
‘তারুণ্যের অগযাত্রা’ অনুষ্ঠানে স্বাগত জানাচ্ছি আমি রওজায়ে জাবিদা ঐশী। দেশকে সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে নেওয়ার প্রধান হাতিয়ার তারুণ্য। তরুণরা চাইলেই পারে সমাজকে বদলে দিতে। এজন্য দরকার তাদের চিন্তা ও মেধার সমন্বয়। চীন ও বাংলাদেশের তরুণদের অফুরান সম্ভাবনার কথা তুলে ধরবো এই অনুষ্ঠানে। তরুণদের সৃজনশীলতার গল্পগাঁথা নিয়েই সাজানো হয়েছে আমাদের তারুণ্যের অগ্রযাত্রা।
চীনে বর্ধিত বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণে জোর
চীনের দক্ষ কর্মীবাহিনীকে শক্তিশালী করার প্রচেষ্টায়, উদ্ভাবনী ক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য বর্ধিত বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণের কথা জানিয়েছেন জাতীয় গণ কংগ্রেস (এনপিসি)এর ডেপুটি চ্যং ওয়েই। চীনের উৎপাদন খাত এবং উদ্ভাবনের মেরুদণ্ড দক্ষ কর্মীরা; তাই কর্মীদের দক্ষতা ও উদ্ভাবনী ক্ষমতা উন্নত করা চ্যংয়ের প্রাথমিক লক্ষ্য ।
গত এক বছরে, তিনি ৩০টিরও বেশি উৎপাদন প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন করেছেন। শিল্প উন্নয়ন এবং দক্ষতা বৃদ্ধি সম্পর্কে শ্রমিকদের কাছ থেকে তাদের দৃষ্টিভঙ্গি এবং প্রতিক্রিয়া সংগ্রহ করেছেন।
"উদ্ভাবন মূলত প্রতিভার উপর নির্ভর করে এবং প্রতিভাই প্রাথমিক উৎপাদনশীল শক্তি। তবে, প্রতিভা চর্চা এবং উদ্ভাবনী স্টুডিও প্রতিষ্ঠায় উদ্যোগগুলো উল্লেখযোগ্য চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়।’
পূর্ব চীনের চিয়াংসি প্রদেশ পরিদর্শনের একটি অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন চ্যং ওয়েই। উৎপাদন সরঞ্জামগুলো যেহেতু স্মার্ট হয়ে উঠছে, তাই প্রযুক্তিবিদদের কেবল পরিচালনা দক্ষতাই নয়, সরঞ্জাম রক্ষণাবেক্ষণ এবং আপগ্রেডের ক্ষেত্রেও উন্নত দক্ষতা অর্জন করার আহ্বান জানান তিনি।
তবে, এই ক্ষেত্রগুলোতে পর্যাপ্ত দক্ষ কর্মীর ঘাটতি রয়েছে এবং কোম্পানিগুলোর বহুমুখী প্রতিভা বিকাশে টেকসই বিনিয়োগের ক্ষমতা নেই বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
গেল বছর এনপিসির বার্ষিক অধিবেশনে, চ্যং একটি প্রস্তাব পেশ করেন, যেখানে তরুণদের প্রতিভা বিকাশের জন্য আর্থিক সহায়তা বৃদ্ধি, দক্ষতা প্রশিক্ষণ ভর্তুকি এবং উদ্যোগগুলোকে কর প্রণোদনা দেওয়ার আহ্বান জানানো হয়। সেসময় তিনি কর্মচারী প্রশিক্ষণ এবং উদ্ভাবনী স্টুডিওতে বিনিয়োগের আহ্বান জানান।
তার পরামর্শ বেশ কয়েকটি মন্ত্রণালয়ের দৃষ্টি আকর্ষণ হয়। এরই প্রেক্ষিতে কর্মীদের শিক্ষা ব্যয়ের জন্য কর-পূর্ব কর্তনের সীমা মোট মজুরির ২.৫ শতাংশ থেকে ৮ শতাংশে উন্নীত করে, উদ্যোগের উপর বোঝা কমিয়ে দেয় অর্থ মন্ত্রণালয় এবং রাজ্য কর প্রশাসন।
চিয়াংসি বাণিজ্যিক যানবাহন বিভাগের পার্টি কমিটির ডেপুটি সেক্রেটারি লি চিয়াংথাও বলেন,
