দীর্ঘ ১৫ মাসের রক্তক্ষয়ী সংঘাত শেষে গাজায় যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়েছে হামাস ও ইসরায়েল। রোববার (১৯ জানুয়ারি) থেকে এ যুদ্ধবিরতি কার্যকর হবে। ইসরায়েলের মন্ত্রিসভা এই চুক্তি অনুমোদন করেছে। সংঘাতে প্রায় ৪৭ হাজার ফিলিস্তিনি প্রাণ হারান এবং লক্ষাধিক মানুষ আহত হন।
কাতারের মধ্যস্থতায় হওয়া এই চুক্তির আওতায় গাজায় সংঘাত বন্ধের পাশাপাশি বন্দি মুক্তির পথ উন্মুক্ত হয়েছে। প্রথম ধাপে ছয় সপ্তাহের জন্য যুদ্ধবিরতি কার্যকর থাকবে। এতে আরও মধ্যস্থতা করেছে যুক্তরাষ্ট্র ও মিসর।
কাতারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মাজেদ আল-আনসারী এক্সে এক বিবৃতিতে বলেন, চুক্তির পক্ষ এবং মধ্যস্থতাকারীদের সমন্বয় অনুসারে গাজা উপত্যকায় যুদ্ধবিরতি শুরু হবে ১৯ জানুয়ারি রোববার গাজার স্থানীয় সময় সকাল ৮টা ৩০ মিনিটে।
গতকাল ইসরায়েলের জোট সরকারের মন্ত্রিসভায় যুদ্ধবিরতির চুক্তি অনুমোদন পায়।
যুদ্ধবিরতির এ সময়ে:
বন্দি বিনিময়: হামাস ৩৩ জন ইসরায়েলি বন্দিকে মুক্তি দেবে, যাদের মধ্যে নারী, শিশু এবং ৫০ বছরের বেশি বয়সী পুরুষ রয়েছেন। বিনিময়ে ইসরায়েলের কারাগারে থাকা ফিলিস্তিনি বন্দিদের মুক্তি দেওয়া হবে।
ত্রাণ সরবরাহ: রাফাহ সীমান্ত দিয়ে গাজায় প্রতিদিন ৬০০ ট্রাক ত্রাণ ও চিকিৎসাসামগ্রী প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হবে। জ্বালানি সরবরাহে ৫০টি লরি পাঠানো হবে।
সেনা প্রত্যাহার: ইসরায়েলি বাহিনী গাজার সীমান্ত থেকে ৭০০ মিটার দূরে অবস্থিত এলাকায় অবস্থান নেবে এবং গাজা উত্তরের বেসামরিক নাগরিকদের তাদের বাড়িতে ফিরে যেতে দেবে।
আহতদের চিকিৎসা: ইসরায়েল আহত ফিলিস্তিনিদের গাজা ত্যাগের অনুমতি দেবে এবং রাফাহ ক্রসিং খুলে দেওয়া হবে।
যদি প্রথম ধাপ সফল হয়, দ্বিতীয় ধাপে স্থায়ী যুদ্ধবিরতির আলোচনা এবং গাজা থেকে ইসরায়েলি সেনা সম্পূর্ণ প্রত্যাহারের ব্যবস্থা করা হবে। তৃতীয় ধাপে নিহতদের মরদেহ ফেরত ও গাজার পুনর্গঠনের কাজ শুরু হবে, যা পরিচালিত হবে মিসর, কাতার এবং জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন চুক্তি কার্যকর করার জন্য নিজের কৃতিত্ব দাবি করেছেন এবং এর তদারকির জন্য কায়রোতে একটি যৌথ কার্যক্রম কক্ষ স্থাপন করা হবে। তবে ইসরায়েলের জাতীয় নিরাপত্তামন্ত্রী বেন গাভির এই চুক্তিতে অসন্তোষ প্রকাশ করে পদত্যাগের হুমকি দিয়েছেন।
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের হামলার পর ইসরায়েল গাজায় টানা সামরিক অভিযান চালায়। এতে ৪৭ হাজার ফিলিস্তিনি নিহত হন এবং বাস্তুচ্যুত হন ২৩ লাখ মানুষ। এই সংঘাত বন্ধে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রচেষ্টায় এ যুদ্ধবিরতি চুক্তি সম্ভব হয়েছে।
যুদ্ধবিরতি কার্যকরের মধ্য দিয়ে গাজার দীর্ঘ সংঘাতের অবসান হতে যাচ্ছে। তবে শান্তি ও স্থিতিশীলতার পথে এখনও অনেক চ্যালেঞ্জ রয়ে গেছে।
রেডিওটুডে নিউজ/আনাম