
বিপন্ন প্রজাতির কালো গলার সারসের নিরাপদ আবাসস্থল তৈরিতে সম্প্রতি বেশ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে চীনের ইয়ুননান প্রদেশের প্রশাসন। শীতের সময়ে এখানে যে পরিযায়ী পাখিরা এসেছিল, তাদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে ব্যবহার করা হচ্ছে আধুনিক প্রযুক্তি। ফলে এখানকার জলাভূমিতে বেড়েছে কালো গলার সারসের সংখ্যা। কী কী উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, এবার সেটাই শুনবো বিস্তারিত
চীনের প্রথম শ্রেণির সুরক্ষার অধীনে আছে বিরল প্রজাতির কালো গলার সারস। এ পাখিদের জন্য নিরাপদ আবাসস্থল তৈরিতে সম্প্রতি বেশ কিছু উদ্যোগ নিয়েছে দক্ষিণ-পশ্চিম চীনের ইয়ুননান প্রদেশ ।
পাখি জগতের পান্ডা নামে পরিচিত কালো গলা সারসরা ইয়ুননানের সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে আড়াই থেকে পাঁচ কিলোমিটার উঁচুতে থাকা জলাভূমি, হ্রদ ও প্লাবনভূমিতে বাস করে। এদের খাবারের তালিকায় রয়েছে গাছের পাতা ও শৈবাল।
এখন বসন্ত চলছে ইয়ুননানে। সারসগুলো এখন পাশের প্রদেশ সিছুয়ান এবং উত্তর-পশ্চিম চীনের কিছু অংশে যাত্রা শুরু করেছে প্রজননের উদ্দেশ্যে।
২০২৪ সালে ইয়ুননানে বৃষ্টির পরিমাণ ছিল তুলনামূলক বেশি। এতে প্রদেশের জলাভূমির পানির স্তরও হয়েছে স্থিতিশীল। কুছিং শহরের হুইচি কাউন্টিতে বেড়েছে জলাভূমি এলাকা। টানা বৃষ্টির সুফল পাচ্ছে তৃণভূমি ও বনাঞ্চল। এতে কালো গলার সারসদের আবাসস্থলগুলোও বেশ উন্নত হয়েছে।
স্থানীয় কর্মকর্তারা জানান, এখানে কালো গলা সারসের জন্য বিভিন্ন সংরক্ষণ প্রকল্প বাস্তবায়ন হয়েছে। পাখিগুলো যাতে শীতের সময় এখানে উপভোগ করতে পারে, সেজন্য একটি পরিপূর্ণ প্রাকৃতিক পরিবেশ তৈরি হয়েছে। এখন ধীরে ধীরে বাড়ছে কালো গলার সারস।
গত কয়েক বছরে পরিযায়ী পাখিদের জন্য এখানকার জলাভূমিগুলোর সংরক্ষণ ব্যবস্থা উন্নত করা হয়েছে। স্থাপন করা হয়েছে আধুনিক নজরদারি প্রযুক্তি। এর ফলে কালো গলার সারসের শীতকালীন নিরাপদ জীবন নিশ্চিত করা সম্ভব হয়েছে।
ছাওতোং শহরের ছাওইয়াং জেলায় অবস্থিত ইয়ুননান দাশহানপাও জাতীয় প্রাকৃতিক অভয়ারণ্য কালো গলার সারসের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ শীতকালীন আবাসস্থল এবং বিশ্রাম কেন্দ্র হিসেবে পরিচিত।
ন্যাচার রিজার্ভটি যৌথভাবে ড্রোন টহল পাইলট প্রকল্প পরিচালনা করছে এবং পরিযায়ী পাখিদের ওড়ার পথের নিরাপত্তাও নিশ্চিত করছে।
ইয়ুননান দাশহানপাও ন্যাচার রিজার্ভের গবেষণা ইনস্টিটিউটের পরিচালক ছাও চিচাও জানান, ড্রোনগুলো কালো গলার সারস ও অন্যান্য জলজ পাখি শনাক্ত করে। সংখ্যাও গুনতে পারে। এর ফলে আমাদের কাজ আরও সহজ হয়েছে।
এ ছাড়াও, হুইচিতে অবস্থিত জাতীয় প্রকৃতি সংরক্ষণাগারের ৭০টি ভিডিও নজরদারি সরঞ্জাম ও ৩০টি ইলেকট্রনিক বেড়া উন্নত করা হয়েছে। কালো গলার সারস ও অন্যান্য পরিযায়ী পাখিদের জন্য যা দিচ্ছে বাড়তি নিরাপত্তা।
ফেং আরও জানান, যদি কেউ সুরক্ষিত এলাকায় প্রবেশ করে বা কোনো নিষিদ্ধ স্থানে যায়, তবে এটি তাৎক্ষণিক সতর্ক বার্তা দেবে। রিজার্ভের কর্মীরা এই প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে অনুপ্রবেশকারীদের ওপর নজর রাখতে পারবে এবং ঘটনাস্থল থেকে উপযুক্ত প্রমাণ সংগ্রহ করতে পারবে।
বিপন্ন প্রজাতির সুরক্ষায় আধুনিক প্রযুক্তি ও সংরক্ষণ ব্যবস্থায় দিনে দিনে অনুকরণীয় হয়ে উঠেছে ইয়ুননান। এতে করে প্রদেশটির প্রকৃতি যেমন ডানা মেলছে দূর আকাশে, তেমনি বেড়ে চলেছে পর্যটকের সংখ্যাও।
রেডিওটুডে নিউজ/আনাম