প্রখ্যাত ভারতীয় চলচ্চিত্র নির্মাতা শ্যাম বেনেগাল (৯০) মারা গেছেন। বহু দিন ধরেই বা বার্ধক্যজনিত অসুস্থতায় ভুগছিলেন তিনি। এছাড়া কিডনি সংক্রান্ত সমস্যাও ছিল তার।
সোমবার (২৩ ডিসেম্বর) ভারতীয় সময় সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টার দিকে মুম্বাইয়ের একটি হাসপাতালে তার মৃত্যু হয়।
বেনেগালের মৃত্যুর খবরটি ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে জানিয়েছেন মেয়ে পিয়া বেনেগাল।
শ্যাম বেনেগালের পরিচালনায় ২০২৩ সালে মুক্তি পায় শেখ মুজিবুর রহমানের জীবন অবলম্বনে সিনেমা ‘মুজিব: একটি জাতির রূপকার’। ভারত ও বাংলাদেশের যৌথ প্রযোজনায় নির্মিত হয়েছিল সিনেমাটি।
শ্যাম বেনেগাল ভারতীয় চলচ্চিত্রে একটি যুগ সৃষ্টি করেছেন, বিশেষ করে সমান্তরাল ধারার সিনেমার ক্ষেত্রে। তার চলচ্চিত্রের মাধ্যমে তিনি ভারতীয় সমাজের জটিলতা, বাস্তবতা এবং সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যের গভীর চিত্র তুলে ধরেছিলেন।
১৯৩৯ সালের ১৪ ডিসেম্বর হায়দরাবাদে জন্ম নেওয়া শ্যাম বেনেগাল চলচ্চিত্রের প্রতি তার ভালোবাসা থেকে একটি অসাধারণ যাত্রা শুরু করেন। তিনি প্রথমে টেলিভিশন এবং তথ্যচিত্র নির্মাণে কাজ শুরু করেন, এরপর ১৯৭০-এর দশকে ফিচার ফিল্ম নির্মাণে প্রবেশ করেন। তার প্রথম পূর্ণদৈর্ঘ্য ছবি ‘অঙ্কুর’ (১৯৭৪) এক নতুন ধারার সিনেমার সূচনা করে, যেখানে মূলধারা বোলিউডের বানানো চলচ্চিত্রের তুলনায় বাস্তবধর্মী এবং সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি উঠে আসে।
বেনেগালের কিছু অতি জনপ্রিয় চলচ্চিত্রের মধ্যে রয়েছে ‘নিশান্ত’ (১৯৭৫), ‘মন্থন’ (১৯৭৬), ‘ভূমিকা’ (১৯৭৭), এবং ‘কালিযুগ’ (১৯৮১)। তার এসব কাজের প্রতিটিতেই দেখা যায়, তিনি সমাজের নানা স্তরের মানুষ, তাদের সম্পর্ক এবং দ্বন্দ্বগুলোকে খুবই নিখুঁতভাবে চিত্রিত করেছেন। তিনি সমাজের অবহেলিত মানুষদের কাহিনির মাধ্যমে একটি নতুন দৃষ্টি দিয়েছিলেন ভারতীয় সিনেমায়।
তার কাজের জন্য বেনেগাল বহু জাতীয় পুরস্কার লাভ করেছেন, তবে তার আসল মূল্যায়ন শুধু পুরস্কারেই সীমাবদ্ধ নয়। তিনি একজন শিক্ষাগুরুর মতো কাজ করেছেন, বহু নতুন চলচ্চিত্র নির্মাতাদের প্রেরণা দিয়েছেন এবং ভারতীয় সিনেমায় স্বাধীন এবং অর্থপূর্ণ চলচ্চিত্র নির্মাণের জন্য আন্দোলন সৃষ্টি করেছেন।
বেনেগাল টেলিভিশন জগতেও অবদান রেখেছিলেন, যার মধ্যে অন্যতম হল ‘ভারত এক খোঁজ’ (১৯৮৮), যা জওহরলাল নেহরুর ‘ডিসকভারি অফ ইন্ডিয়া’ বইয়ের ওপর ভিত্তি করে নির্মিত। এই সিরিজটি দর্শকদের মাঝে শিক্ষা এবং বিনোদন মিলিয়ে ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করেছিল।
রেডিওটুডে নিউজ/আনাম