
জুলাই বিপ্লবোত্তর দেশের বিচার বিভাগ নতুন যাত্রা শুরু করেছে এবং জনগণ বিচার বিভাগের ওপর তাদের হারানো আস্থা ফিরে পাবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদ।
আজ সকালে খুলনার হোটেল সিটি ইন -এর কনফারেন্স রুমে সুপ্রিম কোর্ট ও ইউনাইটেড ন্যাশনস ডেভেলপমেন্ট প্রোগ্রাম (ইউএনডিপি) বাংলাদেশের যৌথ উদ্যোগে ‘জুডিশিয়াল ইন্ডিপেন্ডেন্স অ্যান্ড এফিসিয়েন্সি ইন বাংলাদেশ’ শীর্ষক আঞ্চলিক সেমিনারে তিনি এই আশা প্রকাশ করেন।
সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের গণসংযোগ কর্মকর্তা মো. শফিকুল ইসলামের দেয়া এ সংক্রান্ত প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, প্রধান বিচারপতি তার ভাষণে ন্যায়বিচার ও আইনের শাসন নিশ্চিতকরণে বিচার বিভাগের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকার প্রসঙ্গ এবং তার ঘোষিত বিচার বিভাগ সংস্কারের রোডম্যাপ বাস্তবায়নের অগ্রগতির তুলে ধরেন। বিশেষ করে তিনি বিচার বিভাগ সংস্কারের রোডম্যাপের বিভিন্ন অনুষঙ্গের সফল বাস্তবায়নে অন্তবর্তীকালীন সরকারের আন্তরিক সহযোগিতার জন্য ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন।
প্রধান বিচারপতি উল্লেখ করেন, অন্তবর্তীকালীন সরকারের সক্রিয়তার কারণেই দ্রুততম সময়ে উচ্চ আদালতের বিচারক নিয়োগের জন্য অধ্যাদেশ প্রণয়ন সম্ভব হয়েছে।
আর বিচার বিভাগ সংস্কারের রোডম্যাপের সফল বাস্তবায়নে সুপ্রিম কোর্ট ও অন্তবর্তীকালীন সরকার নিবিড়ভাবে কাজ করছে। বিশেষ করে বিচার বিভাগের জন্য পৃথক সচিবালয় তৈরির বিষয়ে আইন মন্ত্রণালয় উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জন করেছে। এ সংক্রান্ত অধ্যাদেশ প্রস্তুতের কাজ দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলায় অন্তবর্তীকালীন সরকারকে বিশেষভাবে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন প্রধান বিচারপতি।
সেমিনারে প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘সাম্প্রতিক সময়ে সরকারের আন্তরিক সহযোগিতায় বিভিন্ন স্তরে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক বিচারকের পদ তৈরি হয়েছে, যা অদূর ভবিষ্যতে মামলাজট নিরসনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।’
এছাড়া, বিশেষায়িত বাণিজ্যিক আদালত তৈরির প্রাথমিক কাজ ইতোমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে। আর কক্সবাজারে সুপ্রিম কোর্ট রিসার্চ ইন্সস্টিটিউট দ্রুত চালুর বিষয়ে দু’টো বিশেষ কমিটি কাজ করে যাচ্ছে বলেও উল্লেখ করেন প্রধান বিচারপতি।
দেশের বিভাগীয় পর্যায়ে অনুষ্ঠিত সেমিনারগুলো থেকে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিষয় উঠে এসেছে এবং সেমিনারগুলোর মতামতসমূহ অন্তর্ভুক্ত করে অচিরেই বিচার বিভাগের সার্বিক আধুনিকায়নে একটি স্ট্রাটেজিক প্ল্যান তৈরির কাজ শুরু করা হবে বলে উল্লেখ করেছেন প্রধান বিচারপতি। এ সময় তিনি আশা প্রকাশ করেন, বিচার বিভাগের আধুনিকায়নের জন্য স্ট্রাটেজিক প্লানের সফল বাস্তবায়নের মাধ্যমে জুলাই বিল্পবোত্তর বিচার বিভাগ যে নতুন যাত্রা শুরু করেছে তার পূর্ণতা পাবে এবং জনগণ বিচার বিভাগের ওপর তাদের হারানো আস্থা ফিরে পাবে।
হাইকোর্টের বিচারপতি মোহাম্মদ আলী’র সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সেমিনারে স্বাগত বক্তৃতায় ইউএনডিপি’র আবাসিক প্রতিনিধি স্টেফান লিলার বাংলাদেশের বিচার বিভাগের প্রাতিষ্ঠানিক স্বতন্ত্রীকরণে প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদ ঘোষিত বিচার বিভাগ সংস্কারের রোডম্যাপকে যুগোপযোগী পদক্ষেপ বলে মন্তব্য করেন। এ সময় তিনি বাংলাদেশের বিচার বিভাগের জন্য ঐতিহাসিক এই মুহূর্তে বিচার বিভাগের আধুনিকায়নে উন্নয়ন সহযোগী হিসেবে পাশে থাকার আশ্বাস প্রদান করেন।
সেমিনারে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তৃতা করেন বাংলাদেশে নিযুক্ত ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূত মাইকেল মিলার ও সুইডেনের রাষ্ট্রদূত নিকোলাস উইকস।
আজকের সেমিনারে খুলনা, সাতক্ষীরা ও বাগেরহাট জেলার বিভিন্ন পর্যায়ের বিচারবিভাগীয় কর্মকর্তা উপস্থিত ছিলেন। এছাড়া সেমিনারে খুলনা জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক, পাবলিক প্রসিকিউটরসহ আমন্ত্রিত অতিথিরা অংশগ্রহণ করেন।