সোমবার,

৩১ মার্চ ২০২৫,

১৬ চৈত্র ১৪৩১

সোমবার,

৩১ মার্চ ২০২৫,

১৬ চৈত্র ১৪৩১

Radio Today News

বাংলাদেশের অর্থপাচার তদন্ত নিয়ে ব্রিটিশ এমপিদের বিভ্রান্ত করার চেষ্টা

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

প্রকাশিত: ২২:০৯, ২৪ মার্চ ২০২৫

আপডেট: ২২:১০, ২৪ মার্চ ২০২৫

Google News
বাংলাদেশের অর্থপাচার তদন্ত নিয়ে ব্রিটিশ এমপিদের বিভ্রান্ত করার চেষ্টা

বাংলাদেশ থেকে যুক্তরাজ্যে পাচার হওয়া অর্থের সন্ধান কার্যক্রমে নেতৃত্ব দেওয়া ব্যক্তিকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে ব্রিটিশ এমপিদের বিভ্রান্ত করার চেষ্টা চলছে। এ নিয়ে ‘বিভ্রান্তিমূলক প্রচারণা’ চালানো হতে পারে বলে মনে করছেন তারা। সোমবার (২৪ মার্চ) ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ানের এক প্রতিবেদনে এ কথা বলা হয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ছাত্রদের নেতৃত্বে একটি গণঅভ্যুত্থানে শেখ হাসিনার কর্তৃত্ববাদী সরকারের পতনের পর বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর হিসেবে নিযুক্ত আহসান মনসুর সম্পর্কে সন্দেহজনক ইমেইল পাওয়ার পর এই সতর্কতা জারি করা হয়।

হাসিনা শাসনের মিত্রদের পাচার করা কয়েক বিলিয়ন ডলারের সম্পদ খুঁজে বের করতে ব্রিটিশ সরকার এবং বেসরকারি কোম্পানিগুলোর সহায়তা চাইতে আহসান মনসুর এখন লন্ডনে আছেন। তিনি বিশ্বাস করেন, পাচারের অর্থ যুক্তরাজ্যে সম্পত্তি কেনার জন্যও ব্যবহৃত হয়েছে।

গার্ডিয়ানের মতে, মনসুরের এই সফর এমন সময় হচ্ছে, যখন হাসিনার ভাইঝি এবং সাবেক ব্রিটিশ সিটি মন্ত্রী টিউলিপ সিদ্দিকের দুর্নীতিতে জড়িত থাকার একটি ক্রমবর্ধমান বিতর্ক চলছে। ঢাকার দুর্নীতি দমন কমিশন (এসিসি) তার বিরুদ্ধে একটি ফৌজদারি মামলা দায়ের করার পর টিউলিপ এই বছর পদত্যাগ করেছেন। যদিও তিনি সব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।

এখন ব্রিটিশ এমপিরা আশঙ্কা করছেন, বাংলাদেশকে ব্রিটেনের সহায়তায় মনসুরের প্রচেষ্টার বিরুদ্ধে একটি স্পষ্ট মানহানি প্রচারণা চলছে, যা দুর্নীতি তদন্তের প্রচেষ্টা আরও জটিল করে দিতে পারে। কেননা আহসান মনসুরের বিরুদ্ধে মিথ্যা সংবাদ প্রকাশ করা হচ্ছে।

গার্ডিয়ান জানিয়েছে, দায়িত্বশীল ৪৭ সদস্যের সর্বদলীয় সংসদীয় গ্রুপের (এপিপিজি) এমপিরা সোমবার মনসুরের সঙ্গে একটি বৈঠকের আগে সন্দেহজনক ই-মেইল পেয়েছেন। প্রেরক নিজেকে সাংবাদিক বলে দাবি করেছেন। ইন্টারন্যাশনাল পলিসি ডাইজেস্ট নামে একটি ওয়েবসাইটের লিঙ্কও পাঠিয়েছেন ই-মেইলে। সেখানে মনসুরের মেয়ের সম্পদের হিসাব এবং সেগুলোর বিরুদ্ধে তদন্ত না হওয়া নিয়ে প্রশ্ন তোলা নিয়ে প্রতিবেদন যুক্ত ছিল।

