শুক্রবার,

০৩ জানুয়ারি ২০২৫,

১৯ পৌষ ১৪৩১

শুক্রবার,

০৩ জানুয়ারি ২০২৫,

১৯ পৌষ ১৪৩১

Radio Today News

জার্মানি কেন সবসময় ইতিহাসের নিকৃষ্ট অপরাধীদের পাশে থাকে?

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

প্রকাশিত: ১৮:২৩, ৩ নভেম্বর ২০২৪

Google News
জার্মানি কেন সবসময় ইতিহাসের নিকৃষ্ট অপরাধীদের পাশে থাকে?

গত আশি বছর ধরে জার্মানি তার চরিত্রের এমন একটি বৈশিষ্ট্য বিশ্বের কাছে প্রকাশ করেছে যা সম্ভবত খুব কম দেশের এই বৈশিষ্ট রয়েছে। প্রায় আশি বছর ধরে সারা বিশ্বে অনেক যুদ্ধাপরাধের জন্য জার্মানি দায়ী।

পার্সটুডের মতে বার্তা সংস্থা ইরনা একটি নিবন্ধে অশিতেজ থেকে গাজা পর্যন্ত; জার্মানির পা সবসময় সেখানে ছিল। জার্মানির ইতিহাসে ইসরাইলের অপরাধযজ্ঞকে সমর্থন করার ক্ষেত্রে জার্মানদের আমূল আচরণ বিশ্লেষণ করা হয়েছে এই নিবন্ধে। পাঠকদের জন্য তা তুলে ধরা হলো।

গত আশি বছর ধরে জার্মানি এমন একটি বৈশিষ্ট্য বিশ্বকে দেখিয়েছে যা সম্ভবত  খুব  কম কয়েকটি দেশেই এই বৈশিষ্ট্যের খোঁজ পাওয়া যাবে। প্রায় আশি বছর ধরে জার্মানি সারা বিশ্বে অনেক যুদ্ধাপরাধের জন্য দায়ী,দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে রুশ জনগণের ওপর নৃশংস হত্যাকাণ্ড, সেই যুদ্ধের সময় ইহুদিদের হত্যা, ইরাকি বাথ সরকারের কাছে রাসায়নিক অস্ত্রের উৎপাদন ও রপ্তানি এবং ইরানী যোদ্ধাদের বিরুদ্ধে সাদ্দামের জার্মান রাসায়নিক বোমার ব্যবহার এবং সারদাশত ও হালাব্জার জনগণের ওপর নিপীড়ণ চালানো এবং সেইসঙ্গে ইহুদিবাদী ইসরাইলকে সব ধরনের আর্থিক, অস্ত্র এবং আন্তর্জাতিক সমর্থন এই আট দশকে জার্মানির শাসকদের ধারাবাহিক অপরাধযজ্ঞের কিছু উদাহরণ।

ইতিমধ্যে গাজা যুদ্ধ,ফিলিস্তিনি ইস্যু মোকাবেলায় জার্মান সরকারের দ্বৈত নীতির  পাশাপাশি এই দেশে বাকস্বাধীনতার মিথ্যা দাবি উন্মোচিত হওয়ায় ইসরাইলের ধারাবাহিক অপরাধযজ্ঞের বিষয়ে জার্মানির সমর্থনের জন্য একটি নতুন ক্ষেত্র হয়ে উঠেছে।

কেবল ২০২৩ সালে জার্মান সরকার মোট ৩২৬.৫ মিলিয়ন ইউরো মূল্যের অস্ত্র রপ্তানি করার অনুমতি দেয় যার মধ্যে ২০ মিলিয়ন ইউরো অস্ত্র ও গোলাবারুদ এবং বাকি  অর্থ প্রতিরক্ষা সরঞ্জামের সরবরাহের জন্য বরাদ্ধ দেয়া হয়েছিল।  

এসব সরঞ্জামের মধ্যে রয়েছে ৩,০০০টি মোবাইল অ্যান্টি-ট্যাঙ্ক অস্ত্র, স্বয়ংক্রিয় এবং আধা-স্বয়ংক্রিয় অস্ত্রের জন্য ৫ লাখ রাউন্ড গোলাবারুদ, অন্যান্য ইঞ্জিন, সাঁজোয়া যান, সামরিক ট্রাক এবং বুলেটপ্রুফ গ্লাস।

