
বিশ্বে হার্ট অকেজো হয়ে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক মানুষ মারা যায়। এজন্য কৃত্রিম হার্ট ব্যবহার করে কীভাবে বেঁচে থাকা যায় সেই চেষ্টা চালিয়ে ছিলেন চিকিৎসকরা। অবশেষে হয়েছেন সফলও। চিকিৎসা বিশেষজ্ঞদের গবেষণার সফলতার কারণে নতুন এক কৃত্রিম ডিভাইস ব্যবহার করে তিন মাসের বেশি সময় বেঁচে থাকবে মানুষ।
অধিক সংখ্যক মানুষের ওপর পরীক্ষা করে ‘বিভাকর’ নামে এমন একটি ডিভাইস তৈরি করা হয়েছে। গবেষকদের দাবি, টাইটানিয়াম ধাতু দিয়ে তৈরি কৃত্রিম এই হার্ট ব্যবহার করে মানুষ ১০০ দিন পর্যন্ত বেঁচে থাকতে পারবে।
ডিভাইসটি এমন একটি হৃৎপিণ্ড প্রতিস্থাপন ব্যবস্থা, যা নিরবচ্ছিন্ন পাম্প হিসেবে কাজ করে। এতে চুম্বকীয়ভাবে স্থাপিত একটি রোটর রয়েছে। রোটর নিয়মিত স্পন্দনের মাধ্যমে রক্তকে সারা শরীরে প্রবাহিত করে। ত্বকের নিচ দিয়ে একটি কর্ড চালানো হয়, যা ডিভাইসটিকে বাহ্যিক, বহনযোগ্য কন্ট্রোলারের সঙ্গে সংযুক্ত করে। এই কন্ট্রোলার দিনে ব্যাটারিতে চলে এবং রাতে বৈদ্যুতিক সংযোগে সংযুক্ত করা যায়।
বেশিরভাগ যান্ত্রিক ডিভাইস হৃদযন্ত্রের বাম দিককে সহায়তা করে এবং সাধারণত রক্তকে একটি থলেতে জমা করে রাখে। এগুলো প্রতি বছর প্রায় ৩.৫ কোটি বার সংকুচিত হয়ে রক্ত প্রবাহিত করে।
বায়োমেডিকেল ইঞ্জিনিয়ার ড্যানিয়েল টিমস এই কৃত্রিম হার্টটি আবিষ্কার করেছিলেন। এই ডিভাইসের নামে একটি কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। ক্যালিফোর্নিয়ার হান্টিংটন বিচ এবং অস্ট্রেলিয়ার সাউথপোর্টে এর অফিস রয়েছে।
৪০ বছর বয়সী একজন অস্ট্রেলিয়ান নাগরিকের শরীরে এই কৃত্রিম হার্ট প্রতিস্থাপন করা হয়। দান করা মানব হার্ট না পাওয়া পর্যন্ত লোকটি তিন মাসেরও বেশি সময় ধরে ডিভাইসটি নিয়ে বেঁচে ছিলেন। এই ডিভাইসটি গ্রহণকারী এই অস্ট্রেলিয়ান বিশ্বব্যাপী ষষ্ঠ ব্যক্তি হলেও এক মাসেরও বেশি সময় ধরে এটি নিয়ে বেঁচে থাকা তিনিই প্রথম ব্যক্তি।
এ বিষয়ে অস্ট্রেলিয়ান মেলবোর্নের মোনাশ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিক্টোরিয়ান হার্ট ইনস্টিটিউটের কার্ডিয়াক সার্জন জুলিয়ান স্মিথ বলেছেন, ‘চিকিৎসা বিজ্ঞানে এটি অবশ্যই একটি গুরুত্বপূর্ণ উন্নতি।’
এ ছাড়া এই আবিষ্কারকে একটি অবিশ্বাস্য উদ্ভাবনী বলে আখ্যা দিয়েছেন সিডনি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাস্কুলার সার্জন সারাহ আইটকেন। তিনি বলেন, ‘এ ধরনের গবেষণা সত্যিই চ্যালেঞ্জিং। কারণ এটি অত্যন্ত ব্যয়বহুল এবং এর সাথে জড়িত অস্ত্রোপচারটি অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ।’
হিউস্টনের টেক্সাস হার্ট ইনস্টিটিউটের একজন হার্ট-ফেইলিউর কার্ডিওলজিস্ট এবং সভাপতি জোসেফ রজার্স এই আবিষ্কারকে ইতিবাচকভাবে দেখছেন। তিনি জানিয়েছেন, ‘ডিভাইসটির সাথে মানুষ কীভাবে মোকাবেলা করবে তা এর সাম্প্রতিক সাফল্য গবেষকদের বুঝতে সাহায্য করবে।
আবিষ্কারের পর থেকে সকল ক্ষেত্রেই দাতা অঙ্গ না পাওয়া পর্যন্ত ‘বিভাকর’ একটি বিকল্প বা অস্থায়ী হার্ট হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছিল। তবে কিছু হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ বলছেন, বয়স বা অন্যান্য স্বাস্থ্যগত অবস্থার কারণে অঙ্গ প্রতিস্থাপন সম্ভব নয় এমন মানুষদের জন্য এটি একটি স্থায়ী বিকল্প হয়ে উঠতে পারে। তবে এই ধারণাটি এখনও পরীক্ষাধীন রয়েছে।
জানা গেছে, শুধুমাত্র যুক্তরাষ্ট্রে প্রায় ৭০ লাখ প্রাপ্তবয়স্ক হৃদযন্ত্রের অসুস্থতা নিয়ে বেঁচে থাকে। এর মধ্যে ২০২৩ সালে মাত্র ৪ হাজার ৫০০টি হৃদযন্ত্র প্রতিস্থাপন করা হয়েছিল। এত কম সংখ্যক প্রতিস্থাপনের কারণ হলো দাতার অভাব।