তবে প্রতিবেদনগুলোর কথিত লেখকদের কেউ সাংবাদিক নন। দ্য গার্ডিয়ান জানতে পেরেছে, এদের মেইলে ব্যবহৃত ছবিগুলোও আসলে স্টক ইমেজ।

মনসুর এবং ব্রিটিশ এমপিরা উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন যে, এই ই-মেইলগুলো একটি সমন্বিত ভুল তথ্য প্রচারণার অংশ।

আইএমএফের সাবেক কর্মকর্তা মনসুর এর আগে ওয়াশিংটনে থাকতেন এবং কাজ করতেন। তিনি মনে করেন, অর্থ পাচারের তদন্তে নাম থাকা ব্যক্তিরা তার সুনাম ক্ষুণ্ণ করতে এবং বিভিন্ন উপায়ে তাকে লক্ষ্যবস্তু করতে চাইছে।

তিনি আরও বলেছেন, তার মেয়ে যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক এবং বাংলাদেশের সঙ্গে তার খুব কম সম্পর্ক রয়েছে।

ব্রিটিশ সর্বদলীয় সংসদীয় গ্রুপ-এপিপিজি’র একজন সদস্য রূপা হক পালাটাইন কমিউনিকেশন্স নামে একটি যুক্তরাজ্যের পাবলিক রিলেশন্স ফার্ম থেকে আলাদা একটি ইমেইল পেয়েছেন। সেখানেও 'একই জাতীয় ভুয়া প্রতিবেদনের লিঙ্ক' তাকে পাঠানো হয়।

ইমেইলে বলা হয়েছে, যদি মনসুর টিউলিপের সততা নিয়ে প্রশ্ন তোলার জন্য প্রস্তুত থাকেন, তাহলে তিনি এবং তার পরিবারেরও তদন্তের মুখোমুখি হওয়া উচিত।

মনসুর বলেছেন, তিনি কখনো সিদ্দিক সম্পর্কে কোনো মন্তব্যই করেননি। তবে তিনি মোহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারের একজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব। টিউলিপ এবং তার পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে ২০১৩ সালে রাশিয়ার সঙ্গে একটি চুক্তির তদন্তেও যুক্ত আছেন মনসুর। এই তদন্তে অভিযোগ, একটি পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র প্রকল্পের মূল্য অতিরঞ্জিত করা হয়েছে।

এমপি রূপা হক বলেছেন, এ ধরনের ই-মেইল পাওয়া অত্যন্ত অস্বাভাবিক। এগুলো ভয় দেখানো এবং এমপিদের স্বাভাবিক কাজে হস্তক্ষেপ করার জন্য করা হয়েছে।

এপিপিজি’র সদস্যরা জানতে পেরেছেন, এই ই-মেইলগুলো সংসদীয় সাইবার নিরাপত্তা উপদেষ্টাদের কাছে এবং সংসদীয় বৈদেশিক বিষয়ক কমিটির কাছেও পাঠানো হয়েছে।

এপিপিজি’র সদস্য ফিল ব্রিকেল বলেছেন, এই ইমেলগুলো অত্যন্ত গুরুতর দুর্নীতি কেলেঙ্কারির বিষয়ে যুক্তরাজ্যের রাজনীতিবিদদের বিভ্রান্ত করার চেষ্টা হলে, সেটি নিয়ে আমাদের খুব উদ্বিগ্ন হওয়া উচিত।

পালাটাইন কমিউনিকেশন্সের একজন মুখপাত্র বলেছেন, আমি সংশ্লিষ্ট সংসদীয় কর্তৃপক্ষকে পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে তদন্ত করার আহ্বান জানাচ্ছি – আমাদের এটা জানতে হবে যে, এসবের জন্য কে অর্থ প্রদান করেছে এবং কেন; যাতে আমরা নিজেদের সুরক্ষার সর্বোত্তম উপায় বুঝতে পারি।

ইন্টারন্যাশনাল পলিসি ডাইজেস্টের একজন মুখপাত্র বলেছেন, ইমেইলে পাঠানো প্রতিবেদনগুলো যিনি লিখেছেন, তিনি নাম প্রকাশ করতে চাননি। তিনি তথ্যগুলোকে সঠিক বলে দাবি করেছেন।

সর্বশেষ

সর্বাধিক সবার কাছের