সোমবার,

১৭ মার্চ ২০২৫,

৩ চৈত্র ১৪৩১

সোমবার,

১৭ মার্চ ২০২৫,

৩ চৈত্র ১৪৩১

Radio Today News

চীনে সিঙ্কহোল ক্লাস্টার 

চীনের সিছুয়ান থুজা: বিলুপ্তি থেকে পুনরুদ্ধারের পথে

রেডিওটুডে রিপোর্ট

প্রকাশিত: ২৩:৫১, ১৬ মার্চ ২০২৫

Google News
চীনের সিছুয়ান থুজা: বিলুপ্তি থেকে পুনরুদ্ধারের পথে

নিবিড় সবুজ অরণ্য। পাখির ডানা মেলার শব্দ। নীল আকাশ। দূষণহীন সমুদ্র। আমাদের নীল গ্রহকে আমরা  এমনভাবেই  দেখতে চাই।পরিবেশ ও প্রতিবেশের উন্নয়নের মাধ্যমে নিশ্চিত করা সম্ভব সেই নির্মল প্রকৃতি ও জীববৈচিত্র্য।

সুপ্রিয় শ্রোতা মানুষ ও প্রকৃতি অনুষ্ঠান থেকে স্বাগত জানাচ্ছি আমি হোসনে মোবারক সৌরভ। বিশাল দেশ চীনের রয়েছে সমৃদ্ধ জীববৈচিত্র্য। পরিবেশ, বাস্তুতন্ত্র ও জীববৈচিত্র্য সুরক্ষায় নিরলস প্রচেষ্টার ফলে চীনে জীববৈচিত্র্য যেমন বাড়ছে তেমনি উন্নত হচ্ছে পরিবেশ ও বাস্তুতন্ত্র। আমাদের অনুষ্ঠানে আমরা চীনসহ পুরো বিশ্বের পরিবেশ, জীববৈচিত্র্য, বাস্তুতন্ত্র নিয়ে কথা বলবো।
 
চীনের সিছুয়ান থুজা: বিলুপ্তি থেকে পুনরুদ্ধারের পথে
একসময় বিলুপ্তপ্রায় ঘোষিত সিছুয়ান থুজাকে পুনরায় প্রকৃতিতে ফিরিয়ে এনেছেন চীনের বিজ্ঞানীরা। নানান প্রচেষ্টার পর তারা এর বীজ ও চারা তৈরি করতে এবং সেগুলোকে সফলভাবে প্রকৃতিতে রোপণ করতে সক্ষম হয়েছেন। এই গাছ শুধু চীনের পরিবেশের জন্যই নয়, সারা বিশ্বের জীববৈচিত্র্যের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এর মাধ্যমে চীনের পরিবেশ সুরক্ষায় একটি সফল প্রচেষ্টা বাস্তবায়ন হয়েছে।  
 
দক্ষিণ-পশ্চিম চীনের ছোংছিং মিউনিসিপালটিতে অবস্থিত জাতীয় প্রাকৃতিক সংরক্ষণাগারের সিয়েপাও পর্বতে একটি গবেষক দল অতি বিপন্ন প্রায় সিছুয়ান থুজাকে সফলভাবে পুনরুজ্জীবিত করতে সক্ষম হয়েছেন। চিরসবুজ এই গাছটিকে একসময় বিলুপ্ত বলে মনে করা হতো। পরিবেশ সংরক্ষণবাদীরা এখন এই বিপন্ন প্রজাতির টিকে থাকা এবং এর পরিবেশগত সুবিধাগুলোর সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করার উপায় খুঁজে বের করার চেষ্টা করছেন।
 
একসময় সিয়েপাও পর্বতের গভীরে লুস জঙ্গলে, সিছুয়ান থুজা ৭০০ থেকে ২১০০ মিটার উচ্চতায় পাহাড়ের সাথে লেগে থাকতো। লাখ লাখ বছর আগে, ক্রিটেসিয়াস সময়কালে, এই গাছ প্রকৃতিতে ব্যাপকভাবে ছিল। কিন্তু পরিবেশের পরিবর্তন এবং মানুষের কার্যক্রমের ফলে এটি বিলুপ্তির দ্বারপ্রান্তে চলে যায়। ১৯৯৮ সালে, আন্তর্জাতিক সংরক্ষণবাদীরা এই প্রজাতিটিকে ‘বন্যে বিলুপ্ত’ ঘোষণা করেন। তবে এর এক বছর পরই একজন স্থানীয় উদ্ভিদবিজ্ঞানী এটিকে পুনরায় আবিষ্কার করেন। এরপর থেকে একটি গবেষণা দল এবং একটি নতুন প্রতিষ্ঠিত প্রকৃতি সংরক্ষণাগার এই বিলুপ্ত ঘোষিত প্রজাতি পুনরুদ্ধারের জন্য কাজ শুরু করে।
 
