সম্প্রতি সানজিদা আক্তার নামের এক রোগীর মৃত্যু এবং এইচএমপিভি ভাইরাসের বিস্তার, রোধ ও করণীয় নিয়ে কথা বলার জন্য আজকের এই সংবাদ সম্মেলন। সানজিদা আক্তার নামের ভদ্রমহিলা এক মাসের অধিক সময় ধরে অসুস্থ ছিলেন। তিনি বাসার আশপাশেই চিকিৎসা নেন। পরবর্তীতে অবস্থার অবনতি হলে হাসপাতালে ভর্তি হন। এখন পর্যন্ত বৈজ্ঞানিক গবেষণা অনুসারে বলা যায়, এইচএমপিভি ভাইরাসের কারণে মৃত্যুর ঘটনা খুবই বিরল বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের বিশেষ সহকারী অধ্যাপক ডা. মো. সায়েদুর রহমান।
এ চিকিৎসক বলেন, সানজিদা ক্লেবসিয়েলা নিউমোনিয়াতে আক্রান্ত হন এবং পরবর্তীতে তার মাল্টি অর্গান ফেইলিউর হয়। এছাড়া উনার অবিসিটি (obesity), থাইরয়েড ডিসফাংশন ছিল। তার মৃত্যুতে আমরা মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে দুঃখ প্রকাশ করছি। চিকিৎসার এক পর্যায়ে নিউমোনিয়া এবং মাল্টি অর্গান ফেইলার কারণে রোগীর মৃত্যুবরণ হয়। সেই সঙ্গে রোগী দুর্ভাগ্যজনকভাবে এইচএমপি ভাইরাসেও আক্রান্ত ছিলেন।
বৃহস্পতিবার (১৭ জানুয়ারি) দুপুরে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব বলেন ডা. মো. সায়েদুর রহমান। এ সময় তিনি বলেন, আজ মূলত সারাদেশের মানুষকে আমি এ কথাটাই বলতে চাই যে, এ ভাইরাসে সাধারণত মৃত্যু ঘটে না। ভাইরাসের কারণে মানুষের মৃত্যু ঘটছে না। আশপাশের দেশে এই ভাইরাসের বিস্তার ঘটছে। এই বিষয়ে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা-সহ আন্তর্জাতিক এজেন্সিগুলোর স্বাস্থ্যবিষয়ক কিছু গাইডলাইন আছে।
তিনি বলেন, এখন এই সময়ে যদি কেউ ফ্লুতে আক্রান্ত হন, তিনি যাতে জনসম্মুখে না আসেন এবং জনসম্মুখে মাস্ক পরিধান করেন। কেউ যদি অসুস্থ বোধ করেন তখন তিনি যাতে ঘরে থাকেন। এগুলো অন্যান্য দেশেও প্রচলিত আছে এবং এসব পরামর্শকে রেস্পেটরি এটিকেট বলা হয়। আমি শুধু স্মরণ করিয়ে দিতে চাই, আপনারা অসুস্থ বোধ করলে ঘরে থাকবেন এবং অনেক মানুষের ভেতর গেলে মাস্ক পড়বেন।
বিশেষ সহকারী অধ্যাপক ডা. মো. সায়েদুর রহমান সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে বলেন, সাধারণত সিজনাল ফ্লু যেগুলা হয়, এ ভাইরাসের লক্ষণ ঠিক তেমন। যেমন সর্দি, কাশি, শরীর ব্যথা, নাক দিয়ে পানি পড়া ইত্যাদি। সাধারণ ফ্লুয়ের সঙ্গে এর কোনো পার্থক্য নেই। এইচএমপিভি ভাইরাস নিয়ে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাসহ হেলথ এজেন্সিগুলো থেকে পরামর্শ দেয়া হয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পুরনো গাইডলাইন আছে, সেখানেও কিছু কথা বলা হয়েছে। কিন্তু সেগুলোকে কোনোভাবে সতর্কতা বলা যাবে না। এই ভাইরাস অনেক আগে থেকেই আছে এবং সেটা প্রাণঘাতী না। আরেকটা জিনিস গুরুত্বপূর্ণ, সেটা হচ্ছে ঘন ঘন হাত ধোয়া। অসুস্থ হলে হাত ধোয়া এবং জনসম্মুখে মাস্ক পরা যদি নিশ্চিত করা যায়, তাহলে এই ভাইরাসের বিস্তার রোধ করা যাবে।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি আরও বলেন, আপনারা জানেন কোনো ভাইরাসের যখন বিস্তার হতে থাকে, তখন সেটার প্রতিনিয়ত মিউটেশন বা পরিবর্তন হতে থাকে। কোভিড ভাইরাসও অনেক পুরনো ভাইরাস ছিল। মিউটেশনের কারণে ভাইরাসের সময় এটা ক্ষতিকর বা প্রাণঘাতী হয়ে যেতে পারে। আমাদের চেষ্টা করতে হবে যত সম্ভব এটার বিস্তার যাতে রোধ করা যায়। এই ভাইরাসে পাঁচ বছরের নিচের শিশু এবং ৬৫ বছরের ঊর্ধ্বের বয়স্কদের জন্য বা এবং ইমিউনিটি যাদের কম্প্রোমাইজড এবং অন্যান্য রোগ রয়েছে, বিশেষত অ্যাজমা; তাদের জন্য বাড়তি ঝুঁকি আছে।
ডা. মো. সায়েদুর রহমান বলেন, এটা একটি রেস্পেটরি ভাইরাস, তাই এতে আক্রান্ত হলে অক্সিজেনের দরকার হতে পারে। আমাদের সেই প্রস্তুতি আছে। কিন্তু আমরা মনে করি না আমাদের সেগুলো দরকার হবে। যদি দরকার হয় তাহলে আমাদের কোভিডকালীন যে প্রস্তুতি ছিল, সেটা আমরা পুনরায় পুনরুজ্জীবিত করব। আমরা মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে সবাই কোনো প্রকার সতর্কতা দিচ্ছি না। কিন্তু সবাইকে পরামর্শ দিচ্ছি, স্বাস্থ্য পরামর্শগুলো মেনে চলুন। হাত ধোয়া, অসুস্থ থাকলে জনসম্মুখে কম আসা এবং ঘরে থাকা।
তিনি আরও বলেন, চিকিৎসকরা যখন চিকিৎসা করবেন তখন তারা যেন বিষয়টা মাথায় রাখেন। আবারও বলছি, ভাইরাসের মিউটেশন হওয়ার সম্ভাবনা থাকে এবং সেজন্য এটার বিস্তার রোধ করা জরুরি। অতএব আমাদের সবার সম্মিলিত চেষ্টা থাকতে হবে এটা যাতে কম ছড়ায়। যত কম ছড়াবে ততই এটার বিস্তার রোধ করা সহজ হবে। আর দূরত্ব বজায় রাখার ব্যাপারে বলেন, আমরা এখনো দূরত্ব বা ডিসটেন্স বজায় রাখার কোনো পরামর্শ দিচ্ছি না। তবে কেউ যদি ফ্লুতে আক্রান্ত হন, তিনি যেন সাধারণ মানুষের সংস্পর্শে কম আসেন। অসুস্থ হলে তিনি যেন ঘরে থাকেন।
প্রসঙ্গত, এদিন সংবাদ সম্মেলনে স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের সচিব মো. সাইদুর রহমান, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. মো. আবু জাফর, আইসিডিআর’র পরিচালক অধ্যাপক ডা. তাহমিনা শিরিন উপস্থিত ছিলেন।
রেডিওটুডে নিউজ/আনাম