শুক্রবার,

০৭ মার্চ ২০২৫,

২২ ফাল্গুন ১৪৩১

শুক্রবার,

০৭ মার্চ ২০২৫,

২২ ফাল্গুন ১৪৩১

Radio Today News

হামাসের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সরাসরি আলোচনা: কী ঘটছে, এরপর কী হবে

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

প্রকাশিত: ১৯:৫৯, ৬ মার্চ ২০২৫

Google News
হামাসের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সরাসরি আলোচনা: কী ঘটছে, এরপর কী হবে

ট্রাম্প প্রশাসন হামাসের সাথে সরাসরি আলোচনায় অংশ নিয়েছে বলে নিশ্চিত করেছে হোয়াইট হাউস। সেই সঙ্গে এই আলোচনাকে 'মার্কিন স্বার্থের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ' বলে বর্ণনা করেছে।

কাতারি মধ্যস্থতাকারীদের সহায়তায় আলোচনাগুলো কয়েক সপ্তাহ ধরে চলছে বলে জানা গেছে। বিশেষ করে চলতি মাসের গোড়ার দিকে এটি আরও স্পষ্ট হয়ে ওঠে।

কয়েক দশকের মধ্যে এই প্রথমবারের মতো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র হামাসের সঙ্গে সরাসরি আলোচনা করেছে। এটিকে নিজেদের আগের নীতি থেকে সরে আসার ইঙ্গিত হিসেবে দেখা হচ্ছে।

১৯৯৭ সালে 'বিদেশি সন্ত্রাসী সংগঠন' হিসাবে মনোনীত হামাসের সঙ্গে যে কোনো সম্পৃক্ততা বাতিল করেছিল যুক্তরাষ্ট্র। এর পরিবর্তে এখন হামাসের সঙ্গে যোগাযোগের জন্য সম্প্রতি কাতার ও মিশরের উপর ভরসা করে পরাশক্তি দেশটি।

জানা গেছে, যুক্তরাষ্ট্র এই আলোচনায় ২১ বছর বয়সী এডান আলেকজান্ডারের মুক্তি নিশ্চিত করার ওপর মনোনিবেশ করেছিল। যিনি একমাত্র ইসরায়েলি-আমেরিকান বন্দী ছিলেন এবং এখনো জীবিত বলে মনে করা হচ্ছে।

মার্কিন সংবাদ পোর্টাল অ্যাক্সিওস প্রথমবার মার্কিন-হামাস আলোচনা নিয়ে প্রতিবেদন করে। অ্যাক্সিওসের দাবি, আলোচনার মধ্যে সমস্ত বন্দীদের মুক্তির পাশাপাশি একটি দীর্ঘমেয়াদী যুদ্ধবিরতি প্রতিষ্ঠার জন্য সম্ভাব্য বৃহত্তর চুক্তিও অন্তর্ভুক্ত ছিল।

ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল জানিয়েছে, গত মাসে দোহায় হামাস-যুক্তরাষ্ট্র আলোচনা হয়েছিল। এর ফলে ১৫ ফেব্রুয়ারি ইসরায়েলি-আমেরিকান দ্বৈত নাগরিক সাগুই ডেকেল চেনকে মুক্তি দেওয়া হয়।

প্রতিবেদন বলছে, জিম্মি বিষয়ক মার্কিন প্রেসিডেন্টের দূত অ্যাডাম বোহলার হামাসের সঙ্গে সরাসরি আলোচনার নেতৃত্ব দেন।

ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদে তিনি বহুল আলোচিত 'আব্রাহাম চুক্তি'র একজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি ছিলেন। আরব বিশ্বের সঙ্গে ইসরায়েলের সম্পর্ক স্বাভাবিক করতে কাজ করেন তিনি।

ট্রাম্প কী বললেন?

