মিষ্টি মিষ্টি কথা বলে বন্ধুত্ব গড়ে তোলার পর পানীয়ের সঙ্গে ভয়ঙ্কর বিষ সায়ানাইড মিশিয়ে হত্যা করতেন এক থাই নারী। এভাবে ১৪ জনকে হত্যা করেছেন তিনি। কিন্তু শেষ রক্ষা হলো না। বিষাক্ত সায়ানাইড দিয়ে ১৪ বন্ধুকে হত্যার দায়ে অভিযুক্ত ওই নারীকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছে থাইল্যান্ডের এক আদালত।
বুধবার, ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা বিবিসি এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, গত বছর ভ্রমণে গিয়ে খাবার ও পানীয়র সঙ্গে বিষ মিশিয়ে এক ধনী বন্ধুকে হত্যা করার জন্য ৩৬ বছর বয়সের নারী সারারাত রাংসিউ থাপোর্নকে দোষী সাব্যস্ত করেছে থাইল্যান্ডের রাজধানী ব্যাংককের একটি আদালত।
গত বছরের এপ্রিলে, থাইল্যান্ডে ১৩ ব্যক্তিকে বিষাক্ত উপকরণ সায়ানাইডযুক্ত ট্যাবলেট ব্যবহার করে হত্যার অভিযোগে পুলিশ সারারাত গ্রেপ্তার করেছে। এরপর পুলিশ তার বিরুদ্ধে তদন্ত প্রক্রিয়াকে আরও বিস্তৃত করে। পরে তদন্তে বেরিয়ে আসে ১৪ জনকে তিনি সুপরিকল্পিতভাবে হত্যা করেছেন।
থাই পুলিশ জানিয়েছে, বড় বোনের দোকান থেকে বিষাক্ত সায়ানাইড বিষ সংগ্রহ করা করতেন সারারাত। নিহতদের সবাই সারারাতের পরিচিত ছিলেন। খুব সম্ভবত আর্থিক কারণে তাদেরকে হত্যা করা হয়েছে। বিষপ্রয়োগের শিকার হয়েও এক নারী বেঁচে আছেন। তার সাক্ষ্য মামলায় বিশেষ ভূমিকা রেখেছে।
সারারাতের এক ভ্রমণসঙ্গীর, যিনি হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছিলেন, তার কথা উল্লেখ করে পুলিশ জানায়, নিহত ব্যক্তির পরিবারের সদস্যরা সারারাতের বিষয়ে তাদের সন্দেহের কথা কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছিলেন। এরপরেই পুলিশ তদন্ত নামার পর বেরিয়ে আসতে শুরু করে চাঞ্চল্যকর সব তথ্য।
ময়নাতদন্তে ওই ব্যক্তির শরীরে সায়ানাইডের উপস্থিতি পাওয়া যায়। এই অবস্থায় সারারাতকে গ্রেপ্তার করে থাই পুলিশ এবং ২০১৫ সালের পর থেকে এমন আরও কয়েকটি মৃত্যুর ঘটনায়ও সারারাতের সম্পৃক্ততা খুঁজে পায়। পাশাপাশি সৌভাগ্যজনকভাবে তাঁর হাত থেকে বেঁচে যাওয়া একজনেরও হদিস পাওয়া যায়।
পুলিশ জানিয়েছে, থাইল্যান্ডের গণমাধ্যমে ‘অ্যাম সায়ানাইড’ হিসেবে পরিচিতি পেয়েছেন সারারাত। জুয়া খেলার প্রতি আসক্তি ছিল তাঁর। টাকা পায় এমন বন্ধুদেরই টার্গেট করতেন তিনি। পরে সায়ানাইড দিয়ে হত্যা করে তাঁদের গয়না এবং মূল্যবান জিনিসপত্র চুরি করতেন।
পুলিশ আরও জানিয়েছে, গত বছরের এপ্রিলে ৩২ বছর বয়সী বন্ধু সিরিপর্ন খানওংকে সঙ্গে নিয়ে ব্যাংককের পশ্চিমে অবস্থিত রাচাবুরি প্রদেশে ভ্রমণ করতে গিয়েছিলেন সারারাত। সেখানে খাবার গ্রহণের পর সিরিপর্ন গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন। একপর্যায়ে তিনি মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন।
কিন্তু এই সময়টিতে মরণাপন্ন বন্ধুকে সাহায্য করার কোনো চেষ্টাই করেননি সারারাত রাংসিউ থাপোর্ন। ময়নাতদন্তে সিরিপর্নের শরীরে সায়ানাইডের চিহ্ন পাওয়া যায়। যেখান থেকে তাকে উদ্ধার করা হয়েছিলো সেখান থেকে তার ফোন, টাকা এবং ব্যাগ খোয়া গিয়েছিল বলেও জানায় পুলিশ।
আদালতে মৃত্যুদণ্ডের রায় ঘোষণার সময় কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে সারারাত হাসছিলেন। এর আগে তিনি নিজেকে নির্দোষ দাবি করেছিলেন। বিচারে সারারাতের স্বামী সহ তাঁর আইনজীবী ও একজন সাবেক পুলিশ কর্মকর্তাকেও বিচার এড়াতে প্রমাণ লোপাটের জন্য অভিযুক্ত করেছেন আদালত।
সায়ানাইড শরীরে প্রবেশ করলে তা অক্সিজেন কোষকে প্রভাবিত করে। এর ফলে হার্ট অ্যাটাকে আক্রান্ত হন ওই ব্যক্তি। সায়ানাইডের প্রাথমিক লক্ষণগুলোর মধ্যে আছে- মাথা ঘোরা, শ্বাসকষ্ট এবং বমি হওয়া। এই বিষের ছোট্ট একটি ডোজও মানুষের মৃত্যু ডেকে আনতে পারে। আর পরিমাণ বেশি হলে মাত্র এক সেকেন্ডের মধ্যেই মানুষের মৃত্যু ঘটাতে পারে।