বুধবার,

১৬ এপ্রিল ২০২৫,

৩ বৈশাখ ১৪৩২

বুধবার,

১৬ এপ্রিল ২০২৫,

৩ বৈশাখ ১৪৩২

Radio Today News

হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের কর-ছাড় সুবিধা বাতিলের হুমকি দিলেন ট্রাম

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

প্রকাশিত: ১১:২১, ১৬ এপ্রিল ২০২৫

Google News
হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের কর-ছাড় সুবিধা বাতিলের হুমকি দিলেন ট্রাম

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য বরাদ্দকৃত ২ বিলিয়ন ডলারের বেশি ফেডারেল তহবিল স্থগিতের ঘোষণা দেওয়ার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই প্রতিষ্ঠানটির মূল্যবান কর-ছাড় সুবিধা বাতিলের হুমকি দিয়েছেন। 

মঙ্গলবার (১৫ এপ্রিল) তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়টি যদি তথাকথিত ‘রাজনৈতিক ও উগ্র মতাদর্শের’ প্রচার চালাতে থাকে, তবে তাদের কর-ছাড় বাতিলের বিষয়টি বিবেচনা করবেন তিনি। একইসঙ্গে, হার্ভার্ডকে ‘ইহুদি-বিরোধিতা’র জন্য ক্ষমা চাওয়ার আহ্বান জানান ট্রাম্প।

এর আগের দিন হার্ভার্ড একটি চিঠিতে ট্রাম্প প্রশাসনের দাবি প্রত্যাখ্যান করে বলে, তাদের ওপর চাপ প্রয়োগ করে শিক্ষাক্রম পরিবর্তন করানো আইনবিরোধী। এ ধরনের দাবি মেনে না নিলে সরকারি অনুদান বন্ধ করে দেওয়ার হুমকি দিয়েছিল প্রশাসন।

২০২৩ সালে হামাসের ইসরায়েলে হামলার পর গাজায় ইসরায়েলি হামলার প্রতিবাদে যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিলিস্তিনপন্থি শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ শুরু হয়। এসব আন্দোলনকে ‘যুক্তরাষ্ট্রবিরোধী ও ইহুদি-বিরোধী' আখ্যা দিয়ে ট্রাম্প এসব বিশ্ববিদ্যালয়কে ’মার্কসবাদ ও উগ্র-বাম মতাদর্শ' ছড়ানোর অভিযোগ তোলেন।

মঙ্গলবার ট্রুথ সোশ্যালে পোস্ট করা এক বার্তায় জানা যায়, হার্ভার্ডের ‘রোগগ্রস্ত মতাদর্শ’ ছড়ানো বন্ধ না হলে তার করমুক্ত মর্যাদা বাতিলের বিষয়টি বিবেচনা করছেন ট্রাম্প। তবে এ সিদ্ধান্ত কীভাবে কার্যকর করবেন, সে বিষয়ে কিছু বলেননি।

মার্কিন করআইন অনুযায়ী, যেসব বিশ্ববিদ্যালয় ‘জনস্বার্থে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করে’, সেগুলো করমুক্ত সুবিধা পায়।

হোয়াইট হাউসের প্রেস সচিব ক্যারোলিন লেভিট সাংবাদিকদের বলেন, হার্ভার্ডে 'ইহুদি ছাত্রদের বিরুদ্ধে বিদ্বেষ' ছড়ানোর জন্য বিশ্ববিদ্যালয়টির ক্ষমা চাওয়া উচিত। তার দাবি, হার্ভার্ড ও অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয় সিভিল রাইটস অ্যাক্টের শর্ত ভঙ্গ করেছে, যেখানে জাতি বা জাতিগত উৎসের ভিত্তিতে বৈষম্য করলে সরকারি অর্থ বন্ধ করার বিধান রয়েছে।

তবে এই আইনের অধীনে অর্থ বন্ধ করার আগে দীর্ঘ তদন্ত, শুনানি ও কংগ্রেসকে ৩০ দিনের আগে জানাতে হয়। এখন পর্যন্ত হার্ভার্ড বা কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্ষেত্রে এই প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হয়নি।

এদিকে, কিছু অধ্যাপক ও শিক্ষার্থী বলছেন, এই আন্দোলনকে ইচ্ছাকৃতভাবে ইহুদি-বিরোধী হিসেবে চিত্রিত করা হচ্ছে এবং এর মাধ্যমে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মতপ্রকাশের স্বাধীনতার ওপর হস্তক্ষেপ করা হচ্ছে।