"কর ছাড়ের সীমা বৃদ্ধি বলতে বুঝায়, প্রতিষ্ঠানগুলো কর্মীদের শিক্ষার উপর তাদের ব্যয়ের একটি বৃহত্তর অংশ কর কর্তন হিসেবে দাবি করতে পারে, যার ফলে আমরা কর্মীদের প্রশিক্ষণের জন্য আরও তহবিল বরাদ্দ করতে পারি। ২০২৪ সালে, আমাদের কোম্পানির কর্মীদের শিক্ষা ও প্রশিক্ষণে বিনিয়োগ ২০২৩ সালের তুলনায় ১৩ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে এবং অত্যন্ত দক্ষ কর্মীদের অনুপাত ৫ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।"
চ্যংয়ের প্রস্তাবটি অল-চায়না ফেডারেশন অফ ট্রেড ইউনিয়ন থেকেও ইতিবাচক সাড়া পেয়েছে, যা প্রাসঙ্গিক ব্যবস্থা উন্নত করা, প্রতিভা বিকাশে সহায়তাকারী নীতিগুলোকে ত্বরান্বিত করা এবং উদ্ভাবনী স্টুডিওগুলোর জন্য তহবিল স্থাপনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।
এই বছরের এনপিসি অধিবেশনে, বিশ্ববিদ্যালয়, শিল্প ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে সমন্বয় গড়ে তুলতে একটি নতুন প্রস্তাব জমা দেয়ার পরিকল্পনা করেছেন চ্যং। তাঁর এই পরিকল্পনার মাধ্যমে জ্ঞান এবং প্রযুক্তিকে দক্ষতার সাথে উৎপাদনে রূপান্তর করা যায় এবং শিল্প আপগ্রেডের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ একটি নতুন কর্মীবাহিনী তৈরি করা সম্ভব।
এআই শিক্ষা: চীনা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর নতুন অধ্যায়
চীনা বিশ্ববিদ্যালয়গুলো এখন কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই শিক্ষার ওপর জোর দিচ্ছে, চালু করছে নতুন এআই অনুষদ এবং সংযোজন করছে আরও বিস্তৃত কোর্স ও পাঠ্যপুস্তক। চাহিদার সঙ্গে তাল মিলিয়ে ভবিষ্যতের এআই বিশেষজ্ঞ তৈরি করাই এসব কলেজের লক্ষ্য।
সিংহুয়ার নতুন উদ্যোগ
চীনের অন্যতম শীর্ষ বিশ্ববিদ্যালয় সিংহুয়া ঘোষণা দিয়েছে, ২০২৪ সালে ১৫০টি নতুন আসন যুক্ত করবে এবং একটি স্বতন্ত্র এআই অনুষদ চালু করবে। বিশ্ববিদ্যালয়টি জানায়, এ উদ্যোগের লক্ষ্য এআই সংশ্লিষ্ট পেশাদার প্রশিক্ষণ জোরদার করা এবং চীনের উচ্চ পর্যায়ের প্রযুক্তিগত স্বনির্ভরতা নিশ্চিত করা।
বিপুল চাহিদা
চীনের ডিজিটাল শিক্ষা গবেষণা ইনস্টিটিউটের উপপরিচালক ওয়াং শুয়েনান জানান, ২০২৩ সালে এআই অধ্যয়নরত শিক্ষার্থী ছিল ৪০ হাজার, যা শিল্পখাতের চাহিদার তুলনায় অপ্রতুল। মার্কিন পরামর্শক প্রতিষ্ঠান ম্যাকিনসি অ্যান্ড কোম্পানি পূর্বাভাস দিয়েছে, ২০৩০ সালের মধ্যে চীনে ৬০ লাখ দক্ষ এআই বিশেষজ্ঞের প্রয়োজন হবে।
বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সম্মিলিত উদ্যোগ
২০২৩ সালের নভেম্বরে বেইজিং ইনস্টিটিউট ফর জেনারেল আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স, পিকিং ইউনিভার্সিটি ও শাংহাই চিয়াও থোং ইউনিভার্সিটিসহ ১৫টি শীর্ষ বিশ্ববিদ্যালয় একসঙ্গে সমন্বিত এআই গবেষণা প্রশিক্ষণ কর্মসূচি চালু করেছে।
এই কর্মসূচির লক্ষ্য স্নাতক পর্যায় থেকে পিএইচডি পর্যন্ত একটি সংযুক্ত প্রশিক্ষণ ব্যবস্থা তৈরি করা, যাতে শিক্ষার্থীরা গবেষণার শুরু থেকেই এআইতে দক্ষ হয়ে উঠতে পারে।
