মিয়ানমারে সংঘাতে জড়িত দলগুলোর মধ্যে অনড় অবস্থানের সমালোচনা করে মিয়ানমার বিষয়ে জাতিসংঘের বিশেষ দূত জোর দিয়ে বলেছেন,মিয়ানমারের সংকট ভুলে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
জুলি বিশপ এসব কথা বলে আরো জোর দিয়ে বলেন, কেবল সংঘাত বন্ধ করার মাধ্যমেই আমরা একত্রিত হওয়ার এবং শান্তির পথ খুঁজে পেতে পারি। ইউক্রেন এবং পশ্চিম এশিয়ার আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক সংকটের কারণে যখন মিয়ানমারের পরিস্থিতি বিশেষ করে রোহিঙ্গা মুসলিমদের চলমান সংকট আন্তর্জাতিক ফোরামে আর সেভাবে আলোচনা হচ্ছে না তখন তিনি এসব মন্তব্য করলেন।
এদিকে মিয়ানমারে চরমপন্থী গোষ্ঠীগুলোর মাধ্যমে গণহত্যার সবচেয়ে খারাপ অবস্থার মুখোমুখি হচ্ছে রোহিঙ্গা মুসলিমরা। প্রায় ১৫ লাখের বেশি রোহিঙ্গা মুসলমান জীবন বাঁচাতে মিয়ানমার থেকে পালিয়ে বাংলাদেশ,ভারত,ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া এমনকি সৌদি আরবে শরণার্থী হিসেবে বসবাস করছে।
তাই জাতিসংঘের বিশেষ দূতের মিয়ানমার সফর রোহিঙ্গা মুসলমানদের সমস্যার প্রতি বিশ্বব্যাপী দৃষ্টি আকর্ষণ করতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। জুলি বিশপ বলেন, যতদিন মিয়ানমার জুড়ে সশস্ত্র সংঘাত চলবে ততদিন জনগণের চাহিদা পূরণে সামান্য অগ্রগতি হবে।
মিয়ানমারের সেনাবাহিনী যারা ২০২১ সালে একটি অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতা দখল করেছিল এখন তারা গত বছর থেকে সশস্ত্র গোষ্ঠী বিশেষ করে জাতিগত গোষ্ঠীগুলির জোট থেকে সৃষ্ট সংঘাতের মুখোমুখি হচ্ছে। যদিও এসব সংঘাতের বেশিরভাগই মিয়ানমার ও চীনের সীমান্তের কাছে সংঘটিত হয় তবে মিয়ানমারে রোহিঙ্গা মুসলমানদের অব্যাহত গণহত্যা নিয়ে অনেক প্রতিবেদন নীরবে প্রকাশিত হয়েছে। এরফলে তারা সামরিক বাহিনী ও মন্দিরে বৌদ্ধ চরমপন্থী গোষ্ঠীর অপরাধজ্ঞের শিকার হয়েছে। এদিকে মিয়ানমারে বৌদ্ধ ধর্মকে শুদ্ধ করার কার্যক্রম সম্পন্ন করতে জাতিগত গোষ্ঠীগুলোর সঙ্গে তথাকথিত সংঘর্ষের নামে রোহিঙ্গা মুসলমানদের হত্যা করছে এসব দল।
এই কারণে মিয়ানমারে জাতিসংঘের বিশেষ দূত জোর দিয়ে বলেন যে শান্তি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে যেকোনো পথের জন্য সহিংসতার অবসান ঘটানোর পাশাপাশি জবাবদিহীতা বাধ্য করা এবং জাতিসংঘ এবং তার অংশীদারদের রোহিঙ্গা মুসলিম সংখ্যালঘুদের মতো জাতিগত গোষ্ঠীগুলির কাছে নিঃশর্ত প্রবেশাধিকার প্রয়োজন।
২০১৭ সালের আগস্ট মাসে সংখ্যালঘু মুসলিমদের বিরুদ্ধে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর অভিযানের পর থেকে রোহিঙ্গা মুসলমানদের ব্যাপকভাবে দেশত্যাগ শুরু হয়। তখন থেকে প্রায় এক মিলিয়ন দুই লাখের বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছে এবং বাংলাদেশের কক্সবাজারে শরণার্থী শিবিরে বসবাস করছে। যাইহোক উদ্বেগ বাড়াচ্ছে যেটি তা হল রোহিঙ্গা মুসলিম উদ্বাস্তুদের আয়োজক দেশগুলোর প্রচেষ্টা বিশেষ করে বাংলাদেশ তাদের মধ্যে যতটা সম্ভব ভাষাণ চরসহ প্রত্যন্ত দ্বীপে পাঠানোর জন্য তৎপরতা চলছে যেখানে বসবাসের কোনো অবস্থা নেই।
মিয়ানমার বিষয়ক জাতিসংঘের প্রতিনিধির মতে এই দেশের পরিস্থিতি একটি ভুলে যাওয়ার সঙ্কটে পরিণত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে এবং মিয়ানমারের জনগণ অনেক দুর্ভোগ সহ্য করার পরে তাদের আরও ভাল অবস্থায় ফিরে যাওয়ার অধিকার রয়েছে এবং সেই সঙ্গে আশ্রয় ক্যাম্পে বসাবাসরত রোহিঙ্গা মুসলমানদে জীবনমান উন্নতিসহ তাদেরকে প্রত্যন্ত দ্বীপে পাঠানোর বিষয়ে তৎপরতা বিষয়ে জাতিসংঘকে গুরুত্বসহকারে বিবেচনা করা উচিত। পরিশেষে বর্তমান পরিস্থিতিতে মিয়ানমারে রোহিঙ্গা মুসলমানদের এবং আশ্রয় শিবিরে বিশেষ করে দুর্গম দ্বীপে তাদের পরিস্থিতির প্রতি জাতিসংঘসহ অর্গানাইজেশন অব ইসলামিক কো-অপারেশন বা ওআইসির আরও বেশি নজর দেওয়াই ভালো।