
গত সোমবার বিকাল থেকে অনেক খোঁজাখুজি করে শিশুটিকে পাওয়া যায়নি। পরের দিন (মঙ্গলবার) তার লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। ছবি: কোলাজ/ইউএনবি
নাটোরের বড়াইগ্রামে ৭ বছরের শিশু ধর্ষণের পর হত্যা করে অ্যাসিডে মুখ ঝলসে দেওয়ার ঘটনায় ৫ কিশোরকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তাদের বয়স ১৪ থেকে ১৬ বছরের মধ্যে।
অপরাধীদের ধরতে নাটোর জেলা পুলিশের একাধিক গোয়েন্দা দল মাঠে ছিল। তারা অভিযান চালিয়ে প্রথমে দুই কিশোরকে গ্রেপ্তার করে। এরপর তাদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী আরও তিন কিশোরকে গ্রেপ্তার করা হয়।
গ্রেপ্তার পাঁচ কিশোরের মধ্যে চারজনের বাড়ি বড়াইগ্রাম উপজেলার গারফা ও আশপাশের গ্রামে। আরেকজনের বাড়ি চাটমোহরের রামপুর।
পুলিশ সুপার আরও জানান, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তারা শিশুটিকে তুলে নিয়ে গিয়ে ধর্ষণের পর হত্যা করে বলে পুলিশের কাছে শিকার করেছে। নাটোর পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে নিয়ে তাদের আরও জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।
গ্রেপ্তারদের কেউই প্রাপ্তবয়স্ক না হওয়ায় তাদের পরিচয় ও ছবি প্রকাশ করেনি পুলিশ। তবে তাদের মধ্যে স্কুল ও মাদরাসার ছাত্র রয়েছে বলে জানানো হয়েছে।
পয়লা বৈশাখ উপলক্ষে গত সোমবার (১৪ এপ্রিল) শিশুটি বেড়াতে বের হয়। পাশেই দাদিবাড়ি গিয়ে তার সেমাই খাওয়ার কথা ছিল বলে জানান পরিবারের সদস্যরা। কিন্তু বিকাল হয়ে গেলেও দুই বাড়ির কোথাও সে না গেলে স্বজনরা খোঁজাখুজি শুরু করেন। তবে কাল তাকে খুঁজে পায়নি কেউ। এরপর আজ (মঙ্গলবার) সকাল ১০টার দিকে বাড়ি থেকে কয়েক শ’ গজ দূরে চাটমোহর উপজেলার কাটাখালী ইউনিয়নের হরিপুর গ্রামের একটি ভুট্টাখেতে তার লাশ পড়ে থাকতে দেখেন স্থানীয়রা। প্রথমে তারা শিশুটির পরিবারে খবর দেন, এরপর পুলিশকে অবহিত করেন।
খবর পেয়ে নাটোর ও পাবনা জেলা পুলিশ ঘটনাস্থলে যায়। এ সময় শিশুটির মুখমণ্ডল অ্যাসিডে ঝলসানো এবং শরীর বিবস্ত্র ছিল। পরে পুলিশ আলামত সংগ্রহ করে লাশটি পাবনা সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠায়।
সেদিন প্রতক্ষ্যদর্শী ও শিশুটির প্রতিবেশী এমদাদুল হক বলেন, এলাকার কৃষকরা খেতে কাজ করতে গিয়ে প্রথম তার লাশ দেখতে পায়। পরে পরিবারে খবর দিলে আমরা সেখানে যাই। কিছুক্ষণ পর পুলিশ এসে লাশ নিয়ে যায়।
তিনি বলেন, তার মুখের পুরোটাই পোড়া ছিল। গায়ে কোনো কাপড় ছিল না। আমাদেরও ধারণা, তাকে ধর্ষণের পর শ্বাসরোধ করে হত্যা করেছে পাষণ্ড দুর্বৃত্তরা। লাশের মুখ যাতে চেনা না যায়, তার জন্য অ্যাসিড দিয়ে পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।
শিশুটিকে ধর্ষণের পর নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে বলে নিজের ধারণার কথা জানান বড়াইগ্রাম উপজেলার চান্দাই ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) চেয়ারম্যান শাহনাজ পারভীনও।
লাশ উদ্ধারের পর থেকেই অপরাধীদের শনাক্ত ও ধরতে পুলিশের গোয়েন্দা দল মাঠে নেমেছে বলে জানিয়েছিলেন বড়াইগ্রাম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহবুবুর রহমান।
সেদিন তিনি জানান, শিশুটির বাড়ি বড়াইগ্রাম উপজেলায় (নাটোর) হলেও লাশটি উপজেলার সীমান্তবর্তী পাবনার চাটমোহর এলাকায় পাওয়া গেছে। ফলে সংঘটিত অপরাধটির মামলা চাটমোহর থানায় লিপিবদ্ধ হবে। তবে দুর্বৃত্তদের চিহ্নিত করে বিচারের আওতায় আনতে বড়াইগ্রাম থানা পুলিশ যথাযথ দায়িত্ব পালন করবে।