি জিনিস যা আমাদের মস্তিষ্ককে রিল্যাক্স করতে পারে, মনোযোগ অন্যদিকে সরিয়ে নিতে পারে। তাই আগে থেকে পছন্তের গানগুলো কাছে রাখুন।
সমস্যা যখন সহকর্মী
এক বা একাধিক সহকর্মীর ব্যবহার ভালো নাও লাগতে পারে, আপনি বিরক্ত হতেই পারেন। হয়তো কোনো কারণ ছাড়াই রাগ হয়ে যায়। এজন্য কোনো সহকর্মীকে পছন্দ না হলেও সৌজন্যমূলক ব্যবহার সবসময় বজায় রাখুন, অফিসের পরিবেশ ঠিক রাখুন। আর সম্ভব হলে সবার সামনে ব্যাপারটি নিয়ে কথা না বলে দুজনে আলাদাভাবে খোলাখুলি কখা বলে নিন।
বসের রাগারাগি
আপনাকে তো কারো অধীনে কাজ করতে হয়। সেই বসের মনমতো কাজ না হলে আপনাকে অবশ্যই বকাঝকা শুনতে হবে। সেটা শোনার পর মন খারাপ হবে, রাগও হবে। রাগ না করে এটাকে কাজের অংশ মনে করুন। কেন বকা খেলেন সেটা ভাবুন। কাজ খারাপ হলে সেটা ভালো করুন। ভালো কাজ করলে বস হয়ত প্রশংসাই করতো আপনার। মন দিয়ে সেই কাজই করুন।
পানি খেয়ে নিন
রাগ বেশি হলে তখনই গ্লাস ভর্তি করে ঠাণ্ডা পানি খান। একটু সময় নিয়ে মন শান্ত করে ঢকঢক করে এক গ্লাস পানি খেয়ে বুক ভরে কয়েকবার শ্বাস নিন। দেখবেন মাথা ও মেজাজ ঠাণ্ডা হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আপনার মনও প্রশান্ত হয়ে যাচ্ছে।
ব্যায়াম
রাগ কমানোর জন্য শ্বাস প্রশ্বাসের ব্যায়াম করতে পারেন। এজন্য প্রথমে খুব গভীরভাবে শ্বাস নিন। ধরে রাখুন ৫-৭ সেকেন্ড, তারপর শ্বাস ছাড়ুন এবং আবার শ্বাস নিয়ে ধরে রাখুন। এভাবে ব্যায়ামটি করতে থাকুন যতক্ষণ না আপনি নিজে শান্ত হচ্ছেন।
নিয়ন্ত্রণে রাখুন পরিস্থিতি
আর কাজের চাপে বা অন্য কোনো কারণের জন্য রাগ প্রকাশ করে ফেললে পরে ক্ষমা চেয়ে নিতে ভুলবেন না। এছাড়া যতই রেগে যান কোনো ব্যক্তিগত মানসিকভাবে কাউকে অঘাত করবেন না। যাই হোক ঠাণ্ডা মাথায় সবকিছু ম্যানেজ করুন। তা না হলে তো আপনি অফিসে ফুরফুরে থাকতে পারবেন না, ভালো কাজটি প্রদর্শন হবে না।
রেডিওটুডে নিউজ/মুনিয়া