এই প্রাকৃতিক সংরক্ষণাগারের প্রশাসনিক বিষয়ক কেন্দ্রের পরিচালক ইয়াং ছুয়ান বলেন,“প্রথমে আমরা উদ্ভিদ প্রজাতির ঘনত্ব এবং প্রাপ্তিস্থান নিয়ে একটি বিস্তারিত জরিপ করি। আমাদের তালিকায় প্রায় ১০ হাজার উদ্ভিদ বিপন্ন হিসেবে তালিকাভুক্ত রয়েছে। এই প্রজাতির টিকে থাকা নিশ্চিত করতে, বড় আকারের প্রজনন প্রচেষ্টার মাধ্যমে এর ঘনত্ব বাড়াতে এবং প্রাকৃতিক পুনর্জন্মের ক্ষমতা পুনরুদ্ধার করতে সহায়ক হবে এমন প্রচেষ্টা আমরা চালিয়ে যাচ্ছি।”
 
প্রথম দিকে সিচুয়ান থুজার বীজ পাওয়া খুব কঠিন ছিল, বিশেষ করে কৃত্রিম বংশ বিস্তারের জন্য বড় চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হয়েছিল গবেষণা দলকে। ২০১২ সালের অক্টোবরে, এই সংরক্ষণাগারটি বড় পরিসরে বীজ উৎপাদনে যুগান্তকারী সফলতা অর্জন করে। তাদের সংগৃহীত ৪৫০ পাউন্ড বীজ ৪০ হাজার নতুন উদ্ভিদের চাষের সূচনা করে এবং আরও উন্নত বংশবৃদ্ধির নতুন পথ তৈরি করে।
 
এ বিষয়ে ইয়াং বলেন, তার দল মূল বৃদ্ধি এবং চারা চাষের উন্নতির জন্য জৈবিক উদ্দীপনা এবং পুষ্টির সংযোজন পদ্ধতি ব্যবহার করেছে। প্রযুক্তিগত এই অগ্রগতির ফলে কৃত্রিমভাবে সিছুয়ান থুজার বেঁচে থাকার হার উল্লেখযোগ্যভাবে উন্নত হয়েছে। গবেষণা দল ২.৭ মিলিয়ন চারা লাগিয়েছে, যার মধ্যে ৭ লাখ ৫০ হাজারই প্রকৃতিতে টিকে গেছে।
 
উৎসাহব্যঞ্জক বিষয় হচ্ছে, সংরক্ষণের জন্য কিছু নতুন গাছের বীজ উৎপাদন শুরু হয়েছে। এই অগ্রগতির উপর ভিত্তি করে, গবেষণা দলটি এই প্রজাতির পরিবেশগত সুবিধার সর্বোচ্চ পথ অন্বেষণের  পাশাপাশি সংরক্ষণ কৌশলগুলোকে আরও পরিমার্জন করছে।
 
ইয়াং ছুয়ান উল্লেখ করেন, তারা কয়েক বছরের গবেষণা শেষে নিশ্চিত হয়েছেন যে সিছুয়ান থুজার একটি শক্তিশালী পরিবেশগত মূল্য রয়েছে এবং একই সাথে অতিরিক্ত ঠাণ্ডা ও খরায় টিকে থাকার সক্ষমতা রয়েছে। এখন তারা এটিকে পরিবেশগত ভুক্তভোগী অঞ্চলের সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়ার কথা ভাবছেন, বিশেষ করে মরুকরণ এবং ভঙ্গুর প্রতিবেশে বাস্তুসংস্থানগত পুনরুদ্ধারে সাহায্য করার জন্য এটিকে ব্যবহার করার কথা ভাবছেন তারা”
 
ছোংছিং বন বিভাগ এবং গবেষণা কেন্দ্রের সহযোগিতায়, পরীক্ষামূলকভাবে ২৬টি জায়গায় চারাগাছ রোপন কার্যক্রম পরিচালনা করেছে রিজার্ভ সেন্টার। দক্ষিণ-পশ্চিম চীনের ইউননান প্রদেশ, উত্তর চীনের ইনার মঙ্গোলিয়া এবং উত্তর-পশ্চিম চীনের কানসু প্রদেশে প্রাথমিকভাবে ২ হাজারেরও বেশি চারা রোপণ করা হয়। পরবর্তী পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে যার ৭৫ শতাংশ টিকে আছে প্রকৃতিতে। 
 
ছোংছিং বনবিভাগের ডেপুটি ডিরেক্টর ওয়াং শু সিয়াং বলেন, “ফ্লোরা প্রজাতির এই সুরক্ষা পদ্ধতি জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণে একটি অপরিবর্তনীয় ভূমিকা রাখছে। গবেষণা দল এখন কার্বন সিকোয়েস্টেশন মান নিয়ে কাজ করছে, তাদের মূল লক্ষ্য বাণিজ্যিকভাবে এই কার্বনকে বাজারে পরিচয় করিয়ে দেয়া। এটি চীনা বাস্তুসংস্থান পুনরুদ্ধার সক্ষমতা বৃদ্ধিতে সাহায্য করবে।”
 