২০২৩ সালের শেষ পর্যন্ত ইসরাইলে জার্মান সামরিক রপ্তানির মাত্র ৩৮.৫ মিলিয়ন ইউরো অনুমোদন দেয়া হয়েছিল তবে গাজার জনগণের বিরুদ্ধে ইসরায়েলের নিষ্ঠুর যুদ্ধ শুরু হওয়ার পরে এই সংখ্যাটি দ্রুত বৃদ্ধি পেয়েছে।

জার্মানির ফেডারেল ডিপার্টমেন্ট অফ ইকোনমিক অ্যাফেয়ার্স এবং এক্সপোর্ট কন্ট্রোল ২০২৩ সালের নভেম্বরে বিদেশে জার্মান অস্ত্র রপ্তানির বিষয়ে ঘোষণা দিয়েছিল যে গাজায় ইহুদিবাদী শাসকদের যুদ্ধের ফলে "ইসরাইলে সামরিক সরঞ্জাম রপ্তানি কর্মসূচি" সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে। এর ভিত্তিতে ইসরাইলে  জার্মান অস্ত্র রপ্তানির অংশ ২০২২ সালে ২ ভাগ থেকে বেড়ে প্রায় ৬ ভাগ হয়েছে। ইহুদিবাদী শাসক বর্তমানে জার্মান সামরিক প্রযুক্তির প্রধান গ্রাহকদের মধ্যে সপ্তম স্থানে রয়েছে।

জার্মানির কাছ থেকে ৪ বিলিয়ন ইউরোর বেশি পেয়ে ইউক্রেন তালিকার শীর্ষে রয়েছ। যেখানে নরওয়ে এবং হাঙ্গেরি যথাক্রমে দ্বিতীয় এবং তৃতীয় স্থানে রয়েছে এবং উভয়ই ১ বিলিয়ন ইউরোর বেশি জার্মান অস্ত্র কিনেছে।

জার্মান চ্যান্সেলর ওলাফ শুলজ ২০২৪ সালের মার্চ মাসে বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে দেখা করেন এবং ইহুদিবাদী শাসকদের পদক্ষেপকে সমর্থন করে অধিকৃত ফিলিস্তিন সফরের ঘোষণা দেন।

গাজা যুদ্ধের সময় জার্মানি শিশু-হত্যাকারী ইহুদিবাদী শাসনের সমর্থনে সবচেয়ে চরম অবস্থান নেয়। ইহুদিবাদী সেনাবাহিনীর অপরাধযজ্ঞ যখন বিশ্বকে নাড়া দিয়েছিল তখন জার্মান সরকারের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা জোর দিয়ে বলতে থাকেন যে সেনাবাহিনী আন্তর্জাতিক আইন মেনে চলছে এবং মানবাধিকারের উপর নির্ভর করে হামলা চালাচ্ছে!

এটা লক্ষণীয় যে বহু বছর ধরে জার্মানিতে যে কোনো বিরোধী দলকে "ইহুদি-বিরোধী" অভিযোগে দমন করা হয়েছে এবং গাজা যুদ্ধের সময় এই দমন পীড়ন চরমে পৌঁছেছিল। এই নীতি জার্মানিকে একটি কঠিন অবস্থানে ফেলেছে যখন ইসরাইলি শাসক গোষ্ঠী বিশ্বে আরও বেশি এক ঘরে হয়ে পড়ছে।

কিছুদিন আগে নিকারাগুয়া সরকার গাজায় গণহত্যায় সহযোগিতা করার জন্য আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে জার্মানির বিরুদ্ধে মামলা করেছে। অবশ্য সেই আদালতে ইহুদিবাদী শাসনের বিরুদ্ধে দক্ষিণ আফ্রিকার অভিযোগে জার্মান সরকারও এই শাসনকে পূর্ণ সমর্থন করেছিল! বিশ্বের সবচেয়ে বড় গণহত্যা ও যুদ্ধাপরাধের মুখে এটা জার্মান সরকারের লজ্জাজনক কর্মকাণ্ডের একটি ক্ষুদ্র অংশ।

সর্বশেষ

সর্বাধিক সবার কাছের