গুম হওয়ার ট্রমা সহ্য করা যে কত কঠিন, তা আমি বুঝেছি। আমিও গুম হয়েছিলাম। গুম থেকে ফিরে দু’বার আত্মহত্যার চেষ্টা করেছি। আমি ডাক্তারের কাছে যখন গিয়েছি, ডাক্তার আমাকে বলেছেন, ‘এটা তুমি ভুলে যাও। ভাবো, এই ঘটনা ঘটেনি।’ আমি তখন গুমের পেইনটা বুঝেছি।
এভাবে গুম হওয়ার পরের মানসিক অবস্থার বর্ণনা দিয়েছেন কবি ও চিন্তক ফরহাদ মজহার। গতকাল বুধবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মোজাফফর আহমেদ চৌধুরী মিলনায়তনে আয়োজিত ‘গণহত্যা, গুম ও ভয়ের সংস্কৃতি- মানবিক মর্যাদা ও সুবিচারের দাবি’ শীর্ষক এক অনুষ্ঠানে গুমের স্মৃতি তুলে ধরেন তিনি। সব প্রাণের নিরাপত্তা (সপ্রাণ) নামে একটি সংগঠন অনুষ্ঠানটির আয়োজন করে।
২০১৭ সালের ৩ জুলাই সকালে রাজধানীর শ্যামলীর বাসা থেকে বেরিয়ে নিখোঁজ হন ফরহাদ মজহার। ১৮ ঘণ্টা পর গভীর রাতে নাটকীয়ভাবে যশোরে বাস থেকে তাঁকে উদ্ধার করে র্যা ব। অবশ্য ফরহাদ মজহারের বিরুদ্ধে ‘নিজেকে অপহরণের নাটক’ সাজানোর অভিযোগ তোলে পুলিশ।
ফরহাদ মজহার বলেন, আপনি যখন জানবেন, আপনাকে বা আপনার পরিবারের কাউকে গুলি করে মেরে ফেলা হবে, অথবা ভয়াবহ নির্যাতন করা হবে; তার অনুভূতিটা ভয়ংকর। আপনার ভাইকে আপনার সামনে থেকে ধরে নিয়ে যাচ্ছে, তা যে ট্রমা তৈরি করে, তা ভয়ংকর।
তিনি বলেন, যারা গুম হয়েছেন, তারা কি ফিরে আসবেন? তারা কোথায় আছেন? এটা থেকে যে ট্রমা তৈরি হয়, তা ভয়াবহ। এই ট্রমায় কেবল গুম হওয়া ব্যক্তি নয়, পরিবারের অন্য সদস্যদের মাঝেও ট্রমা তৈরি হয়।
অন্তর্বর্তী সরকারকে উদ্দেশ করে তিনি বলেন, যারা গুম হয়েছে, তারা কি বেঁচে আছে? তাদের কেন নেওয়া হয়েছে– এর উত্তর অন্তর্বর্তী সরকারকে জানাতে হবে। যে প্রশ্নের সমাধান করা জরুরি, তা আমরা করছি না। রাষ্ট্র যখন দুর্বল হয়, তখন সে প্রতিপক্ষকে দমন করার পদ্ধতি হিসেবে এ ধরনের গুম-খুনের পথে হাঁটে।
মানবাধিকারকর্মী মো. নূর খান লিটন অনুষ্ঠানে বলেন, গুমের শিকার ব্যক্তিদের আয়নাঘরে এমন ভয়ংকর বন্দি হিসেবে দিনের পর দিন, রাতের পর রাত কাটাতে হয়েছে, যেখানে পাঁচ-ছয় ফুট একটা জায়গায় সাপের মতো প্যাঁচ দিয়ে একটা মানুষকে থাকতে হয়। গুমের শিকার অনেক ব্যক্তির পেট কেটে ফেলা হয়েছে, নাড়িভুঁড়ি বের করা হয়েছে, বস্তা দিয়ে বেঁধে বুড়িগঙ্গায় ফেলে দেওয়া হয়েছে, রাতের অন্ধকারে ক্রসফায়ারে তাদের জীবন দিতে হয়েছে।
মায়ের ডাকের সমন্বয়ক সানজিদা ইসলাম তুলি, নৃবিজ্ঞান ও গুমবিষয়ক গবেষক ইয়াসমিন আরা, জুলাই আন্দোলনে শহীদ ফারহান ফাইয়াজের পরিবারের সদস্যরা বক্তব্য দেন।
রেডিওটুডে নিউজ/আনাম