এদিকে, হামাস-মার্কিন সরাসরি আলোচনা নিয়ে যখন প্রতিবেদনগুলো আসছিল, তখন বুধবার ট্রাম্প একটি সোশ্যাল মিডিয়া পোস্টে হামাসকে কড়া হুঁশিয়ারি দেন। তিনি সমস্ত বন্দীদের অবিলম্বে মুক্তি চান।

তিনি সরাসরি গাজার জনগণের উদ্দেশ্যে সম্বোধন করেন। তিনি বলেন, 'গাজার জনগণের উদ্দেশ্যে : একটি সুন্দর ভবিষ্যৎ অপেক্ষা করছে। কিন্তু যদি আপনি জিম্মিদের ধরে রাখেন তবে তা হবে না; যদি আপনি তা করেন, তাহলে আপনি মৃত! একটি বুদ্ধিমান সিদ্ধান্ত নিন।'

তিনি হুঁশিয়ারি দেন, 'যদি তুমি আমার কথা মতো (কাজ) না করো, তাহলে একজন হামাস সদস্যও নিরাপদ থাকবে না।'

যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনার প্রতিবেদনে হামাসের কী প্রতিক্রিয়া?

আলোচনার প্রতিবেদনের বিষয়ে হামাসের পক্ষ থেকে কোনো আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া জানানো হয়নি। তবে সংগঠনের একজন কর্মকর্তা অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসকে বলেন, আলোচনায় ইসরায়েলি বন্দীদের মুক্তির উপর আলোকপাত করা হয়েছে। এটি 'প্রতিশ্রুতিশীল' বিষয় ছিল।

আনাদোলু সংবাদ সংস্থা জানিয়েছে, ট্রাম্পের হুমকির জবাবে হামাসের মুখপাত্র হাজেম কাসেম বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র 'যুদ্ধবিরতি চুক্তির বিষয়গুলোকে জটিল করে তুলছে এবং (ইসরায়েলকে) এর শর্তাবলী বাস্তবায়ন থেকে বিরত থাকতে উৎসাহিত করছে।'

তিনি আরও বলেন, 'হামাস প্রথম ধাপের অধীনে তার সমস্ত বাধ্যবাধকতা বাস্তবায়ন করেছে, কিন্তু ইসরায়েল দ্বিতীয় ধাপে প্রবেশ এড়িয়ে চলছে। দ্বিতীয় ধাপের জন্য আলোচনায় অংশ নিতে দখলদারদের উপর চাপ প্রয়োগ করতে মার্কিন প্রশাসনকে বাধ্য।'

হামাস বর্তমানে কতজন বন্দীকে আটকে রেখেছে?

ইসরায়েল জানিয়েছে, গাজায় এখনো ৫৯ জন বন্দী রয়েছে, যাদের মধ্যে ২৪ জন জীবিত বলে ধারণা করা হচ্ছে। এছাড়া কমপক্ষে ৩৫ জনের মৃতদেহ হামাসের হেফাজতে রয়েছে।

ইসরায়েলি সরকারের মতে, দক্ষিণ ইসরায়েলে আক্রমণের সময় হামাস প্রায় ২৫০ জনকে বন্দী করেছিল। ২০২৩ সালের শেষের দিকে এক সপ্তাহব্যাপী যুদ্ধবিরতির সময় ১০০ জনেরও বেশি লোককে মুক্তি দেওয়া হয়।

ফেব্রুয়ারিতে যুদ্ধবিরতির প্রথম পর্যায়ে হামাস প্রায় ১,৯০০ ফিলিস্তিনি বন্দীর বিনিময়ে ২৫ জন জীবিত বন্দী মুক্তি এবং আট জনের মৃতদেহ হস্তান্তর করে। কাতার, মিশর ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় ইসরায়েল-হামাসের মধ্যে যুদ্ধবিরতি চুক্তিটি সই হয়। বন্দী বিনিময়, মানবিক সাহায্য বিতরণ এবং সামরিক অভিযান শেষ করা - এগুলো প্রথম পর্যায়ের ঘটনা।

চুক্তির দ্বিতীয় ধাপে অগ্রসর হওয়ার বিষয়ে আলোচনার মধ্যে রয়েছে - বাকি ৫৯ জন বন্দীর মুক্তি, গাজা থেকে ইসরায়েলি সেনা পুরোপুরি প্রত্যাহার এবং যুদ্ধের স্থায়ী সমাপ্তি। তবে ইসরায়েলি সরকার এটি স্থগিত রেখেছে।

আলোচনা নিয়ে ইসরায়েল কেমন প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে?

