
দেশে ভয়াবহ আকারে বাড়ছে ক্যানসার আক্রান্তের সংখ্যা। এর পেছনে অন্যতম ভূমিকা রাখছে তামাক। ক্যানসার আক্রান্ত রোগীদের প্রায় অর্ধেকেরই কোনো না কোনোভাবে তামাক সেবনের অভিজ্ঞতা রয়েছে। ৪৬ শতাংশের ক্যানসার আক্রান্ত হওয়ার কারণ তামাক সেবন।
অনেকে কেবল ধোঁয়াযুক্ত তামাককে ক্ষতিকর ভেবে ধূমপান ছেড়ে জর্দা খাওয়া শুরু করেন। তবে শুধু ধূমপান নয়, জর্দা-গুল ও সাদাপাতার মতো ধোঁয়াহীন তামাকও একইভাবে প্রাণঘাতী। বিশেষ করে নারীদের ক্ষেত্রে। ক্যানসার আক্রান্ত নারীদের শতকরা ৬০ শতাংশই জর্দা ও গুলের মতো তামাকে আসক্ত।
সম্প্রতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) পরিচালিত এক গবেষণায় এমন ভয়াবহ চিত্র উঠে এসেছে। প্রকাশিত গবেষণায় দেখা গেছে, ক্যানসার আক্রান্ত পুরুষদের মধ্যে ৭৫.৮ শতাংশই ধূমপায়ী। ধোঁয়াহীন তামাকজাত পণ্য যেমন জর্দা, সাদাপাতা, গুল ইত্যাদি সেবনকারী পুরুষের হার ৪০.৫ শতাংশ। নারীদের অবস্থাও উদ্বেগজনক, তাদের ৬০.৬ শতাংশ ধোঁয়াহীন তামাকজাত পণ্য সেবন করেন।
গবেষণাটির প্রধান গবেষক বিএসএমএমইউর পাবলিক হেলথ অ্যান্ড ইনফরমেটিকস বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মো. খালেকুজ্জামান বলেন, ক্যানসার বিশ্বে মৃত্যুর প্রধান কারণগুলোর একটি। বাংলাদেশে জনসংখ্যাভিত্তিক ক্যানসার রেজিস্ট্রি বা নিবন্ধন (পিবিসিআর) না থাকায় প্রতিবেশী দেশগুলোর তথ্য ব্যবহার করে ক্যানসারের পরিস্থিতি অনুমান করতে হয়। এর ফলে বাংলাদেশে ক্যানসারের সঠিক পরিস্থিতি জানার ব্যাপারে সীমাবদ্ধতা আছে। তাই জনসংখ্যাভিত্তিক ক্যানসার রেজিস্ট্রি প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে বা বাংলাদেশিদের মধ্যে একটি জনসংখ্যাভিত্তিক ক্যানসার নিবন্ধন প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে ক্যানসারের পরিস্থিতি নির্ণয় করা জরুরি হয়ে পড়েছিল।
তিনি আরো জানান, ৪৬ শতাংশ রোগীর ক্যানসারের সঙ্গে তামাক সেবনের সম্পর্ক রয়েছে। ক্যানসার আক্রান্ত রোগীদের মধ্যে ৬০ শতাংশ কমবাইন্ড চিকিত্সা নিয়েছে এবং ৭.৪ শতাংশ রোগী কোনো চিকিত্সাই নেয়নি। দেশে মোট মৃত্যুর ১২ শতাংশ ক্যানসারে আক্রান্ত রোগী। মৃত রোগীদের মধ্যে শীর্ষে রয়েছে ফুসফুস, শ্বাসনালি ও পাকস্থলীর ক্যানসার। প্রতি বছর নতুন করে প্রতি লাখে ৫৩ জন রোগী ক্যানসারে আক্রান্ত হয়। আক্রান্ত রোগীদের মধ্যে ফুসফুস, লিভার ও শ্বাসনালির ক্যানসারের রোগীর সংখ্যা বেশি।
বিশিষ্ট ডেন্টিস্ট অধ্যাপক ডা. অরূপ রতন চৌধুরী বলেন, ধোঁয়াবিহীন তামাক যারা ব্যবহার করেন তারা এবং যারা ধূমপান করেন আবার পান-সুপারি-জর্দাও খান, তাদের মধ্যে ক্যানসার বেশি দেখা যাচ্ছে। যারা তামাক, জর্দা ও ধূমপান করেন তাদের মুখে ঘা ২০/৩০ গুণ বেশি হয়। আমরা দেখি রোগীদের মুখের ঘা যদি তিন সপ্তাহের বেশি থাকে, তাদের মধ্যে ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ রোগীর ক্যানসার হয়ে গেছে।
এই বিশেষজ্ঞ আরো বলেন, আমাদের দেশে পুরুষের তুলনায় নারীদের মধ্যে ধোঁয়াহীন তামাকের ব্যবহার বেশি। ফলে তাদের মধ্যে ক্যানসারের প্রবণতাও বেশি দেখা যায়। অনেকে মনে করেন সিগারেট থেকে ক্যানসার হয়, জর্দা থেকে হয় না। সে কারণে তারা সিগারেট বন্ধ করে জর্দা খাওয়া শুরু করেন। তাদের জন্য ম্যাসেজ হলো, তামাক ধোঁয়াবিহীন বা ধোঁয়াযুক্ত কোনোটাই স্বাস্থ্যের জন্যে ভালো নয়।
রেডিওটুডে নিউজ/আনাম