
বংশগত হৃদরোগ হাইপারট্রফিক কার্ডিওমায়োপ্যাথির চিকিৎসায় একটি যুগান্তকারী অগ্রগতি অর্জন করেছেন চীনের একদল গবেষক। তারা হাইপারট্রফিক কার্ডিওমায়োপ্যাথি হৃদরোগের চিকিৎসায় নতুন একটি যন্ত্র আবিষ্কার করেছেন, এই উদ্ভাবনটি বিশ্বজুড়ে লক্ষ লক্ষ মানুষকে দেখাচ্ছে আশার আলো।
পূর্বের গতানুগতিক পদ্ধিতে এই ধরনের হৃদরোগের চিকিৎসা ছিল ঝুঁকিপূর্ণ। কেননা পুরনো ঐ পদ্ধতিটি ওপেন-হার্ট সার্জারির মাধ্যমে পরিচালিত। কিন্তু নতুন এ যন্ত্রের সাহায্যে এখন ছোটখাটো অপারেশনের মাধ্যমেই এ চিকিৎসা সম্ভব। এই ডিভাইসটি ব্যবহারের ফলে রোগীর সুস্থ হতেও সময় কম লাগে এবং পাশাপাশি এটি ঝুঁকি হ্রাস করে।
চীনের ২০ লক্ষ মানুষ হাইপারট্রফিক কার্ডিওমায়োপ্যাথি হৃদরোগে আক্রান্ত, যা হঠাৎ হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ করে মৃত্যুর কারণ হতে পারে। গত ৬০ বছরেরও বেশি সময় ধরে, এই রোগের একমাত্র চিকিৎসা ছিল ওপেন-হার্ট সার্জারির অপারেশন। এই অপারেশনে হৃৎপিণ্ড থেকে অতিরিক্ত মাংসপেশি কেটে বাদ দেওয়া হতো। কিন্তু এটি ছিল খুবই কঠিন এবং ঝুঁকিপূর্ণ একটি পদ্ধতি।
মুশা নামে এক রোগী জানালেন, ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় গত ১০ বছরে তিনি ওপেন-চেস্ট সার্জারি করার সাহস পাননি। তবে সম্প্রতি গবেষকদের এমন যন্ত্র আবিষ্কার করার পর অবশেষে অস্ত্রোপচারে রাজি হন তিনি।
থোংচি হাসপাতালের কার্ডিওথোরাসিক সার্জারির পরিচালক ওয়েই সিয়াং জানান, অপারেশনের সময় সার্জনদের হৃৎস্পন্দন বন্ধ করতে হয় এবং হৃৎপিণ্ডের একটি অংশ কেটে অতিরিক্ত মাংসপেশি সরাতে হয়। এ কারণেই এই পদ্ধতিটি ঝুঁকিপূর্ণ। একটি সাধারণ মেডিকেল ছুরি, যা আগে একটি কঠিন অপারেশনকে সহজ করে তুলেছে। এই উদ্ভাবনটি হাইপারট্রফিক কার্ডিওমায়োপ্যাথিতে আক্রান্ত রোগীদের জন্য একটি নতুন আশা নিয়ে এসেছে।
চিকিসৎকরা হৃৎপিণ্ডে এই ব্লেডটি ঘুরিয়ে সাবধানে টিস্যু অপসারণ করেন। ঘূর্ণায়মান ব্লেডটি অবিশ্বাস্য নির্ভুলতার সাথে সাবধানে টিস্যু অপসারণ করতে সক্ষম। আবার এর জন্য রোগীর হৃদস্পন্দন বন্ধ করার প্রয়োজন নেই। ২০২২ সালে প্রবর্তিত এই যুগান্তকারী সরঞ্জামটি ইতিমধ্যেই ৩০টি প্রদেশে ১,০০০ জনেরও বেশি রোগীকে জীবনে নিয়ে এসেছে নতুন সূযৃ।
এমন যন্ত্র আবিষ্কাার প্রসঙ্গে ওয়েই সিয়াং জানান, আমরা সব ধরণের সরঞ্জাম, এমনকি সূঁচও পরীক্ষা করেছি, কিন্তু কিছুই ঠিকভাবে কাজ করছি ছিল না। একদিন যখন আমি একটি ফলের দোকানের পাশ দিয়ে যাচ্ছিলাম এবং দেখলাম কেউ একজন আনারস ছিলছেন, তখন থেকেই সব শুরু।
ছয় বছরের গবেষণা এবং উদ্ভাবনের পর, ডঃ ওয়েইয়ের দল অবশেষে সেই অনুপ্রেরণাকে বাস্তবে রূপ দেয়। যা আগে যে অস্ত্রপচার সম্পন্ন করতে চার থেকে পাঁচ ঘণ্টা লাগত, এখন তা সহজেই করা হয়। "প্রায় ৩০ থেকে ৪০ মিনিট। যদি পরিস্থিতি কিছুটা সহজ হয়, তবে তারা ১৫ থেকে ২০ মিনিটের মধ্যে শেষ করতে পারেন।
এই উদ্ভাবনটি শুধু চীনের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নেই, বরং এটি বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে দিয়েছেন তারা।
ডঃ ওয়েইয়ের অস্ত্রোপচার পর্যবেক্ষণ করার পর ওয়েস্টার্ন ইউনিভার্সিটির এইচসিএম প্রোগ্রামের সহ-পরিচালক ডঃ মাইকেল ওয়ার্ড জানান, তিনি এটি দেখে মুগ্ধ হয়েছেণ। এটি মার্জিত। এতে রক্তক্ষরণ খুবই কম হয়।
লন্ডন হেলথ সায়েন্সেস সেন্টারের অ্যাডভান্সড হার্ট ফেইলিউর এবং মেকানিক্যাল সার্কুলেটরি সাপোর্টের সার্জিক্যাল ডিরেক্টর ডঃ ডেভ নাগপাল জানালেন, কীভাবে এই ডিভাইসটি কানাডায় আনা যায় তার বোঝার জন্য তাদের কিছু কাজ করতে হবে, এটি অনুসরণ করার মতো পদ্ধতি।"
রেডিওটুডে নিউজ//আনাম