ট্রাম্প প্রশাসন হামাসের সঙ্গে সম্ভাব্য সরাসরি সম্পৃক্ততার বিষয়ে ইসরায়েলের সঙ্গে পরামর্শ করেছে বলে জানা গেছে।

হোয়াইট হাউসের প্রেস সেক্রেটারি ক্যারোলিন লিভিট বলেছেন, 'এই বিষয়ে ইসরায়েলের সাথে পরামর্শ করা হয়েছে।' ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় একটি বিবৃতি প্রকাশ করে বলেছে, তারা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কাছে 'তার মতামত প্রকাশ করেছে।'

নিউইয়র্কে ইসরায়েলের কনসাল জেনারেল ওফির আকুনিস ফক্স নিউজকে বলেন, 'হোয়াইট হাউস থেকে হামাসের বিরুদ্ধে একটি নতুন মনোভাব এসেছে...তারা হামাসের সাথে কথা বলতে পারে, এটা ঠিক।'

এরপর কী?

সরাসরি আলোচনা সত্ত্বেও গাজার যুদ্ধবিরতি অনিশ্চয়তার মধ্যে রয়েছে। ট্রাম্পের নতুন হুমকির জবাবে হামাস বলেছে, যুদ্ধবিরতি চুক্তির দ্বিতীয় ধাপ থেকে সরে আসার এবং গাজায় ফিলিস্তিনিদের আরও অনাহারে ও অবরুদ্ধ করা নিয়ে নেতানিয়াহুর প্রচেষ্টাকে আমেরিকা সমর্থন করছে।

মিশর ইঙ্গিত দিয়েছে, ইসরায়েল চুক্তির 'শেষ সীমা' পূরণ করতে চাইছে না। মিশরের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বদর আবদেলাত্তি বুধবার কাতারের রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা কিউএনএকে বলেছেন, 'এখন পর্যন্ত, শুধুমাত্র প্রথম পর্যায় বাস্তবায়িত হয়েছে। কিন্তু এখন একটি পক্ষ তার বাধ্যবাধকতা থেকে পিছু হটার চেষ্টা করছে।'

যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘিত হলে গাজার ফিলিস্তিনিদের জন্য তা বিপর্যয়কর হতে পারে। তারা ইতোমধ্যে ১৭ মাস ধরে ইসরায়েলি গণহত্যার যুদ্ধ এবং অবরোধের শিকার।

গত সপ্তাহে ইসরায়েল গাজায় সমস্ত সাহায্য বন্ধ করে দেয়। ফলে গাজায় খাদ্যের দাম তাৎক্ষণিকভাবে বেড়ে যায়। এমনকি যুদ্ধবিরতির সময়ও স্থানীয়রা গাজায় ইসরায়েলি কামান এবং বিমান হামলার শিকার হচ্ছে।

যুদ্ধবিরতির প্রথম ধাপের মেয়াদ গত ১ মার্চ শেষ হয়েছে। মার্কিন বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ প্রথম ধাপের মেয়াদ ছয় সপ্তাহ বাড়ানোর প্রস্তাব করেন। নেতানিয়াহু এই প্রস্তাবে সম্মত হন, কিন্তু হামাস এর বিরোধিতা করে এবং আগের প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী চুক্তিটি দ্বিতীয় ধাপে এগিয়ে যাওয়ার আহ্বান জানায়।

সর্বশেষ

সর্বাধিক সবার কাছের