অনলাইন কোর্স ও এআই-সংযুক্ত শিক্ষা
২০২৩ সালের সেপ্টেম্বর মাসে নানখাই ও থিয়েনচিন বিশ্ববিদ্যালয় ম্যাসিভ ওপেন অনলাইন কোর্স (এমওওসি) চালু করে, যেখানে ১ লাখেরও বেশি আন্ডারগ্র্যাজুয়েটের জন্য এআই-সংক্রান্ত প্রাথমিক ও উন্নত বিষয় শিখতে পারছে।
এআই প্লাস এক্স
২০২৪ সালের মার্চ মাসে চ্যচিয়াং বিশ্ববিদ্যালয়, ফুতান বিশ্ববিদ্যালয়, নানচিং বিশ্ববিদ্যালয় ও শাংহাই চিয়াও থোং ইউনিভার্সিটি যৌথভাবে ‘এআই প্লাস এক্স’ মাইক্রো প্রোগ্রাম চালু করেছে।
এই প্রোগ্রাম এআইকে মানবিক বিজ্ঞান, সামাজিক বিজ্ঞান, কৃষি, চিকিৎসা ও প্রকৌশলের মতো বিভিন্ন বিষয়ের সঙ্গে সংযুক্ত করে, যাতে এআই শুধু প্রযুক্তির মধ্যে সীমাবদ্ধ না থেকে বাস্তব জীবনের নানা সামাজিক সমস্যা সমাধানেও ভূমিকা রাখতে পারে।
চীনের উন্নয়নে মুগ্ধ জাপানি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা
জাপানের সোকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা চীনের সমৃদ্ধ ইতিহাস ও অভূতপূর্ব উন্নয়নে মুগ্ধ হয়েছেন, এক সপ্তাহের সফর শেষে এমনটাই জানিয়েছেন তারা।
চীনা জনগণের পররাষ্ট্র মৈত্রী সংস্থার আমন্ত্রণে সোকার ১০০ জন শিক্ষার্থী ও শিক্ষক তিনটি দলে বিভক্ত হয়ে ১ থেকে ৭ মার্চ পর্যন্ত বেইজিং, উহান ও শাংহাই সফর করেন।
'চীনের ঐতিহাসিক স্থাপনাগুলো চমৎকার। পাশাপাশি, আধুনিক নগর পরিকল্পনা ও প্রযুক্তিগত উদ্ভাবনও বৈশ্বিক পর্যায়ে ব্যতিক্রমী,' বলেন সোকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী সাতো রিকো।
সফরকারীরা চীনা পররাষ্ট্র বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি আলোচনায় অংশ নেন এবং চীনা কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিসি) জাদুঘর ও চীনা ঐতিহ্যবাহী সংস্কৃতি জাদুঘর পরিদর্শন করেন।
সাতো জানান, জাপানে এখন খুব কম তরুণের কিমোনো আছে। তবে চীনের ঐতিহ্যবাহী পোশাক তরুণদের মধ্যে জনপ্রিয় এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ে প্রশংসিত। তিনি একদিন ঐতিহ্যবাহী চীনা পোশাক পরার ইচ্ছাও প্রকাশ করেন।
প্রথমবার চীন সফর করা মিনামি হিরোতো বলেন, 'সিপিসি জাদুঘর পরিদর্শনের মাধ্যমে চীনের প্রতিষ্ঠার ইতিহাস বুঝতে পারলাম। চীনের জনগণ যুদ্ধকাল থেকে আধুনিক সময় পর্যন্ত যে ত্যাগ স্বীকার করেছেন, তা অনুপ্রেরণাদায়ক।'
সফর দলের নেতা ও সোকার ছাত্র বিষয়ক কার্যালয়ের পরিচালক ওকুতোমি মাসায়ুকি চীন সফর করেছেন একাধিকবার। তার মতে, 'চীনের যে বিষয়টি অপরিবর্তিত, তা হলো চীনা বন্ধুদের উষ্ণ অভ্যর্থনা। আর যে বিষয়টি বদলেছে, তা হলো চীনের দ্রুত উন্নয়ন।'
সিএফএউ ও সোকার শিক্ষার্থীরা একসঙ্গে জনপ্রিয় চীনা গান 'ফ্রেন্ডস' পরিবেশন করেন। ওকুতোমি বলেন, 'তরুণদের সরাসরি যোগাযোগ বন্ধুত্ব গড়ে তোলে। আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, চীন-জাপান সম্পর্কের ভবিষ্যৎ এই শিক্ষার্থীদের হাতেই নিরাপদ'।