
মাগুরায় আট বছরের শিশু ধর্ষণের ঘট্নায় দায়ের হওয়া মামলার বিচার আগামী ছয় মাস অর্থাৎ ১৮০ দিনের মধ্যে শেষ করার নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। রবিবার বিচারপতি ফারাহ মাহবুব ও বিচারপতি দেবাশীষ রায় চৌধুরীর সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন। নারী ও শিশু নির্যাতন ও দমন ট্রাইব্যুনালকে এ নির্দেশনা বাস্তবায়ন করতে বলা হয়েছে।
এদিন ব্যারিস্টার মাহসিব হোসাইন শিশুটির স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করার জন্য আদালতের কাছে আবেদন জানান।
পরে আদালত এই বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য নির্দেশ দেন।
এদিকে শনিবার সকালে এ ঘটনায় মামলা করেছেন শিশুটির মা। এজাহারে তিনি অভিযোগ করেন, মেয়ের স্বামীর অর্থাৎ জামাইয়ের সহায়তায় তার বাবা (মেয়ের শ্বশুর) শিশুটিকে ধর্ষণ করেন। বিষয়টি মেয়ের শাশুড়ি ও ভাসুর জানতেন। পরে ঘটনা ধামাচাপা দিতে শিশুটিকে হত্যাচেষ্টা চালান তারা। মামলায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ৯ (৪)–এর ক/৩০ ধারায় ধর্ষণ ও ধর্ষণের মাধ্যমে আহত করার অভিযোগ করা হয়। মামলায় শিশুটির বোনের স্বামী, শ্বশুর, শাশুড়ি ও ভাসুরকে আসামি করা হয়েছে। তারা আগে থেকেই পুলিশের হেফাজতে ছিলেন।
এজাহারে উল্লেখ করা হয়, চার মাস আগে মাগুরা পৌর এলাকার এক তরুণের সঙ্গে শিশুটির বড় বোনের বিয়ে হয়। ওই বাড়িতে বোনের স্বামী, শ্বশুর, শাশুড়ি ও ভাসুর থাকতেন। বিয়ের পর থেকে বড় মেয়েকে অনৈতিক প্রস্তাব দিয়ে আসছিলেন তার শ্বশুর। বিষয়টি পরিবারের অন্য সদস্যরা জানতেন। এ নিয়ে ঝগড়াও হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে ১ মার্চ বোনের শ্বশুরবাড়িতে বেড়াতে যায় আট বছরের শিশুটি।
এজাহারে ঘটনার বর্ণনা দিয়ে বাদী উল্লেখ করেন, গত বুধবার (৫ মার্চ) রাত ১০টার দিকে খাবার খেয়ে বড় বোন ও তার স্বামীর সঙ্গে একই কক্ষে ঘুমায় শিশুটি। দিবাগত রাত আড়াইটার দিকে বড় বোন ঘুম থেকে জেগে দেখেন, ছোট বোন পাশে নেই, মেঝেতে পড়ে আছে। তখন শিশুটি বড় বোনকে জানায়, তার জ্বালাপোড়া হচ্ছে। কিন্তু বড় বোন মনে করে, শিশুটি ঘুমের মধ্যে আবোল-তাবোল বকছে। এরপর সকাল ছয়টার দিকে শিশুটি আবার বোনকে জ্বালাপোড়ার কথা বলে। কারণ জিজ্ঞাসা করলে সে বোনকে জানায়, রাতে দুলাভাই (বোনের স্বামী) দরজা খুলে দিলে তার বাবা (শ্বশুর) তার মুখ চেপে ধরে তার কক্ষে নিয়ে ধর্ষণ করেন। সে চিৎকার করতে গেলে তার গলা চেপে ধরা হয়। পরে তাকে আবার বোনের কক্ষের মেঝেতে ফেলে রেখে যায়।
ঘটনা জানার পর শিশুটির বড় বোন তার মাকে মুঠোফোনে বিষয়টি জানাতে গেলে তার স্বামী ফোন কেড়ে নিয়ে তাকে মারধর করেন। এ কথা কাউকে বললে শিশুটিকে হত্যার হুমকি দেন এবং তাদের দুই বোনকে আলাদা দুটি কক্ষে আটকে রাখেন। সকালে এক নারী প্রতিবেশী বাড়িতে এলে বোনের ভাসুর দরজা খুলে দেন। তখন শিশুটির মাথায় পানি দিয়ে সুস্থ করানোর চেষ্টা করা হয়। সকাল সাড়ে ১০টার দিকে শিশুটি আরও অসুস্থ হয়ে পড়লে বোনের শাশুড়ি অন্য প্রতিবেশীদের সহায়তায় মাগুরা ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানে গিয়ে মেয়েটিকে জিনে ধরেছে বলে চিকিৎসকদের জানান। তবে চিকিৎসক ও অন্যরা বিষয়টি টের পেলে শাশুড়ি হাসপাতাল থেকে পালিয়ে যান। পরে বাদী হাসপাতালে যান।
রেডিওটুডে নিউজ/আনাম