ভারতীয় ধনকুবের গৌতম আদানির বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রে প্রতারণার অভিযোগে মামলা দায়ের করা হয়েছে। অত্যন্ত গোপনে ২৫০ মিলিয়ন ডলার ঘুষ দেওয়ার জন্য এবং যুক্তরাষ্ট্রে অর্থ সংগ্রহের জন্য আদানিকে অভিযুক্ত করা হয়েছে। গত বুধবার নিউইয়র্কে এসব ফৌজদারি অভিযোগ দায়ের করা হয়।
ভারতের এই ধন কুবেরের ব্যবসায়িক সাম্রাজ্য বন্দর, এয়ারপোর্ট থেকে শুরু করে নবায়নযোগ্য জ্বালানিতেও বিস্তৃত। এই ব্যবসায়ী ও তার সিনিয়র কর্মকর্তারা তার নবায়নযোগ্য জ্বালানির কোম্পানির জন্য লাভ করতে ভারতীয় কর্মকর্তাদের ঘুষ দিতে রাজি হয়েছিলেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
২০২০ সালের প্রথম দিকে ভারতের সোলার এনার্জি কর্পোরেশন ১২ গিগাওয়াট সোলার প্রজেক্টের জন্য আদানি গ্রিন এনার্জি এবং অ্যাজুর পাওয়ার গ্লোবালের সঙ্গে চুক্তি করে। তবে স্থানীয় বিদ্যুৎ কোম্পানিগুলো নতুন সোলার বিদ্যুৎ কেনার ব্যাপারে অনিচ্ছা প্রকাশ করলে প্রকল্পটি বাধার মুখে পড়ে। চুক্তি বাঁচাতে আদানি স্থানীয় কর্মকর্তাদের ঘুষ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় বলে মার্কিন কর্তৃপক্ষ অভিযোগ করেছে।
এ ঘটনায় গৌতম আদানি এবং তার সাত সহযোগীর বিরুদ্ধে ফৌজদারি অভিযোগ করেছে মার্কিন কর্তৃপক্ষ। মার্কিন সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (এসইসি) এবং বিচার বিভাগ এই অভিযোগগুলো সামনে এনেছে। আদানি গ্রুপ এই অভিযোগগুলোকে ‘ভিত্তিহীন’ বলে উল্লেখ করেছে এবং আইনি পদক্ষেপ নেবে বলে জানিয়েছে।
মার্কিন এসইসি’র অভিযোগ অনুসারে, আদানি গ্রিনের প্রধান সাগর আদানি এবং অ্যাজুরের তৎকালীন সিইও রঞ্জিত গুপ্ত হোয়াটসঅ্যাপে ঘুষ নিয়ে আলোচনা করেন। সাগর আদানি এক পর্যায়ে লিখেছিলেন, ‘আমরা প্রণোদনা দ্বিগুণ করেছি, যাতে তারা গ্রহণে বাধ্য হয়।’
ঘুষের প্রস্তাব ও চুক্তি
২০২১ সালের আগস্টে আদানি অন্ধ্র প্রদেশের এক কর্মকর্তার সঙ্গে বৈঠক করেন এবং ২২৮ মিলিয়ন ডলার ঘুষ দেওয়ার প্রস্তাব দেন বলে অভিযোগ করা হয়। ওই বছরের ডিসেম্বরে অন্ধ্র প্রদেশ বিদ্যুৎ কেনার জন্য রাজি হয়।
মার্কিন তদন্ত
২০২২ সালের মার্চে এসইসি অ্যাজুরকে সাম্প্রতিক চুক্তি সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করে। এপ্রিলে গৌতম আদানি অ্যাজুর প্রতিনিধিদের সঙ্গে একটি বৈঠকে জানান, তিনি ঘুষের জন্য ৮০ মিলিয়ন ডলার ফেরত আশা করছেন।
মার্কিন আদালতের পদক্ষেপ
২০২৩ সালের মার্চে এফবিআই সাগর আদানির ইলেকট্রনিক ডিভাইস জব্দ করে। ২০২৩ সালের অক্টোবর মাসে ব্রুকলিনের ফেডারেল কোর্ট একটি গোপন গ্র্যান্ড জুরি অভিযোগ দায়ের করে। এই অভিযোগ উন্মোচনের পর আদানি গ্রুপের ২৭ বিলিয়ন ডলারের শেয়ারমূল্যে পতন ঘটে।
আর্থিক প্রভাব
অভিযোগের পর আদানি গ্রিন এনার্জি ৬০০ মিলিয়ন ডলারের একটি বন্ড বিক্রি বাতিল করে। এই কেলেঙ্কারি আন্তর্জাতিক বিনিয়োগে স্বচ্ছতা এবং ভারতের নবীকরণযোগ্য শক্তি খাতের শাসন নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। আদানি গ্রুপ অভিযোগগুলোকে ‘ভিত্তিহীন’ বলে অস্বীকার করেছে এবং সব আইনি পদক্ষেপ গ্রহণের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। তবে, এ ঘটনা আদানি গ্রুপের কার্যক্রম এবং বিনিয়োগকারীদের সুরক্ষার ওপর ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে। সূত্র: রয়টার্স