শনিবার,

১৫ মার্চ ২০২৫,

১ চৈত্র ১৪৩১

শনিবার,

১৫ মার্চ ২০২৫,

১ চৈত্র ১৪৩১

Radio Today News

নারীদের নজরদারিতে ড্রোন ও অ্যাপ ব্যবহারের অভিযোগ ইরানের বিরুদ্ধে

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

প্রকাশিত: ১৩:১৩, ১৫ মার্চ ২০২৫

Google News
নারীদের নজরদারিতে ড্রোন ও অ্যাপ ব্যবহারের অভিযোগ ইরানের বিরুদ্ধে

সরকারের বেঁধে দেওয়া পোশাকনীতি নারীরা অমান্য করছেন কি না, তা নজরদারি করতে ড্রোন ও অন্যান্য ডিজিটাল প্রযুক্তি ব্যবহার করেছে ইরান। জাতিসংঘের একটি তদন্ত প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।

জাতিসংঘের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইরান ড্রোন ও আধুনিক ডিজিটাল প্রযুক্তি ব্যবহার করে বিরোধীদের দমন করছে। বিশেষ করে, এই প্রযুক্তি সেই সব নারীদের বিরুদ্ধে ব্যবহার করা হচ্ছে, যারা ইসলামি প্রজাতন্ত্রের কঠোর পোশাক বিধি মানতে অস্বীকৃতি জানাচ্ছেন।

তদন্তকারীরা জানিয়েছেন, ইরানের নিরাপত্তা বাহিনী ‘রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় সতর্কতা’ কৌশল প্রয়োগ করছে। তারা বিশেষ মোবাইল অ্যাপ ব্যবহারের মাধ্যমে নারীদের পোশাক বিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ জানাতে সাধারণ জনগণকে উৎসাহিত করছে।

 প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, তেহরান এবং ইরানের দক্ষিণাঞ্চলে হিজাব আইন বাস্তবায়নের জন্য ড্রোন ও নিরাপত্তা ক্যামেরার ব্যবহার বেড়েছে। যারা এই কঠোর আইনের বিরোধিতা করছেন বা প্রতিবাদ করছেন, তারা গ্রেপ্তার, মারধর এবং কখনো কখনো পুলিশি হেফাজতে যৌন সহিংসতারও শিকারও হচ্ছেন।

জাতিসংঘের স্বাধীন আন্তর্জাতিক তথ্য-উদ্ধার মিশনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইরানি কর্তৃপক্ষের সহিংসতার কারণেই ২০২২ সালে মাহসা আমিনির মৃত্যু ঘটে। 

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, ২২ বছর বয়সী ওই কুর্দি তরুণীকে দেশটির নীতি পুলিশের হেফাজতে থাকা অবস্থায় মারধর করা হয়েছিল। তবে কর্তৃপক্ষ এই অভিযোগ অস্বীকার করে এবং তার মৃত্যুর কারণ ‘হৃদ্‌রোগজনিত’ বলে দাবি করে।

মাহসার মৃত্যুর পর দেশজুড়ে যে ব্যাপক বিক্ষোভ শুরু হয়, তা আন্দোলন আকারে ছড়িয়ে পড়ে। রাষ্ট্রীয়ভাবে কঠোর দমন-পীড়নের হুমকি থাকার পরও এই আন্দোলন এখনো অব্যাহত রয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে—২০২২ সালের সেপ্টেম্বর থেকে শুরু হওয়া বিক্ষোভের দুই বছর পরও ইরানের নারী ও কিশোরীরা আইনি ও বাস্তব জীবনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে কাঠামোগত বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন। বিশেষ করে, ইরান সরকারের বাধ্যতামূলক হিজাব বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে।

‘সতর্কতা’ কর্মসূচির মাধ্যমে নারীদের বাধ্যতামূলক হিজাব বাস্তবায়নে রাষ্ট্র ক্রমবর্ধমানভাবে সাধারণ মানুষকে সম্পৃক্ত করার চেষ্টা করছে। বিষয়টিকে একটি একটি নাগরিক দায়িত্ব হিসেবে উপস্থাপন করা হচ্ছে।

তেহরানের আমির-কবির বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রবেশপথে নারীদের হিজাব পরিধান নিশ্চিত করতে কর্তৃপক্ষ ফেসিয়াল রিকগনিশন সফটওয়্যার ইনস্টল করেছে। এ ছাড়াও ইরানের প্রধান সড়কগুলোর নিরাপত্তা ক্যামেরা ব্যবহারের মাধ্যমে হিজাববিহীন নারীদের শনাক্ত করা হচ্ছে।

তদন্তকারীরা জানিয়েছেন, তারা ‘নাজার’ নামের একটি মোবাইল অ্যাপ পেয়েছেন। ইরানের পুলিশ এই অ্যাপ পরিচালনা করে। এর মাধ্যমে অনুমোদিত ব্যক্তিরা হিজাব আইন লঙ্ঘনের অভিযোগ জানাতে পারেন। এই অ্যাপ ব্যবহার করে লোকজন যানবাহনের ভেতরে হিজাববিহীন নারীদের অবস্থান, তারিখ, সময় এবং যানবাহনের নম্বর প্লেটসহ রিপোর্ট করতে পারেন। এই রিপোর্ট পুলিশকে সরাসরি সতর্কবার্তা পাঠায়।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, অভিযোগ পাওয়ার পর যানবাহনের মালিককে একটি মেসেজ পাঠিয়ে হিজাব আইন লঙ্ঘনের অভিযোগটি জানায় পুলিশ। যদি কেউ এই সতর্কবার্তাকে উপেক্ষা করেন, তবে তার যানবাহন আটক করা হতে পারে।

জাতিসংঘের তদন্তকারীরা প্রায় ৩০০ জন ভুক্তভোগী ও প্রত্যক্ষদর্শীর সঙ্গে কথা বলেছেন এবং ইরানের বিচারিক ব্যবস্থার গভীর পর্যালোচনা করেছেন। নির্যাতিতদের পরিবারকে পরিকল্পিতভাবে ভীতি প্রদর্শন করা হয়েছে বলেও প্রতিবেদনে বলা হয়েছে। 

তদন্তে আরও দেখা গেছে, সরকার কর্তৃক তিন শিশু এবং তিন প্রাপ্তবয়স্ক বিক্ষোভকারীকে বিচারবহির্ভূতভাবে হত্যা করা হয়েছে, যাদের মৃত্যুকে পরে আত্মহত্যা বলে দাবি করা হয়েছে।

প্রতিবেদনটিতে আটক নারীদের ওপর যৌন সহিংসতার প্রমাণও পাওয়া গেছে। এক নারী বন্দীর অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরা হয়েছে। তাকে গুরুতর মারধর, ধর্ষণ এবং পরবর্তীতে দলবদ্ধ ধর্ষণেরও শিকার হতে হয়েছে।

এই প্রতিবেদনটি ১৮ মার্চ জাতিসংঘের মানবাধিকার পরিষদে উপস্থাপন করা হবে।

রেডিওটুডে নিউজ/আনাম

সর্বশেষ

সর্বাধিক সবার কাছের