নিউইয়র্কের বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয় ইতোমধ্যে আন্দোলন দমন ও বিক্ষোভ নিয়ন্ত্রণে সরকারের সাথে আলোচনায় রাজি হয়েছে। গত মাসে ট্রাম্প প্রশাসন মেডিকেল ও বৈজ্ঞানিক গবেষণার খাতে দেওয়া ৪০০ মিলিয়ন ডলারের অনুদান বাতিল করে।

হার্ভার্ডের প্রেসিডেন্ট অ্যালান গারবার সোমবার এক চিঠিতে ট্রাম্প প্রশাসনের দাবিকে 'আইনবহির্ভূত ক্ষমতার প্রয়োগ' বলে অভিহিত করেন। তিনি বলেন, ছাত্র ও শিক্ষকদের মতাদর্শ যাচাই করতে অডিট চালানো, ডাইভারসিটি ও ইকুইটি প্রোগ্রাম বন্ধ করার মতো দাবি সাংবিধানিক অধিকার ও সিভিল রাইটস অ্যাক্টের পরিপন্থী।

তিনি জানান, হার্ভার্ড সবসময়ই ইহুদি-বিরোধীতা ও সবধরনের বিদ্বেষ রোধে কাজ করে যাচ্ছে—একইসঙ্গে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ও প্রতিবাদের অধিকার রক্ষা করছে।

গারবারের চিঠির কয়েক ঘণ্টার মধ্যে ট্রাম্প প্রশাসনের অ্যান্টিসেমিটিজম টাস্কফোর্স হার্ভার্ডের দুই বিলিয়ন ডলার অনুদান ও চুক্তি স্থগিত করার ঘোষণা দেয়। তবে তারা নির্দিষ্ট করে বলেনি, কোন কোন প্রকল্পে অনুদান বন্ধ হচ্ছে। হার্ভার্ড এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেনি।

কলাম্বিয়ার কিছু অধ্যাপক ইতোমধ্যে ট্রাম্প প্রশাসনের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন। তাদের অভিযোগ, প্রশাসনের সিদ্ধান্ত সিভিল রাইটস অ্যাক্ট ও মতপ্রকাশের সাংবিধানিক অধিকার লঙ্ঘন করেছে। নিউইয়র্কের এক ফেডারেল বিচারক ১ মে'র মধ্যে সরকারের জবাব দিতে বলেছেন।

হার্ভার্ড প্রেসিডেন্টের চিঠির পর কলাম্বিয়ার ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্ট ক্লেয়ার শিপম্যান এক বিবৃতিতে জানান, তারা 'নিরপেক্ষ ও গঠনমূলক আলোচনা' চালিয়ে যাবে, তবে 'সরকার শিক্ষা বা নিয়োগে হস্তক্ষেপ করলে তা মেনে নেওয়া হবে না'।

হার্ভার্ডের অবস্থানে সমর্থন দিয়েছে প্রিন্সটন, স্ট্যানফোর্ডসহ আরও কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়।

প্রিন্সটনের প্রেসিডেন্ট ক্রিস্টোফার আইসগ্রুবার বলেন, ‘হার্ভার্ডের পাশে দাঁড়াচ্ছে প্রিন্সটন।’ অন্যদিকে, স্ট্যানফোর্ডের প্রেসিডেন্ট ও প্রোভোস্ট এক যৌথ বিবৃতিতে বলেন, হার্ভার্ডের আপত্তি ‘আমেরিকার স্বাধীনতার ঐতিহ্যের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ’।

তারা বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে অবশ্যই খোলা মন নিয়ে সমালোচনা শোনার মানসিকতা রাখতে হবে, তবে রাষ্ট্রীয় গবেষণার সুযোগ ধ্বংস করে এই পরিবর্তন আনা যায় না।’

সোমবার প্রিন্সটন ও ইউনিভার্সিটি অফ ইলিনয়সহ বেশ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয় মার্কিন জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের বিরুদ্ধে মামলা করেছে। অভিযোগ, পরমাণু প্রযুক্তি, সাইবার নিরাপত্তা ও ওষুধ গবেষণার ক্ষেত্রে তাদের অনুদান হঠাৎ কমিয়ে দেওয়া হয়েছে।

রেডিওটুডে নিউজ/আনাম

সর্বশেষ

সর্বাধিক সবার কাছের