বৃহস্পতিবার,

২৩ জানুয়ারি ২০২৫,

১০ মাঘ ১৪৩১

বৃহস্পতিবার,

২৩ জানুয়ারি ২০২৫,

১০ মাঘ ১৪৩১

Radio Today News

মেয়েদের আয়রন ঘাটতি: লক্ষণ, কারণ ও প্রতিকার

ডেস্ক রিপোর্ট

প্রকাশিত: ১০:০৯, ২৩ জানুয়ারি ২০২৫

Google News
মেয়েদের আয়রন ঘাটতি: লক্ষণ, কারণ ও প্রতিকার

বিশ বছর বয়সী রাফিজা প্রায়ই মাথা হালকা অনুভব করেন এবং মাঝে মাঝে মাথাব্যথা হয়। তিনি মনে করতেন, হয়তো ঘুমের অভাবেই এমন হচ্ছে। কিন্তু সময়ের সাথে সমস্যা আরও বাড়তে থাকে। একদিন অসহ্য হয়ে মাকে জানান তিনি। প্রথমে মায়ের মনোযোগ না পেলেও, পরদিন রাফিজাকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যান। ডাক্তার লক্ষণ দেখে সন্দেহ করেন যে, রাফিজা আয়রন ঘাটতিতে ভুগছেন। কিছু পরীক্ষা করার পর তা নিশ্চিত হয় এবং তিনি ওষুধ দেন।

পঁচিশ বছর বয়সী আয়েশা একই ধরনের সমস্যার সম্মুখীন। তার শরীরে ক্লান্তি, মাথা ঘোরা ও চেহারায় ফ্যাকাশে ভাব থাকত। তিনি একটি হোস্টেলে থাকেন এবং সারাদিনের পর ক্লান্ত হয়ে পুষ্টিকর খাবার রান্না করার মতো শক্তি পান না। যা পান, তা খেয়ে শুয়ে পড়েন। এর ফলে তার শরীরের অবস্থা অবনতি হতে থাকে। একদিন তার রুমমেট তাকে জোর করে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যান। ডাক্তার জানান, আয়েশাও আয়রন ঘাটতিতে ভুগছেন।

আয়রনের গুরুত্ব: শরীরে ভূমিকা ও প্রভাব

আয়রন শরীরের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি খনিজ। এটি লোহিত রক্তকণিকাকে শরীরের বিভিন্ন অংশে অক্সিজেন বহনে সাহায্য করে, তাছাড়া রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি, ত্বক, চুল ও নখের স্বাস্থ্য রক্ষা এবং শেখার ক্ষমতা উন্নত করতেও ভূমিকা রাখে। আয়রনের অভাবে মস্তিষ্কে ঝিমঝিম অনুভূতি, ক্লান্তি, মাথাব্যথা, শ্বাসকষ্ট ও  ত্বকে ফ্যাকাশে ভাব দেখা দিতে পারে।

বিশ্বজুড়ে নারীদের আয়রন ঘাটতির সমস্যা

বিশ্বজুড়ে প্রায় ৪০ শতাংশ নারী আয়রন ঘাটতির শিকার। অ্যান আর বার এর মিশিগান মেডিকেল স্কুলের এক গবেষণায় ১২ থেকে ২১ বছর বয়সী প্রায় সাড়ে তিন হাজার নারীর আয়রনের স্তর পরীক্ষা করা হয়, যেখানে প্রায় ৪০ শতাংশ অংশগ্রহণকারীর শরীরে আয়রনের ঘাটতি পাওয়া যায়। তবে অনেকেই জানেন না যে, তারা এই সমস্যায় ভুগছেন। আয়রন ঘাটতির লক্ষণ দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত এবং সাধারণ রক্ত পরীক্ষার মাধ্যমে এটি সহজেই নির্ণয় করা যায়।

