মঙ্গলবার,

২২ এপ্রিল ২০২৫,

৯ বৈশাখ ১৪৩২

মঙ্গলবার,

২২ এপ্রিল ২০২৫,

৯ বৈশাখ ১৪৩২

Radio Today News

বাংলাদেশের হয়ে সেভেন সিস্টার্সে যাওয়ার রেল প্রকল্প স্থগিত করলো ভারত

রেডিওটুডে রিপোর্ট

প্রকাশিত: ১০:১৪, ২১ এপ্রিল ২০২৫

আপডেট: ১০:১৬, ২১ এপ্রিল ২০২৫

Google News
বাংলাদেশের হয়ে সেভেন সিস্টার্সে যাওয়ার রেল প্রকল্প স্থগিত করলো ভারত

বাংলাদেশে রেলওয়ে সংযোগ প্রকল্পে প্রায় ৫ হাজার কোটি রুপির অর্থায়ন ও নির্মাণ কাজ স্থগিত করেছে ভারত। ‘শ্রমিকদের নিরাপত্তা’ এবং ‘রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার’ কারণ দেখিয়ে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে রোববার (২০ এপ্রিল) এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম দ্য হিন্দু।

এতে তিনটি চলমান প্রকল্পের কাজ এবং পাঁচটি আলাদা জায়গায় জরিপের কাজ বন্ধ হয়ে গেছে। সংশ্লিষ্ট কয়েকটি সূত্র জানিয়েছে, এরমাধ্যমে বাংলাদেশের রেলপথের মাধ্যমে ভারতের মূল ভূখণ্ডের সঙ্গে তাদের উত্তরপূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোকে (সেভেন সিস্টার্স) যুক্ত করার পরিকল্পনায় বিঘ্ন ঘটেছে।

বাংলাদেশে নিজেদের রেল নেটওয়ার্ক তৈরির বদলে এখন নয়াদিল্লি এই অর্থ দিয়ে উত্তর ভারতের রেলপথ অবকাঠামোকে উন্নত করছে। এছাড়া বাংলাদেশকে এড়িয়ে নেপাল ও ভুটানের মাধ্যমে মূল ভূখণ্ডের সঙ্গে সেভেন সিস্টার্সকে যুক্ত করার ব্যাপারে ভাবছে দেশটি। একটি সূত্র জানিয়েছে, নেপাল ও ভুটানের মাধ্যমে সাড়ে ৩ হাজার থেকে ৪ হাজার কোটি রুপির সংযোগ প্রকল্পের বিষয়ে চিন্তা-ভাবনা হচ্ছে।

দ্য হিন্দু জানিয়েছে, স্থগিত করা এ প্রকল্পগুলো ভারতের ‘স্থলবেষ্টিত’ উত্তরপূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোকে বাংলাদেশের মাধ্যমে যুক্ত করার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ ছিল। এই প্রকল্পের পরিকল্পনা ছিল সরু শিলিগুঁড়ি করিডরের (চিকেন নেক করিডর) ওপর থেকে নির্ভরশীলতা কমানো। যেটি ভারতের মূল ভূখণ্ড থেকে উত্তরপূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোকে যুক্ত করার একমাত্র পথ।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা বলেছেন, “এ মুহূর্তে বাংলাদেশে কোনো নির্মাণ বা অন্য উপকরণ আমরা পাঠাচ্ছি না। প্রতিবেশি দেশের সঙ্গে সংযোগ রুটের অর্থায়ন বন্ধ আছে। (প্রকল্প পুনরায় শুরু করতে) প্রথমে বাংলাদেশে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা প্রয়োজন। তবে পরিকল্পনা অনুযায়ী ভারত অংশে প্রকল্পের কাজ চলমান রয়েছে।”

২০২৪ সালে বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের বাণিজ্যিক সম্পর্কের মূল্য ছিল ১২ দশমিক ৯ বিলিয়ন ডলার। বাংলাদেশ ভারতের আঞ্চলিক অর্থনৈতিক সম্পর্কের ভিত্তি। এছাড়া দক্ষিণ এশিয়ায় ঢাকা নয়াদিল্লির সবচেয়ে বড় বাণিজ্যিক অংশীদার।

স্থগিত প্রকল্প
ভারতের সহযোগিতায় নির্মাণাধীন তিনটি প্রকল্পের মধ্যে রয়েছে আখাউড়া-আগরতলা ক্রস-বর্ডার রেল সংযোগ এবং খুলাবুড়া-শাহবাজপুর রেললাইন, খুলনা-মোংলা বন্দর রেললাইন এবং ঢাকা-টঙ্গি-জয়দেবপুর রেললাইন সম্প্রসারণ প্রকল্প।

