
পোপ ফ্রান্সিসের ফুটবলের প্রতি ছিল অগাধ ভালোবাসা,বিশেষ করে আর্জেন্টিনার ক্লাব সান লরেনজোর প্রতি ছিল গভীর আবেগ ও নিবেদন। সেই ফুটবল অন্তপ্রাণ ধর্মগুরু ৮৮ বছর বয়সে সোমবার (২১ এপ্রিল) সকালে ভ্যাটিকানে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।
আর্জেন্টিনার বুয়েনস আইরেসে জন্ম নেওয়া হোর্হে মারিও বেরগোগ্লিও (পোপ ফ্রান্সিসের পূর্ব নাম) ছিলেন সান লরেনজো ক্লাবের একজন নিবেদিত সমর্থক। ক্লাবটির (৮৮,২৩৫ নাম্বারধারী) আজীবন সদস্য ছিলেন তিনি। ছোটবেলা থেকেই তিনি গ্যাসোমেত্রো স্টেডিয়ামে গিয়ে ক্লাবের খেলা উপভোগ করতেন। ফুটবলের প্রতি তাঁর ভালোবাসা এতটাই ছিল যে,১৯৯৮ সালে একবার কোচ আলফিও বাসিলের অধীনে খেলোয়াড়দের খেলার আগে আশীর্বাদ দিতে গিয়েও ড্রেসিংরুম থেকে বের করে দেওয়া হয়েছিল তাঁকে। কারণ কোচ হয়তো ভেবেছিলেন তাঁর উপস্থিতি দলের জন্য ‘অপয়া’ হতে পারে।
পোপ হওয়ার বছর অর্থাৎ ২০১৩-তে সান লরেনজো ছয় বছর পর জাতীয় শিরোপা জেতে। আর পরের বছর অর্থাৎ ২০১৪ সালে ক্লাবটি প্রথমবারের মতো মহাদেশীয় শ্রেষ্ঠত্বের শিরোপা কোপা লিবার্তাদোরেস জয় করে। অনেকেই তখন এই সাফল্যকে ‘পোপের অলৌকিক প্রভাব’ হিসেবে ব্যাখ্যা করেন।
ফুটবল বিশ্বের কিংবদন্তীদের প্রতিও ছিল তাঁর আগ্রহ। ২০২৩ সালে এক সাক্ষাৎকারে তাঁকে সর্বকালের সেরা খেলোয়াড় কে—মেসি না ম্যারাডোনা, এমন প্রশ্ন করা হলে তিনি সরাসরি উত্তর না দিয়ে বলেছিলেন,‘আমি তৃতীয় একজনকে রাখব—পেলে। এই তিনজনকে আমি অনুসরণ করেছি।’ তিনি ম্যারাডোনাকে অসাধারণ খেলোয়াড় বললেও ব্যক্তি হিসেবে ব্যর্থ বলেছিলেন। মেসিকে বলেছিলেন ‘একজন ভদ্রলোক’। আর পেলেকে বলেছিলেন এই তিনজনের মধ্যে সবচেয়ে বেশি হৃদয়বান মানুষ। একবার বিমানে পেলের সঙ্গে তাঁর সাক্ষাৎ হয়েছিল যা ছিল হৃদয়ছোঁয়া বলে তিনি জানান।
ফুটবল তারকাদের সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক খুবই গভীর ছিল। পোপ হওয়ার মাত্র পাঁচ মাস পরেই,২০১৩ সালে তিনি ভ্যাটিকানে লিওনেল মেসিকে অভ্যর্থনা জানান। আর্জেন্টিনা ও ইতালির একটি প্রীতি ম্যাচ উপলক্ষে এই আয়োজন হয়েছিল। মেসি তখন তাঁকে জাতীয় দলের স্বাক্ষরিত জার্সি ও উপহারসামগ্রী দিয়েছিলেন।
২০১৪ সালে ডিয়েগো ম্যারাডোনা পোপের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন একটি চ্যারিটি ম্যাচের আগে। সেই সাক্ষাতের পর ম্যারাডোনা মন্তব্য করেছিলেন,‘পোপ ফ্রান্সিস ম্যারাডোনার চেয়েও বড়।’ তবে পোপ ফ্রান্সিস আক্ষেপ করেছিলেন ম্যারাডোনার জীবনকে ঘিরে যারা ছিল তারা তাকে সঠিক পথে নিতে পারেনি এজন্য। ‘অনেক ক্রীড়াবিদই খারাপভাবে শেষ করেন’ —এভাবে আক্ষেপ প্রকাশ করেছিলেন তিনি।
ফুটবলের প্রতি তাঁর গভীর ভালোবাসার স্বীকৃতি হিসেবে ২০১৬ সালে সান লরেনজো ক্লাব তাদের নতুন স্টেডিয়ামের নাম ‘পোপ ফ্রান্সিস স্টেডিয়াম’ করার সিদ্ধান্ত নেয়। তিনি ২০২৪ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে এই সম্মান গ্রহণ করেন। সেই সময় তাঁকে তাঁর প্রিয় খেলোয়াড় রেনে পন্তোনির ছবি সম্বলিত জার্সি,পুরনো গ্যাসোমেত্রোর একটি অংশ এবং আরও স্মৃতিচিহ্ন উপহার দেওয়া হয়েছিল।