বাংলাদেশে আয়রন ঘাটতি ও অ্যানিমিয়া

বাংলাদেশে নারী ও শিশুর মধ্যে আয়রনের ঘাটতির হার বিশেষভাবে বেশি। স্বাস্থ্য গবেষণাগুলোর মতে, গ্রামাঞ্চল ও দরিদ্র জনগণের মধ্যে আয়রন ঘাটতির প্রবণতা বেশি। বিশেষভাবে গর্ভবতী নারীদের মধ্যে অ্যানিমিয়ার সমস্যা মারাত্মক, যা তাদের ও নবজাতকের জন্য বিপজ্জনক হতে পারে। বাংলাদেশে ৫০ শতাংশেরও বেশি গর্ভবতী নারী আয়রন ঘাটতির শিকার, যা তাদের গর্ভজাত শিশুদের শারীরিক ও মানসিক বিকাশে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে।

আয়রন ঘাটতির প্রভাব ও খাদ্যতালিকার গুরুত্ব

ঢাকা মেডিকেলের ডা. সাইদুর রহমান সোহাগ বলেন, যেসব শিশুরা পর্যাপ্ত আয়রনসমৃদ্ধ খাবার গ্রহণ করে না, তাদের রক্তস্বল্পতার ঝুঁকি বেশি থাকে। দীর্ঘদিন আয়রনের ঘাটতিতে ভুগলে অ্যানিমিয়া এবং হৃদযন্ত্র ও ফুসফুসের জটিল রোগের ঝুঁকি বাড়ে। গর্ভাবস্থায় আয়রনের অভাবে মায়ের শরীরে জটিলতা দেখা দিতে পারে এবং নবজাতকের শারীরিক বৃদ্ধি বাধাগ্রস্ত হতে পারে। তিনি পরামর্শ দেন, নারীদের খাদ্যতালিকায় আয়রনসমৃদ্ধ খাবার রাখতে হবে। যেমন—শাকসবজি, গমের রুটি, মাংস, কলিজা, শুকনো ফল (কিশমিশ, প্রুন), মটরশুটি ও ডাল। পাশাপাশি ভিটামিন সি-সমৃদ্ধ খাবার যেমন লেবু, কমলা ও টমেটো খেলে আয়রনের শোষণ ক্ষমতা বাড়ে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রতিবেদন

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জানিয়েছে, দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশে আয়রন ঘাটতির সমস্যা গুরুতর। এক গবেষণায় দেখা গেছে, বাংলাদেশে ৫০ শতাংশেরও বেশি গর্ভবতী নারী আয়রন ঘাটতির শিকার। এছাড়া শিশুদেরও আয়রনের ঘাটতি প্রবল, যা তাদের শারীরিক ও মানসিক বিকাশে মারাত্মক প্রভাব ফেলতে পারে।

আয়রনের ঘাটতির মানসিক প্রভাব

আয়রন ঘাটতির কারণে মানসিক স্বাস্থ্যেরও ক্ষতি হতে পারে। ডিপ্রেশন, উদ্বেগ ও একাগ্রতার অভাবের মতো সমস্যা দেখা দিতে পারে। এছাড়া খাবারের সঙ্গে চা বা কফি পান করলে শরীরে আয়রনের শোষণ ক্ষমতা কমে যায়। তাই খাবারের অন্তত এক ঘণ্টা আগে বা পরে চা-কফি পান করা উচিত।

স্বাস্থ্য সচেতনতা ও প্রতিরোধের উপায়

বাংলাদেশ সরকার আয়রন সাপ্লিমেন্ট বিতরণ এবং সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। যেমন, গর্ভবতী নারীদের আয়রন সাপ্লিমেন্ট প্রদান এবং পুষ্টি সচেতনতামূলক ক্যাম্পেইন পরিচালনা।

বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, স্কুল, কলেজ ও কর্মস্থলে স্বাস্থ্য সচেতনতা কর্মসূচি আয়োজনের মাধ্যমে আয়রনের ঘাটতি রোধ করা সম্ভব। নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা এবং ডাক্তারের পরামর্শমতো আয়রন সাপ্লিমেন্ট গ্রহণের মাধ্যমে এই সমস্যা দূর করা যেতে পারে।

রেডিওটুডে নিউজ/আনাম

সর্বশেষ

সর্বাধিক সবার কাছের