বছরের পর বছর ধরে সংরক্ষণ প্রচেষ্টার ফলে প্রকৃতিতে আবার ফিরে আসতে শুরু করেছে সিছুয়ান থুজা। বিপন্ন অবস্থা থেকে এটিকে ধীরে ধীরে ফিরিয়ে আনতে কাজ করছে চীন, যা শুধুমাত্র একটি প্রজাতির সুরক্ষার টেকসই মডেলকে তুলে ধরে না, বরং সেই সাথে বৈশ্বিক জীববৈচিত্র্যের ভেতরগত সংরক্ষণও উন্নত হচ্ছে।  
প্রতিবেদন: হোসনে মোবারক সৌরভ 
সম্পাদনা: মাহমুদ হাশিম

চীনে সিঙ্কহোল ক্লাস্টার
 
টেকটোনিক গতিবিধি ও ভূগর্ভস্থ পানির কারণে পৃথিবীর কিছু অঞ্চলে সৃষ্টি হয় বিশাল গর্ত, যা সিংকহোল হিসেবে পরিচিত। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে চীনের কুইচৌ প্রদেশে ২০টিরও বেশি সিংকহোলের সন্ধান মিলেছে যা একটি মনোমুগ্ধকর সিঙ্কহোল ক্লাস্টার তৈরি হয়েছে, চলুন শুনে আসি বিস্তারিত  
 
পৃথিবীর গঠন ও ভূ-প্রাকৃতিক পরিবর্তনের অন্যতম প্রধান কারণের একটিকে বলা হয় টেকটোনিক । ভূমিকম্প, আগ্নেয়গিরি, পর্বত এবং নতুন ভূখণ্ড তৈরির মূল চালিকাশক্তি হিসেবে কাজ করে টেকটোনিক। আর ভূগর্ভস্থ পানির প্রবাহ ও টেকটোনিক পরিবর্তনের ফলে পৃথিবীর কিছু জায়গায় তৈরি হয় বিশাল আকারের গর্ত, এগুলোকে বলা হয় সিংকহোল। সাধারণত যখন বৃষ্টির পানি বা ভূগর্ভস্থ পানি মাটির নিচের চুনাপাথর বা নরম শিলা ধীরে ধীরে ক্ষয় করে তখন সিংকহোল তৈরি হয়। এতে মাটির নিচে ফাঁপা জায়গা তৈরি হয়, যা একসময় ধসে পড়ে বিশাল গর্তের সৃষ্টি করে। একসঙ্গে যখন অনেকগুলো সিংকহোল কাছাকাছি অবস্থান করে তখন তাকে বলে সিংকহোল ক্লাস্টার । 
 
চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে এমন বিস্ময়ের দেখা মিলেছে চীনে। গেল ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ এ ড্রোন থেকে তোলা একটি প্যানোরামিক ছবিতে দেখা যায় সিংকহোল ক্লাস্টারের। দক্ষিণ-পশ্চিম চীনের কুইচৌ প্রদেশের ফিংথাং কাউন্টিতে অবস্থিত প্রাকৃতিক এই সিঙ্কহোল ক্লাস্টার। শত শত মিলিয়ন বছর ধরে টেকটোনিক গতিবিধির ফলেই তৈরি হয়েছে কুইচৌর এই ভূপ্রকৃতি। পিংথাং কাউন্টিতে ২০টিরও বেশি এমন বিশাল আকারের সিঙ্কহোল রয়েছে যা একসাথে মিলে একটি মনোমুগ্ধকর সিঙ্কহোল ক্লাস্টার তৈরি করেছে। এর মধ্যে রয়েছে তাওথাং নামের একটি প্রাকৃতিক খাদ, যেটিকে চীনের ফাইভ-হান্ড্রেড-মিটার অ্যাপারচার স্ফেরিক্যাল রেডিও টেলিস্কোপ (FAST) ধারণ করে, যা বিশ্বের বৃহত্তম একক-ডিশ রেডিও টেলিস্কোপ। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে, এই অনন্য ল্যান্ডস্কেপ এবং FAST প্রকল্পটি বিপুল সংখ্যক পর্যটককে আকৃষ্ট করছে।
 
প্রকৃতির নানা রহস্যময় ঘটনার মধ্যে সিঙ্কহোল অন্যতম। আকস্মিকভাবে ভূমি ধসে গিয়ে সৃষ্টি হওয়া এসব গর্ত কখনো ছোট, আবার কখনো বিশাল আকার ধারণ করতে পারে। সিঙ্কহোল শুধু ভূতাত্ত্বিক বিস্ময় নয়, এটি মানব সমাজের জন্য মারাত্মক ঝুঁকির কারণও হতে পারে। তবে কিছু ক্ষেত্রে সিঙ্কহোলের কিছু উপকারিতাও রয়েছে। যেমন প্রাকৃতিক জলাধার, উদ্ভিদ-প্রাণীদের আবাসস্থল হিসেবেও কাজ করে এটি। তবে ভূতাত্ত্বিক গঠন এবং প্রক্রিয়া সম্পর্কে বিজ্ঞানীদের জানতে সাহায্য করে সিঙ্কহোল।  

সর্বশেষ

সর্বাধিক সবার কাছের