
বাংলাদেশের অন্যতম বৃহত্তম হাওর হাকালুকি হাওর। প্রতি বছর শীতে এই হাওরে বসে অসংখ্য পরিযায়ী পাখির মেলা। প্রতি বছর শীত শেষে এই পাখিরা ফিরে গেলেও এই বছর এখনো অবাধ বিচরন করছে পাখিগুলো। কিন্তু কেন? চলুন শুনে আসি বিস্তারিত…
বাংলাদেশের বৃহত্তম হাওরগুলোর অন্যতম হাকালুকি শীতের আগমনীর সঙ্গে সঙ্গেই সেজে ওঠে নানা রঙের পরিযায়ী পাখিদের মিলনমেলায়। প্রতি বছর ডিসেম্বরের শুরু থেকে ঝাঁকে ঝাঁকে উড়ে আসে দূর দেশ থেকে রং-বেরঙের পাখিরা, যাদের কলকাকলিতে মুখরিত হয়ে ওঠে বিশাল জলাভূমির আকাশ-বাতাস। সাধারণত মার্চ মাস পর্যন্ত চলে তাদের অবাধ বিচরণ। তবে এবার শীত বিদায় নিলেও হাকালুকি হাওরের চিত্র একেবারে ভিন্ন—হাওরে পরিযায়ী পাখিদের আনাগোনা মোটেও কমেনি, বরং বেড়েছে তাদের মনোমুগ্ধকর কলতান।
মৌলভীবাজার জেলার বড়লেখা, জুড়ী, কুলাউড়া এবং সিলেট জেলার ফেঞ্চুগঞ্জ ও গোলাপগঞ্জ উপজেলার বিশাল এলাকা জুড়ে বিস্তৃত এই হাকালুকি হাওরের বিশালতা প্রায় ১৮ হাজার ১১৫ হেক্টর। এই বিস্তৃত জলরাশিতে ছোট-বড় মিলিয়ে রয়েছে ২৩৮টি বিল। এর মধ্যে চাতলা, পিংলা ও নাগুয়া বিল বিশেষভাবে পরিচিতি লাভ করেছে বিভিন্ন প্রজাতির পরিযায়ী পাখির অভয়ারণ্য হিসেবে। এখানে দেখা মেলে ল্যাঞ্জা হাঁস, ভুতি হাঁস, চকাচকি, বেগুনি কালেম, রাজসরালী, পাতিসরালী ও শামুকখোলসহ আরও অসংখ্য প্রজাতির পাখির। তাদের ডানা ঝাপটানো আর মিষ্টি কিচিরমিচির শব্দে মুখরিত থাকে পুরো হাওর এলাকা।
পাখিগণনাকারী প্রতিষ্ঠান বার্ড ক্লাবের সাম্প্রতিক তথ্য অনুযায়ী, এ বছর হাকালুকি হাওরের ৪৫টি বিলে ৩৫ হাজার ২৬৮টি পাখির উপস্থিতি লক্ষ্য করা গেছে। হাওর পাড়ের বাসিন্দাদের মতে, আগের বছরের তুলনায় পাখির সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। একইসঙ্গে বেড়েছে প্রকৃতিপ্রেমী ও পর্যটকদের আনাগোনাও, যারা এই অপরূপ দৃশ্য উপভোগ করতে দূর-দূরান্ত থেকে ছুটে আসছেন।
সিলেটের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা ড. মো. জাহাঙ্গীর আলম জানালেন, হাওরের এই পরিযায়ী পাখিরা শুধু কীটপতঙ্গ ভক্ষণ করেই বাঁচে না, বরং এরা পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায়ও এক অপরিহার্য ভূমিকা পালন করে। এখানকার জীববৈচিত্র্য রক্ষা এবং পাখিদের নিরাপদ আবাস নিশ্চিত করতে সরকার নানা ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। পাখি শিকার রোধে কঠোর নজরদারিও রাখা হচ্ছে।
হাকালুকি হাওরের এই পাখির কলতান কেবল প্রকৃতিপ্রেমীদেরই মুগ্ধ করে না, এটি স্থানীয় বাসিন্দাদের জীবনযাত্রার সঙ্গেও অবিচ্ছেদ্যভাবে মিশে আছে। পরিযায়ী পাখিদের আগমন একদিকে যেমন প্রকৃতির সৌন্দর্য বৃদ্ধি করে, তেমনই পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করে কৃষিক্ষেত্রেও ইতিবাচক প্রভাব ফেলে। শীতের শেষেও হাকালুকিতে পরিযায়ীদের এই অব্যাহত আনাগোনা প্রকৃতি ও মানুষের এক নিবিড় সম্পর্কের কথাই যেন স্মরণ করিয়ে দেয়।