আখাউড়া-আগরতলা (ত্রিপুরা) ক্রস-বর্ডার রেল সংযোগ প্রকল্প ভারত সরকারের ৪০০ কোটি রুপি সহায়তায় করা হচ্ছিল। এই রেল সংযোগের দৈর্ঘ্য ১২ দশমিক ২৪ কিলোমিটার। যার ৬ দশমিক ৭৮ কিলোমিটার ডুয়েল গেজ রেললাইন বাংলাদেশে। আর ত্রিপুরায় ৫ দশমিক ৪৬ কিলোমিটার। খুলাবুড়া-শাহজাদপুর রেললাইন এই প্রকল্পের অংশ। এটির লক্ষ্য ছিল নতুন রেললাইন নির্মাণ ও পুরোনো লাইনের মাধ্যমে আসামের সঙ্গে সংযোগ উন্নত করা।

অপরদিকে খুলনা-মোংলা বন্দর রেললাইন প্রকল্পের কাজ চলছিল কনসেশনাল লাইন অব ক্রেডিটের মাধ্যমে। এই প্রকল্পের খরচ ৩ হাজার ৩০০ কোটি রুপি। এটির মাধ্যমে মোংলা বন্দর ও খুলনার মধ্যে ৬৫ কিলোমিটার দীর্ঘ ব্রড গেজ রেললাইন নির্মাণ করা হচ্ছিল। এরমাধ্যমে বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহৎ মোংলা বন্দর ব্রডগেজ রেললাইনের আওতায় আসবে। এই বন্দরের একটি টার্মিনাল পরিচালনার অধিকার রয়েছে ভারতের।

অপরদিকে ঢাকা-টঙ্গি-জয়দেবপুর রেললাইন সম্প্রসারণ প্রকল্পের কাজ ২০২৭ সালে শেষ হওয়ার কথা আছে। তবে বিলম্বিত এ প্রকল্পের কাজটি গত বছর পর্যন্ত মাত্র ৫০ শতাংশ শেষ হয়েছে। ১ হাজার ৬০০ কোটি রুপির এ প্রকল্পের কাজটি করা হচ্ছে ভারতীয় এক্সিম ব্যাংকের সহায়তায়। তবে এক্ষেত্রে অর্থ ছাড়ে কিছু ঝামেলা দেখা গেছে বলে জানিয়েছে প্রভাবশালী সংবাদমাধ্যম দ্য হিন্দু।

আর পাঁচটি আলাদা জায়গায় যে স্থান জরিপের কাজ চলছে সেগুলোর কাজও স্থগিত করা হয়েছে বলে জানিয়েছে অপর একটি সূত্র।

বিকল্প আঞ্চলিক কৌশল
(পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে) ভারত তার অভ্যন্তরীণ ও বিকল্প আঞ্চলিক কৌশল পরিবর্তন করছে বলে জানিয়েছে দ্য হিন্দু।

এর অংশ হিসেব ভারত সরকার উত্তর প্রদেশ এবং বিহারে রেললাইন দ্বিগুণ থেকে চারগুণ করার সম্ভাব্যতা যাচাই করছে। এরমাধ্যমে নিজেদের নির্ভরতা ও সক্ষমতা বৃদ্ধির পরিকল্পনা করা হচ্ছে। সেখানে এখন জরিপ কাজ চলছে বলে জানিয়েছেন রেলওয়ের এক কর্মকর্তা।

একইসঙ্গে, ভারত ভুটান ও নেপালের মধ্যে রেললাইন নির্মাণের সম্ভাব্যতা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করছে। যদিও লজিস্টিক্যালি এ রুটগুলো খুবই জটিল হবে। কিন্তু এগুলোর মাধ্যমে বাংলাদেশের ওপর থেকে নির্ভরশীলতা কমাতে পারবে ভারত।

উদাহরণ স্বরূপ, ভারত ও নেপালের মধ্যে রেললাইন সংযোগ স্থাপনের আগের যে পরিকল্পনাটি আছে সেটি নিয়ে ভাবা হচ্ছে। যারমধ্যে রয়েছে বিরাটনগর-নিউ মালের মধ্যে ১৯০ কিলোমিটার এবং কাজালিবাজার সেকশনেরর গালগালিয়া-ভদ্রপুর পর্যন্ত নতুন রেললাইন নির্মাণ।

অপরদিকে পশ্চিমবঙ্গে (শিলিগুঁড়ি করিডরের মধ্যে সংযোগ বৃদ্ধির লক্ষ্যে) কুমেডপুর-আম্বারি ফালাকাতা অংশে ১৭০ কিলোমিটার নতুন লাইন এবং পশ্চিমবঙ্গ-বিহারের মধ্যে সংযোগ বৃদ্ধির লক্ষ্যে আরও ২৫ কিলোমিটার নতুন লাইন স্থাপন করা হবে।

রেডিওটুডে নিউজ/আনাম

সর্বশেষ

সর্বাধিক সবার কাছের