বিএসএফের গুলিতে কিশোরী ফেলানী হত্যার ১৪ বছর আজ। ভারতের বিএসএফের কোর্টে অভিযুক্ত সদস্য অমিয় ঘোষকে বেকসুর খালাস দেয়া হয়। এ রায়ের বিরুদ্ধে ৯ বছর আগে দেশটির সুপ্রিমকোর্টে রিট হলেও শুনানি হয়নি আজও। জানা গেছে, শুনানির জন্য আজ তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে। একযুগের বেশি সময় পার হলেও বিচারের আশায় রয়েছে তার পরিবার।
২০১১ সালের ৭ জানুয়ারি ফেলানীকে গুলি করে হত্যা করে বিএসএফ। এরপর কাঁটাতারে কয়েক ঘণ্টা ঝুলে থাকে বিশ্বমানবতা। ভারতীয় সীমান্ত রক্ষী বাহিনীর নিষ্ঠুর এই ঘটনায় সমালোচনার ঝড় ওঠে দেশে-বিদেশে।
মূলত, অনন্তপুর সীমান্তে কাঁটাতার পার হয়ে ভারত থেকে দেশে ফেরার সময় ১৪ বছর বয়সী কিশোরী ফেলানীকে পাখির মতো গুলি করে হত্যা করে বিএসএফ সদস্য অমিয় ঘোষ। এরপর প্রায় ৫ ঘণ্টা মরদেহ ঝুলে থাকে কাঁটাতারে।
পরে নানা প্রক্রিয়া শেষে বিএসএফ ফেলানীর মরদেহ হস্তান্তর করে বিজিবির কাছে। মৃত্যুর ৩০ ঘণ্টা পর ফেলানীর মরদেহ দাফন করা হয় পৈত্রিক ভিটায়। এরপর পেরিয়ে গেছে ১৪ বছর। কিন্তু বিচার পায়নি তার পরিবার।
বিএসএফের জেনারেল সিকিউরিটি ফোর্স কোর্টে বাদী, আসামি এবং বিচারক-তিনজনই ছিল বিএসএফের। যেখানে অভিযুক্ত বিএসএফ সদস্য খালাস পান। তবে ভারতের উচ্চ আদালতে ন্যায়বিচারের আশা স্বজনদের।
ফেলানীর পিতা নুর ইসলাম বলেন, ‘আজও পর্যন্ত আমি বিচার পাইনি। ভারতে বিচারটি ঝুলে রয়েছে। এই বিচার যেন আর ঝুলে না থাকে এটা আমার চাওয়া। আমার মেয়ের হত্যার যেন সুষ্ঠু বিচার পাই। অমিয় ঘোষের সর্বোচ্চ শাস্তি হোক। ’
কুড়িগ্রাম জেলা শাখা সুশাসনের জন্য নাগরিক-সুজনের সভাপতি খায়রুল আনম বলেন, ‘বাদি বিএসএফ আর বিচার হয়েছে বিএসএফের আদালতে, তাই এখানে ন্যায্য বিচার পাওয়া হয়নি এবং এখানে পাওয়া সম্ভব না।’
মানবাধিকার কর্মীরা বলছেন, ভারতের সুপ্রিম কোর্টে রিটটির নিষ্পত্তি হওয়া জরুরি। সঠিক বিচারের মাধ্যমে সীমান্ত ব্যবস্থাপনায় ঘটবে ইতিবাচক পরিবর্তন।
রেল-নৌ যোগাযোগ ও পরিবেশ উন্নয়ন গণ কমিটির কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক সভাপতি মো. নাহিদ হাসান বলেন, ‘এই রায়ের জন্য ভারতের সুপ্রিম কোর্ট যদি একটা সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা দেয় ও একটা সুষ্ঠু বিচার হয়, তাহলে সীমান্তে হত্যাকাণ্ডে বিএসএফ যে ভূমিকা পালন করছে তারা একটা সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা পাবে এবং এই হত্যাকাণ্ড বন্ধ হবে বলে আমি মনে করছি।’
বিএসএফের কোর্টে প্রথম দফার রায় হয় ২০১৩ সালের ৬ সেপ্টেম্বর, পরে ২০১৫ সালের ২ জুলাই পুনর্বিচারের রায়ে অভিযুক্ত বিএসএফ সদস্য অমিয় ঘোষ খালাস পায়।
এই রায় প্রত্যাখ্যান করে একই বছরের আগস্টে কলকাতার মানবাধিকার সংগঠন ‘বাংলার মানবাধিকার সুরক্ষা মঞ্চ’ এবং ফেলানীর বাবা যৌথভাবে রিট দায়ের করেন। এরপর তারিখের পর তারিখ পিছিয়েছে- কিন্তু হয়নি শুনানি।
রেডিওটুডে নিউজ/আনাম