সাম্প্রতিক পরিস্থিতিতে পশ্চিমবঙ্গ ও ত্রিপুরার কিছু হোটেল বাংলাদেশি পর্যটকদের বয়কটের ডাক দিয়েছে। কিন্তু সেই পথে হাঁটলো না কলকাতার নিউ মার্কেটের ‘মার্কুইস স্ট্রিট-ফ্রি স্কুল স্ট্রিট ওয়েলফেয়ার সোসাইটি’, ‘নিউ মার্কেট ট্রেড অ্যাসোসিয়েশন’, ‘হোটেল অনার্স অ্যাসোসিয়েশন’। বাংলাদেশি পর্যটকদের উদ্দেশ্যে তাদের বার্তা ‘আমরা বাংলাদেশিদের বয়কট করব না। তারা যেন নিশ্চিন্তে এখানে আসেন। যতটা পারবো তাদেরকে নিরাপত্তা দেব।’
শনিবার (৭ ডিসেম্বর) সংবাদ সম্মেলনে করে এই সংগঠনগুলোর পক্ষ থেকে এ তথ্য জানানো হয়েছে। ‘মার্কুইস স্ট্রিট-ফ্রি স্কুল স্ট্রিট ওয়েলফেয়ার সোসাইটি’এর যুগ্ম সচিব মনতোষ সরকার বলেন, ‘নিউমার্কেট মূলত বাংলাদেশ ভিত্তিক অঞ্চল। বাংলাদেশি পর্যটকদের ওপর নির্ভর করে এখানকার মানি এক্সচেঞ্জ, হোটেল, পর্যটক ব্যবসা চলছে তাই তাদের অনুপস্থিতি আমাদের এখানে প্রভাব ফেলছে। যদিও বাংলাদেশকে আমরা বিদেশি পর্যটক হিসেবে দেখি না, তারা আমাদের ঘরের সদস্য। কিন্তু সাম্প্রতিক পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ পর্যটকের সংখ্যা অনেকই কম। তবে আশা করি আগামী দিনে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে যাবে।’
তার অভিমত ‘সম্পর্ক নষ্ট করার জন্য কিছু গুজব ছড়াচ্ছে, কিন্তু সেদিকে কান না দিয়ে বাংলাদেশের পর্যটকদের জানাবো তারা এখানে আসুন। কারণ দুই দেশের মধ্যে খুব ভালো সম্পর্ক রয়েছে। দুই দেশেই ব্যবসায়ীরা রয়েছেন তাই, আমাদের উভয়পক্ষকেই এই সমস্যার সমাধানের জন্য এগিয়ে আসতে হবে।’
কলকাতার এমআরএল হোটেলের মালিক মনতোষ সরকার জানান, আমার হোটেলের ৮০ শতাংশ পর্যটক বাংলাদেশি, বাকি ২০ শতাংশ ভারতীয় পর্যটক। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতিতে ভারতীয় পর্যটনের সংখ্যা ৬০ শতাংশ।’
তিনি জানান, ‘ডিসেম্বরে বাংলাদেশের পর্যটক আসছেন কিন্তু সেই সংখ্যাটা খুবই কম। আমরা এটুকুই বলতে চাই, বাংলাদেশিরা সকলেই আসবেন, তাদের স্বাগত। ওরা সেবা পায় বলেই আমাদের এখানে আসে। আমরাও আমাদের সাধ্য মতন তাদের সেই পরিষেবা দেবো।’
এক্সপোর্ট ইমপোর্ট, বৈদেশিক মুদ্রা বিনিময়, পরিবহন ব্যবসায়ী মুহাম্মদ আলী হোসেইন শেখ জানান, ‘৫ আগস্টের পর থেকে আমার ব্যবসা ডুবতে বসেছে। কারণ আমরা ভারতীয় এক্ষেত্রে এই পরিস্থিতিতে হওয়া দরকার। আমাদের দেশ ভারত, ওপারে যারা আছে তাদের দেশ বাংলাদেশ।’
ভিসা প্রক্রিয়া শিথিল করার দাবি জানিয়ে আলী হোসেন জানান, বর্তমানে যে অবস্থা জারি রয়েছে, তাতে বাংলাদেশের চাহিদা মিটছে না। সেইসাথে মাল্টিপল ভিসা, এমপ্লয়মেন্ট ভিসা চালু করার দাবি জানান তিনি। তিন মাসের জন্য এই ভিসা দেওয়া যেতে পারে। যদিও ভিসা বিষয়টি দুই দেশের আভ্যন্তরীণ ব্যাপার বলে মনে করেন তিনি। ব্যবসা বান্ধব পরিস্থিতি ফিরিয়ে আনার জন্য ভারত সরকারের কাছেও আবেদন জানান তিনি। বাংলাদেশি পর্যটকদের নির্ভয়ে কলকাতায় আসার কথা জানিয়ে তিনি বলেন ‘কলকাতা আসা ও ভ্রমণের ক্ষেত্রে কোনো সমস্যা নেই।’
মার্কুইস স্ট্রিট-ফ্রি স্কুল স্ট্রিট ওয়েলফেয়ার সোসাইটির সভাপতি মনতোষ সাহা বলেন, কয়েক বছর আগে বাংলাদেশ থেকে পর্যটকদের যে ঢল ছিল, সেটা এখন নেই। যার কারণে আমরা সবাই অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত। তেমনিভাবে বাংলাদেশিরাও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। তবে সবার আগে আমার দেশ। দুই দেশের সরকারকে নিজেদের মধ্যে বসে সুষ্ঠু সমাধান বের করার জন্য আহ্বান জানান মনতোষ সাহা। তিনি জানান, ‘মূলত ডিসেম্বর থেকে সিজন শুরু হয়। প্রতিদিন পাঁচ থেকে সাত হাজার বাংলাদেশি নাগরিক এই কলকাতায় আসেন। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ থেকে আসা পর্যটকদের সংখ্যা ৫ শতাংশ নেমে এসেছে।’
রেডিওটুডে নিউজ/আনাম